বিএনপি জামাতের নীল নকশায় বানচাল হতে পারে বন্দর উপজেলা নির্বাচন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে আগামী ১৮ জন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যাদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান। আর সুফিয়ান এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলেই সীমানা সংক্রান্ত্র জটিলতা দেখিয়ে হাইকোর্টের রীটের মাধ্যমে নির্বাচনকে স্থগিতের পরিকল্পনা করেছে উপজেলা পরিষদের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি জামাতের জনপ্রতিনিধিরা। তবে যদিও রীটেও নির্বাচন বানচাল করা না যায় সেক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এই নির্বাচনে মুল টার্গেট থাকবে সুফিয়ানকে ঠেকানো।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ইশারায় বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ঠেকাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। এখানে আবারো দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহামুদা আক্তারও। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের মতই মামলার জটিলতায় আটকানোর পরিকল্পনা করে নির্বাচন ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তারা তিনজনই বিএনপি ও জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

বিশ^স্তু সূত্রে জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে। বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টাও চলছে। কারন যদি রীট পিটিশিন খারিজ হয়ে যায় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুকুল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তার জন্য অপেক্ষা নৌকা প্রতীকটি কার হাতে তুলে দেয়া হয়। সুফিয়ান নৌকা প্রতীক পেলেই আদালতের দ্বারস্থ হবেন মুকুলের বিশ^স্থ এক কর্মী যিনি রীট পিটিশনটি দায়ের করবেন। আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন, এটা বিএনপি জামাতের নীল নকশা।

রীটে জটিলতা দেখানো হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের এনায়েতনগর এলাকা নিয়ে। ওই এনায়েতনগর এলাকার কিছু অংশ ভোটার রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের সীমানার ভিতরে। আবার সিটি কর্পোরেশনের কিছু ভোটার রয়েছে এনায়েতনগর এলাকায়। ফলে সীমানা সংক্রান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের আদেশ চেয়ে রিটের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একইভাবে এটি খারিজ বা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে গেলে বন্দর ইউনিয়নের কিছু অংশের এলাকা কেন সিটি কর্পোরেশনে অন্তভূক্ত করা হবেনা তা জানতে চেয়েও আদালতে রিট করা হবে। মোট কথা বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঠেকাতে হবে। এসব রিট করার জন্য ইতিমধ্যে বাদীও ম্যানেজ করেছেন মুকুল। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে বলেও বিশ^স্ত সূত্রে জানাগেছে।

এর কারন হিসেবে জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানের। যদিও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে সুফিয়ান ছাড়াও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশিদ মিয়া ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সালামের নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রার্থীদের চেয়ে শক্তিশালী লবিং সুফিয়ানের হাতেই ওঠবে নৌকা প্রতীক সেটা অনুমেয়। সুফিয়ান মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ কর্মী। আর উপজেলা পরিষদেই থাকে সকল ধরণের উন্নয়নমুলক কাজ। তখন উপজেলা পরিষদের তদারিকেও ছায়া পড়বে মেয়র আইভীর। এতে কারো কারো সমস্যা হলেও হতে পারে। কিন্তু মুুকুল এখানে দায়িত্বে থাকলে মেয়র আইভী ও সুফিয়ানের কর্তৃত্ব থাকবেনা। এতে একটি পক্ষের জন্য সুবিধা।

এদিকে আরও জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদে টানা দুইবার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আতাউর রহমান মুকুল। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আতাউর রহমান মুকুল স্থানীয় এমপির সঙ্গে সখ্যতা রেখেই উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির নেতা হলেও তিনি অনেকটা সরকারি দলের নেতার ভুমিকায় ছিলেন বেশ জোড়ালো। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম গত ৫ বছরের বেশির ভাগ সময় ছিলে কারাগারে। আবার ছিলেন মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপনে।

এমন পরিস্থিতিতে একক নিয়ন্ত্রন ছিল মুকুলের হাতেই। তবে ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পড়বে এমন সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই রাজপথে নেমেছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। পরবর্তীতে তিনি আন্দোলন করতে গিয়ে মামলায় আসামীও হন। ওই নির্বাচনের পর তিনি আবারো বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে সরকারি দলের পক্ষে কাজ করেন। গত জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমান মুকুল এ আসনের বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে সরাসরি নির্বাচনে কাজ করেন। সেলিম ওসমানের বেশকটি নির্বাচনী জনসভায় গিয়েছিলেন মাহমুদা আক্তারও। তবে দুরেই ছিলেন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।

গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ২০ দলীয় জোটের সমর্থন পান বর্তমান মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি নূরউদ্দীন আহমেদ। যেদিন নূরউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছিলেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা ওইদিন সন্ধায়ই আতাউর রহমান মুকুলকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমান সমর্থনের ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয় বরং আতাউর রহমান মুকুলকে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি উল্লেখ্য করে নূরউদ্দীন আহমেদকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়। অথচ মুকুল ছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি। বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতেও ছিলেন না। ওই নির্বাচনে মুকুল নির্বাচিত হন। একইভাবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মাহমুদা আক্তার। অপর ভাইস চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।