গিয়াসে আস্থা-সাখাওয়াত দূর্বার: নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে ফিরেছে জৌলুশ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিএনপির জৌলুশ ফিরেছে নারায়ণগঞ্জে। এর আগে যেখানে মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব ছিলো ছন্নছাড়া, জেলা বিএনপির নেতৃত্ব ছিলো যাচ্ছেতাই নেতাদের হাতে। বাম ঘরনার দলের মত হয়ে ওঠেছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির রাজনীতি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের হাতে জেলা বিএনপি ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের হাতে যখন ওঠেছে মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব, তখন চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। গিয়াস ও সাখাওয়াতের নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের মরা শুকনো গাছে যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে-এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে।

সূত্রে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। নির্বাচনে ভোটের আগে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে তৈমূরকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। ওই সময় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হোন মনিরুল ইসলাম রবি। তৈমূরের পক্ষে কাজ করাকালে রবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে নাসির উদ্দীনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। নির্বাচনের পর মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ও তৈমূর আলমকে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়। রবি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হোন। এমন পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব হয়ে ওঠেছিলো বাম ঘরণার দলের মত নেতৃত্ব।

একইভাবে দীর্ঘদিন এটিএম কামাল দায়িত্ব ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। হটাত নির্বাচন নাগাদ সময়ে দেশে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন। কিন্তু শেষবধি তৈমূর নির্বাচন করেন এবং কামাল নির্বাচনে প্রধান এজেন্ট হোন। এর আগে তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। মহানগর বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সাবেক এমপি আবুল কালাম বরাবরের মতই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। পদ নিয়ে বসে ছিলেন। এরি মাঝে তিনি বয়সের কারনে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। মহানগর বিএনপিও হয়ে ওঠে নেতৃত্বহীন।

এমন অবস্থায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি গঠনেসর পর একের পর নারায়ণগঞ্জে চমক দেখিয়ে আসছেন সাখাওয়াত ও টিপু। গত ৬ অক্টোবর বিশাল শোডাউন করে তাদের অবস্থান জানানি দেন। বর্তমানে প্রতিনিয়ত মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। নজির স্থাপন করতে যাচ্ছেন তারা, যেখানে গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন ভোটের মাধ্যমে যা গত কয়েক যুগেও দেখা যায়নি। সেইদিন উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জান মাল দিয়ে গতর খাটা খেটে যাচ্ছেন সাখাওয়াত ও টিপু।

সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত দলের সাংগঠনিক কাজ করছেন এবং রাজপথের আন্দোলনেও সমানতালে সক্রিয় ভুমিকা পালন করছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন অনু, ফাতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, এমএইচ মামুন, মহানগর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহম্মদ, মাসুদ রানা, ডাঃ মুজিবুর রহমান, মাকিদ মোস্তাকিন সিপলু, রাশিদা জামাল, অ্যাডভোকেট এইচ এম. আনোয়ার প্রধান, হাবিবুর রহমান দুলাল, মোঃ বরকত উল্লাহ, সাখাওয়াত ইসলাম রানা, মোঃ ফারুক হোসেন ও শাহিন আহম্মদ।

এদিকে ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে আহবায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটির অনুমোদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গোলাম ফারুক খোকন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক পদে রয়েছেন।

কমিটিতে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রযেছেন অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক পদে মনিরুল ইসলাম রবি, যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম টিটু, যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান খোকা, যুগ্ম আহবায়ক মোশারফ হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জুয়েল আহমেদ।

কমিটিতে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যে, জেলা বিএনপির আওতাধীন কমিটির অনুমোদনের ক্ষেত্রে আহ্বায়ক, ১নং যুগ্ম অহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহামুদ আগের কমিটির সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ছিলেন আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক।

শহিদুল ইসলাম টিটু ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব পদে রয়েছেন। জেলা যুবদলের সভাপতি পদে থাকাবস্থায় তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব হোন। মাসুকুল ইসলাম রাজীব গত কমিটিতে সদস্য ছিলেন। তবে এর আগের কমিটিতে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

লুৎফর রহমান খোকা জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। জুয়েল আহমেদ আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। করেছেন ছাত্রদলের রাজনীতিও। সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকেও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হযেছে। তিনি এর আগে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন ও সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সেক্রেটারিও ছিলেন।