বাদী বিবাদীর অন্তরঙ্গ: আজাদ হাবুর জিডি নাটক ফাঁস!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি হিসেবে জিডি নাটক সাঁজিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবু। সেই জিডি নাটকটি এবার ফাঁস হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায়। এমনটাই বলছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জিডির বাদী হাবু ও বিবাদী আজাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্ত দেখা গেল বিএনপির এই দুই নেতার মাঝে। মুলত আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদকে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার উল্টো পাশে মারধরের ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতেই আজাদের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন হাবিবুর রহমান হাবু। এই হাবু মুলত আজাদের ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক। তবে এবার সেই নাটকের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেছে। আর জুয়েলকে মারধরের বিষয়টির এখনও কোন ক্লু খুজে বের পারেনি বিএনপি নেতারা। এমনকি আইনের আশ্রয়ও নেননি রহস্যজনক কারনে।

২৯ এপ্রিল সোমবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে আড়াইহাজার থানার একটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আজাদ ও হাবু সহ ৭৪ জন নেতাকর্মী জামিন নিয়েছেন। জামিন নিয়ে আদালতপাড়ায় আজাদ ও হাবুকে একসঙ্গে ফটোসেশন করতেও দেখা যায়। এমনকি আজাদ গাড়ি করে কোর্ট থেকে বের হওয়ার পথে দীর্ঘক্ষণ হাবুর সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্ত দেখা যায়। যা দেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের এমন অন্তরঙ্গ মুহুর্ত প্রমান করেছে তারা গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জিডি নাটক সাঁজিয়েছিলেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর মিশনপাড়া এলাকায় হোসিয়ারী মিলনায়তনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে একটি কর্মী সংগ্রহের অনুুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আজাদের নামে শ্লোগান দিতে থাকে আজাদের নেতাকর্মীরা। বারবার বাধা দেয়ার পরেও তারা আজাদের শ্লোগান তুলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিলেন। ওইদিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশার লোকজন আজাদের লোকজনদের নিবৃত্ত করতে মারধর করেন।

এ ঘটনা নিয়ে আজাদের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে কঠোর বক্তব্য দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ওই বছরের ১৯ জুলাই নতুন কোর্টের উল্টো দিকে সস্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এ বিষয়ে তিনিও একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৯ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল করতে গেলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আশাকে আদালতে নেয়া হলে তিনি হাটতে পারছিলেন না। তার নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন পুুলিশ তাকে থানায় নিয়ে টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে বেদম মারধর করা হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য নজরুল ইসলাম আজাদের হাত থাকতে পারে বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছিলেন। কারন আজাদের নেতাকর্মীরা দাবি করেন আজাদের সঙ্গে পুুলিশের শীর্ষ অনেকের সাথে সখ্যতা রয়েছে বেশ জোড়ালো। সেটাই ব্যবহার করে আশার উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যদিও বিষয়টি আজাদ পরবর্তীতে অস্বীকার করেছিলেন।

এরপর গত বছরের ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ নতুন কোর্টের বিপরীত পাশে একটি বাস কাউন্টারের সামনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন জুয়েল আহমেদ। ওইদিন হাতুরী ও লোহার রড দিয়ে জুয়েলকে বেদম মারধর করা হয়। গুরুত্বর আহতাবস্থায় জুয়েলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে ওই ঘটনার কোন কুল কিনারা হয়নি এখনও। কে বা কারা তাকে মারধর করেছে তাও বের করা হয়নি। এমনকি রহস্যজনক কারনে আইনের আশ্রয়ও নেননি জুয়েল আহমেদ।

ওই বছরের ১৫ জুলাই হাবিবুর রহমান হাবু বাদী হয়ে নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। আজাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ওই জিডি করেছিলেন হাবু।

হাবিবুর রহমান হাবু ওই জিডিতে অভিযোগ করেছিলেন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদকে নারায়ণগঞ্জে মারধর করা হয়। এর কিছুদিন পর রফিক নামে একজন আমাকে মোবাইলে গালিগালাজ করে হুমকি দেয়। পরে আবার আজাদও আমাকে মোবাইলে হুমকি দেয়। এ নিয়ে আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।
ওই দিন সাংবাদিকদের কাছে হাবু বলেছিলেন, আড়াইহাজারে আজাদকে আমি প্রতিষ্ঠিত করেছি। সেই আজাদ আমাকে হুমকি দিল। এটাই কি রাজনীতির প্রতিদান?

আরও জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া নামের একজন যিনি সার্বক্ষণিক আজাদের সঙ্গে দেখা যায়। তবে এসব হামলা ও জিডির কোন ধরনের ক্ল বের করতে পারেনি বিএনপি নেতারা। এমনকি প্রশাসনিকভাবেও তারা কোন বিহিত করেননি। যে কারনে এসব ঘটনাগুলো আড়ালেই রয়ে গেছে। তবে আজাদ ও হাবুর অন্তরঙ্গ মুহুর্তই প্রমান করে আজাদের বিরুদ্ধে হাবুর জিডি দায়ের করাটি ছিল রহস্যজনক। ওই জিডির তদন্তও চায়নি হাবু। টিপুুর উপর হামলার বিষয়টিও আড়ালে চলে গেল। এখানে আরও উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে আজাদের বেশকজন নেতা রয়েছেন যাদের মধ্যে দুু’একজনের বিরুদ্ধে অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠেছিল।