কাদের বলে গেছেন: ‌ভালো হয়ে যান’! কিন্তু আইভী-শামীম বলয়ে বিভক্তি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনেই আব্দুল হাইকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদককে পূণরায় ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু কমিটি গঠনের পরপরেই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ বলয় নিয়ে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।

একইভাবে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন হাই ও বাদল। যদিও কমিটি গঠনের শুরুতেই মনে করা হয়েছিলো যে, জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি শামীম ওসমানের একক নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যাচ্ছে ভিন্ন। হাইয়ের নেতৃত্বে আইভী বলয়ের কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা বেশি। যেখানে বাদল বলয়ে ভাটা।

সম্মেেনের দিন ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে হাই ও বাদলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘সারাদেশে কে কি করে সব জানি। ভালো হয়ে যান। কমিটি করতে ভাগাভাগি করবেন না।’ তবে আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন নির্দেশনার এক সপ্তাহ না যেতেই জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই ভাগ হয়ে যান। শহীদ বাদল নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বলয়ে রাজনীতি করেন। তিনি শামীম ওসমানের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এদিকে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী শামীম ওসমানের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

নেতাকর্মীরা জানান, গত ২৬ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শামসুজ্জোহার কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেদিন সভাপতি আব্দুল হাইকে সঙ্গে দেখা যায়নি। তবে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা সহ এমপি শামীম ওসমানের অনুগামী নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।

এরপর গত ৩১ অক্টোবর সোমবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মহান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন হাইয়ের শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে দেখা যায়নি। তবে আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, সাবেক সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু, আরজু রহমান ভূঁইয়া, সিকদার গোলাম রসুল, মো. ছানাউল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ইকবাল পারভেজ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুন্দর আলী সহ জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কমিটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এখানে বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা এমপি শামীম ওসমানের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

তবে আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো কয়েক ঘন্টা পর শহীদ বাদলও তার অনুগামী হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বাদলের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবু জাফর চৌধূরী বিরু।

সর্বশেষ এবার ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবসেও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেল চারটায় নগরীর ২নং রেলগেইটস্থ আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আব্দুল হাই।

হাইয়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খবির উদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির, আদিনাথ বসু, সিকদার গোলাম রসুল, মো. ছানাউল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন সকালে আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেন শহীদ বাদল। এখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু। যদিও বাদলের অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের সংখ্যা তুলনামুলকভাবে কম ছিলো।