সান নারায়ণগঞ্জ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে যারা ওয়াদা করেছিলেন মনোনয়ন যাকেই দেয়া হোক ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি সেইসব নেতারা তাদের দেয়া ওয়াদা ভুলে গিয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন, যার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে বিগত দুইটি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি আওয়ামীঘরণার একজন শিল্পপতি, যার ভাই এক সময় বিএনপির এমপি মন্ত্রী ছিলেন। সেই শিল্পপতি মান্নানকে ঠেকাতে অঢেল অর্থ ব্যয় করছেন মিডিয়া ট্রায়াল সৃষ্টির জন্য এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে কাজ করছেন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা প্রপাগাণ্ডা অপপ্রচার ও নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন মান্নান।
এর আগে মনোনিত হওয়ার পরপরই আজহারুল ইসলাম মান্নান ছুটে যান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের বাসায় ও তার স্কুলে। সেখানে মান্নানের সঙ্গে দেখা দেননি গিয়াস। এর দুইদিন পর আবারো গিয়াসের বাড়িতে গিয়ে গিয়াসের সঙ্গে সাক্ষাত করে তার সহযোগীতা চান মান্নান। ওই সময় একে অপরকে খেজুর খাইয়ে দিয়ে মিষ্টিমুখ করান তারা। এ ছাড়াও মান্নান অপর মনোনয়ন প্রত্যাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহামুদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং সহযোগীতা চান। ছুটে যান রাজধানীতে। সেখানে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের বাসভবনে গিয়ে দোয়া ও সহযোগীতা প্রার্থনা করেন মান্নান।
কিন্তু এত্তকিছুর পরেও আজহারুল ইসলাম মান্নান মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের মন নরম করতে পারেননি। উল্টো মনোনয়ন প্রত্যাশিরা ৭ জন নেতা একজোট হয়ে মান্নানের মনোনয়ন বাতিল চেয়ে দলটির মহাসচিবের মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছে আবেদন করেছেন। এরি সাথে ৭ জনের গোপন বৈঠকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ছবি তারা নিজেরাই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এর আগের দিন ১৮ নভেম্বর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ৭ জন নেতার অনুগামীরা মানববন্ধন করেছেন। তবে এতে বিচলিত হননি বিএনপির নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে নেতাকর্মীরা মান্নান সম্পর্কে বলছেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেই ১/১১ এর ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দীনের আমলেও বিএনপির ঝাণ্ডা ধরেছিলেন তিনি। জেল জুলুম হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন বিএনপির এই ত্যাগী নেতা। ২০১৪ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও চেয়ারে বসতে পারেননি এক বছরও। পুলিশের সাজানো মামলার আসামী চার্জসিটে অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত থেকেছেন প্রায় ৪ বছরেরও বেশি সময়। তবুও সরকারি দল আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয় পার্টির এমপির সঙ্গে আতাত করে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে থাকার চেষ্টাও করেননি।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার আরো দুটি উপজেলা পরিষদের বিএনপির দুই চেয়ারম্যান সরকারি দলের সঙ্গে মিশে চেয়ারম্যানশীপ উপভোগ করলেও মান্নানের কাছে চেয়ারম্যানির চেয়ারের চেয়েও বড় ছিল দল ও দেশ। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সেই চেয়ারকে তুচ্ছ ভেবে দলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখে রাজপথে থেকেছেন তিনি। রাজপথে সক্রিয় থাকায় নিজে ও নিজের সন্তানদেরও জেল খাটতে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে মান্নানের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলেকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। অথচ সাকিব রাজনীতিতে ছিলো না। আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপির বিগত সময়ের তথাকথিত শীর্ষ নেতা পরিচয়দারী বর্তমানে মনোনয়ন বঞ্চিত দাবিদার ব্যক্তিরা নিজেদের গুটিয়ে নিলেও মান্নান ছিলেন অগ্রভাগে রাজপথে।
মনোনিত হওয়ার পর সেই মান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বেধেছে হটাত বিএনপি হওয়া নেতা হিসেবে নতুন করে উদয় হওয়া ব্যক্তিরাও। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে বিএনপি নেতা সাজা ব্যক্তিরা এখন মান্নানের বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ স্থানীয় মিডিয়াতে মান্নানের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর এহেন চেষ্টা করছেন পক্ষটি।
