প্যারালাইজড রোগীও আদালতের কাঠগড়ায়, উল্লাসে দল ছাড়লো তারা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

রিয়াজুল ইসলাম। তিনি গত ৪ মাস যাবত প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত। করেন বিএনপির রাজনীতি। সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদেও রয়েছেন তিনি। রাজপথের একজন সক্রিয় এই নেতার এক পা ও এক হাত অবস হয়ে গেছে। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না তিনি। কারন মুখেও হয়েছে সমস্যা। দীর্ঘ চার মাস যাবত তাকে নিয়মিত নিয়ে যাওয়া হয় ফিজিওথেরাপী সেন্টারে। চিকিৎসা শেষে আবার ডজন মামলার আসামি হওয়ায় নিয়মিত আদালতের কাঠগড়ায় এসে হাজিরাও দিতে হয় তাকে। ওয়ারেন্ট জারি হতে পারে এমন আংশকা থাকলেও প্যারালাইজড রোগী রিয়াজুল ইসলামও আদালতের কাঠগড়ায় এসে হাজিরা দেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ২ মে বৃহস্পতিবার দুটি মামলায় তিনি জামিন নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। কিন্তু তবুও বিএনপির রাজনীতি ছাড়তে নারাজ এই রিয়াজুল ইসলাম। কিন্তু তার নিজ এলাকা সেই সোনারগাঁয়ের বিএনপির বেশকজন নেতা দল পল্টি দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন। কিন্তু রিয়াজুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলামের মত নেতাকর্মীরা এখনও রয়েছে বিএনপির রাজনীতিতে। এর আগে প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপজেলা যুবদলের সেক্রেটারি আব্দুর রউফ নাশকতার মামলায় আসামি হলে হাসপাতাল থেকে ছুটে আসেন জামিন নিতে। তবুও তিনিও দল ছাড়েননি। কিন্তু দল ছেড়েছেন সংস্কারপন্থী রেজাউল করিমের লোকজন। এক রিয়াজুুল ইসলামদের মত ত্যাগীরা ত্যাগ স্বীকার করে কিন্তু দল ছাড়েনা। আর সুবিধাবাদীরা সুবিধা নেয়, আবার পল্টিও দেয়। আর এই রিয়াজুল ইসলাম রাজনীতি করেন আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গে।

এদিকে জানাগেছে, নিজের শারীরিক অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি এমএ জামান পদত্যাগ করেছিলেন। সেই পদত্যাগের পর অবশেষে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন এমএ জামান সহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা। বিএনপির এসব নেতাকর্মীরা বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সংস্কারপন্থী নেতা রেজাউল করিমের বলয়ের রাজনীতি করতেন। গত ১২ মার্চ এসব নেতাকর্মীদের জাতীয়পার্টিতে যোগদানের প্রস্তুতি ছিল। যোগদানের আগেই সমালোচনা শুরু হলে তা পিছিয়ে যায়।

আরও জানাগেছে, সোনারগাঁ উপজেলার পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ জামান সহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয়াপার্টিতে যোগদান করেন। ৩ মে শুক্রবার বিকালে পৌরসভার টিপরদী এলাকায় সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে তারা জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেন। যোগদান অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্বে করেন পৌরসভা জাতীয়পার্টির সভাপতি পিয়ার আলী।

এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পৌর কাউন্সিলর জায়েদা আক্তার মনি, আওয়ামীলীগ নেতা মোতালিব মিয়া স্বপন, কেন্দ্রীয় জাতীয়পার্টির নেতা মাসুম মিয়া, উপজেলা ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক সেকান্দার আলী ও শাহীন প্রমূৃখ।

অনুষ্ঠানে লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেন- পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ জামান, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ও তার ছোট ভাই মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি খোরশেদ আলম, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হকের ছেলে ছাত্রদল নেতা হানিফ, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন, পৌর বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান, সাবেক পৌর ছাত্রদল নেতা মোজাম্মেল হক, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক টিটু।

এদের মধ্যে মজিবুর রহমান ও টিটু নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছিলেন। টিটুর বাবা সালাউদ্দীন পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনিও নাশকতার মামলায় কারাভোগ করেন। টিটুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ মিঠু নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এর আগেও তিনি জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আপাদমস্তক একটি বিএনপির পরিবার থেকে টিটু জাতীয়পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করলেন। যদিও এর আগেই তিনি জাতীয়পার্টির হয়ে কাজ করে আসছিলেন। এখন দেখার বিষয় সামনে কি ঘটছে। আর কে কে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরাও সুযোগ খুজছেন জাতীয়পার্টিতে যোগদান করার।

অন্যদিকে, সভাপতি এমএ জামান আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। গত বছরের ১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বরাবর লিখিতভাবে অব্যাহতির আবেদন করেন।

লিখিত অব্যাহতি পত্রে এমএ জামান দাবি করেছিলেন- তিনি গত ৩বছর ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। তার ওপেন হার্ট সার্জারী করানো হয়েছে। যে কারনে তিনি তিন বছর ধরে দলের কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। বর্তমানে তার লিভারের সমস্যায় দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসার প্রয়োজন।

তবে তিনি তার পদ থেকে সরে গিয়ে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহজাহান মেম্বারকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ বলেছিলেন, এমএ জামান চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। আসলে বিষয়টি পদত্যাগ না। তিনি একটি চিঠি দিয়েছেন যেখানে তিনি শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে দায়িত্ব পালনে অপারগ ও সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহজাহান মেম্বারকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য। এখন শাহজাহান মেম্বার দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে এসব বিএনপি নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়ে স্থানীয় সোনারগাঁয়ের একটি অনলাইনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, যারা বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন, দলের জন্য তাদের কোন অবদান ছিলনা, তারা সংস্কার পন্থী। এসব সংস্কার পন্থীরা সরে গেলে বিএনপির কোন ক্ষতিও হবে না ইনশাআল্লাহ।’