নৌকা লাঙ্গলের মুকুল আসামি, সাখাওয়াত-টিপুর ঘনিষ্ঠরা গ্রেপ্তার, বিএনপিতে নানা গুঞ্জন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সারা বছর আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে রাজনীতি করেছেন আতাউর রহমান মুকুল। এলাকার উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের অনুষ্ঠান ছাড়াও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সভা সমাবেশেও উপস্থিত থেকেছেন প্রকাশ্যে। এমনকি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধীতা করে জাতীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন মুকুল।

আর সেই মুকুলকে যখন আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাংচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয় তখন খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আরো রহস্য বেধেছে যখন মামলায় মুকুল আসামি হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বাধীন বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদ পনেছ সহ ৪জন নেতাকর্মীরা যখন গ্রেপ্তার হলেন।

মামলায় থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও থানা বিএনপি নেতা নাজমুল হক রানা সহ অধিকাংশ আসামিও হয়েছেন সাখাওয়াত-টিপুর ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা। রানার বাসায় অভিযান দিয়ে রানাকে না পেয়ে তার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুলত মহানগর বিএনপির মুলধারায় রাজনীতি করছেন রানা। মহানগর কমিটি থেকে পদত্যাগ করে বিদ্রোহ করছেন মুকুল। মুকুলের সঙ্গে না থাকায় রানার প্রতি মুকুলের ক্ষোভ রয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান। পনেছ গত ৫ অক্টোবর মহানগর বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে মুকুলের সরকারি দলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তুলে ধরে কঠোর সমালোচনা করেন। যে কারনে পনেছের প্রতিও ক্ষুব্দ মুকুল।

এদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন- মুকুল এক ঢিলে দুই পাখি শিকারে নেমেছেন। একদিকে সাখাওয়াত ও টিপুর লোকজনকে মামলায় ফাঁসিয়ে এবং গ্রেপ্তার করিয়ে কোণঠাসা করতে চাইছেন, অপরদিকে মুকুল মামলায় আসামি হয়ে নিজেকে বিএনপির সাচ্চা কর্মী প্রমাণ করতে চাইছেন। কারন তিনি অতীতে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সেই কালিমা মুছতেই সরকারি দলের নেতাদের মাধ্যমে মামলা সাঁজানো হতে পারে।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর বন্দরের ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসম্মেলনেও পুলিশ কয়েকদফা বাধা প্রদান করে। খোলা মাঠে করতে বাধা দেয়। ওই বিষয়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছিলেন- যারা নৌকা লাঙ্গল মার্কা তারাই সরকারি দলের নেতাদের মাধ্যমে প্রশাসন দিয়ে বিএনপির কর্মীসম্মেলনে বাধা সৃষ্টি করেছে। এর একদিন পরেই বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সাখাওয়াত -টিপুর ঘনিষ্ঠ নেতা নূর মোহাম্মদ পনেছ সহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের বন্দরে ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুরের মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩০ জনকে আসামী করা হয়। মামলায় মুকুল ছাড়াও সাখাওয়াত ও টিপুর ঘনিষ্ঠ কর্মী বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি নূর মুহাম্মদ পনেছ ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান দুলাল, থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হক রানাকে আসামী করা হয়।

মো. সোহেল নামের ছাত্রলীগ নেতা ওই মামলাটি বন্দর থানায় শনিবার ১৯ নভেম্বর দায়ের করেন। মামলায় ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ করে ভাঙচুর, মারপিট, সাধারণ জখম, অফিস কক্ষ অগ্নিসংযোগ, হুমকি, সোহেলকে মারধর, মোবাইল লুট ও ৫০ হাজার টাকা লুটের নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। মামলায় নূর মোঃ পনেছ, সজিব, বুলবুল, রাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নেতাকর্মীদের আরো অভিযোগ- গত ৬ অক্টোবর যখন মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শোক র‌্যালী পালন করেন। সেদিন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির লোকজনদের হুমকি ধমকি ভয়ভীতি দেখিয়ে মুকুল গংদের পাল্টা র‌্যালীতে যোগদান করানোর চেষ্টা করা হয়। মুকুলের আয়োজিত র‌্যালীতে গেলে মামলা হবেনা কিন্তু সাখাওয়াত-টিপুর নেতৃত্বে র‌্যালীতে যোগদান করলে মামলার আসামি হতে হবে বলে নেতাকর্মীদের এমন ভয় দেখানো হয়। তারপরেও সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে বিশাল শোডাউন করে মহানগর বিএনপি।