এদিকে নেতাকর্মীরা আরো বলছেন, ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে শুরু করে কোনো আন্দোলনেই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম। উল্টো বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান যখন জেলে ছিলেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এই রেজাউল করিম। মিডিয়াতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেন রেজাউল করিম। যদিও রহস্যজনক কারনে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রেজাউল করিমকেই দল মনোনয়ন দেয় নির্বাচিত হওয়ার আশায়। কিন্তু দিগুণ ভোটে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের কাছে পরাজিত হোন। এরপর রেজাউল করিমের ছায়াও রাজনীতিতে দেখা যায়নি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের মাস কয়েক পূর্বে আবারো রাজনীতিতে উকি দেন তিনি নির্বাচনে মনোনয়নের আশায়। নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় আবারো ইঁদুরের মত গর্তে ডুকে যান রেজাউল করিম। ওই নির্বাচনের পূর্বের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ছিল। নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম মুকুল মিলিত হয়ে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের মাঠে নামেন। সোনারগাঁয়ে বেশকটি মহড়া ও শোডাউন দিয়ে গিয়াস জানানি দেন তিনি সোনারগাঁয়ের নির্বাচনে আসছেন। কিন্তু আসন এলাকা ভাগ হয়ে গেলে গিয়াস সোনারগাঁও থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। সেই সময় একইভাবে রেজাউল করিমও নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি দাবি করেন। নির্বাচনে বিএনপি না আসায় নির্বাচনের পর রেজাউল গিয়াস নামক তাদের দুজনের কাউকেই সোনারগাঁয়ে খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে নীরব রাজনীতিতে নিজেকে নিরাপদে রাখেন খন্দকার আবু জাফরও। আজকে হয়ে ওঠছেন তিনি নাটের গুরুদের মধ্যে অন্যতম তিনি একজন।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ে বিএনপির হাল ধরার মত নেতা কেউ ছিল না, একমাত্র মান্নান ছাড়া। নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের কোনো খোঁজ খবরও রাখেননি কেউ। নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, জেলখানায় খবর নেয়া, জেলখানার খরচ ব্যয় বহন, এমনকি জেলবন্ধি বা আহত নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবরও রেখেছেন মান্নান। এভাবে সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেন মান্নান। শুধু নেতাকর্মীদের পাশেই থেকেছেন তা নয়, নগরীর ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি সিটি করপোরেশন থেকে নেয়ার পেছনে মান্নানের বিপুল পরিমান অর্থের অনুদান রয়েছে। যে ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবন করেছে সিটি করপোরেশন।
এসবের মাঝে মান্নান ও তার সন্তানদের জেল খাটতে হয়েছে গ্রেপ্তার হয়ে। আন্দোলন সফল করতে বছরের পর বছর ছিলেন আত্মগোপনে। তার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তান সাকিবকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ছাড়াও মান্নান ও তার আরেক পুত্র জেলা ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবও জেল খেটেছেন। পৃথকভাবে ছাড়াও পিতা-পুত্র একসাথে জেল খেটেছেন। মান্নান ও সজীব পিতা পুত্র মিলে ৬০টির বেশি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়েছেন। এক হ্যান্ডকাপে পিতা পুত্রকে কোর্ট থেকে কারাগারে আসা যাওয়া করিয়েছিল পুলিশ।
২০২৩ সালের মে মাসের ১৫ তারিখেও মান্নান কারাগারে যান। তিনি সহ ১৬ নেতাকর্মীকে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে কারাগারে নেয়ার সময় সেদিন তার অশ্রুসিক্ত চোখে যেনো বুকফাটা আর্তনাদ ভেসে ওঠেছিল। পরে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবরেও জেলে গিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়াও আরো বেশকবার গ্রেপ্তার হোন এবং কারাগারে যান। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ নগরীর ২নং রেলগেটের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গেলে পুলিশের বেদম লাঠিপেটার শিকার হোন মান্নান।
মোট কথা গত সাড়ে ১৫ বছরে মান্নান কয়েক দফায় প্রায় বছর খানিকেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বিগত সাড়ে ১৫ বছর শরীরে হাওয়া লাগিয়ে বেরিয়েছেন। তাদের জেল খাটতেও হয়নি। কালেভদ্রে দু’একটি মামলা থানায় হলেও পুলিশ তাদেরকে কোনো দিন গ্রেপ্তার করেনি। ম্যানেজে মামলার চার্জসিট থেকেই বাদ পড়েছেন তারা। আরামে আয়েশে তারা যখন বাড়িতে ঘুরে বেরিয়েছেন তখন মান্নান ও তার নেতাকর্মীরা আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে গ্রেপ্তার এড়াতে রাতবিরাতে বনবাদারে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু এখন আওয়ামীঘেষারা সবচে বড় নেতা বনে গেছেন। তারা এখন অসুস্থ রেজাউল করিমের কাধে ভর করে ত্যাগী নির্যাতিত মান্নানকে ঠেকানোর দিবা স্বপ্ন দেখছেন। সেই রেজাউল করিমকে সামনে রেখে অপরাজনীতির মাধ্যমে অপকৌশলে কুটকৌশলে মান্নানকে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন একটি চক্র। এতেও যখন কাজ হবে না, তখন মান্নানের বিরুদ্ধে মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে অপ্রপচারে লিপ্ত হয়েছে ওই চক্রটি। এই মান্নান গত সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের আগলে রেখে অভিভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন।


