অদম্য অকুতোভয় এক রাজনীতিক, যেভাবে হয়ে ওঠলেন অপ্রতিরোধ্য!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জেল জুলুম হামলা মামলা হুমকি ধমকিতেও যিনি দমে যান না। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেও কয়েক মাস কারাভোগ করেছেন তিনি। ২০১৪ সালে সাত খুনের ঘটনায় জীবন বাজি রেখে বিচার দাবিতে আন্দোলন ও বাদী পক্ষে মামলায় আইনী সহায়তা প্রদান, একই সঙ্গে সমানতালে রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়তা এবং নিজ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনেও যার ভুমিকা অতুলনীয়, তিনি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

১/১১ এর মত কঠিন সময়ে যখন বিএনপির রাঘববোয়াল নেতারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন, কেউ কেউ দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন সংস্কারবাদীদের দলে, ঠিক তখনো বিএনপির হালদারদের মধ্যে অন্যতম তিনি। সর্বশেষ পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালী বের করতে গেলে পুলিশের হামলায় নির্যাতনের শিকার হোন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন ঢলে পড়লে সাখাওয়াত কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু শেষতক শাওন মারা যান। রাজপথের ত্যাগের ফলশ্রুতিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে তাকে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

যে কারনে বর্তমান সময়ের নারায়ণগঞ্জের আলোচিত একজন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জের রাজপথের রাজনীতিতে তার দীর্ঘ কয়েক যুগের অবদান ও ত্যাগের ফলস্বরূপ এই মহানগর বিএনপির আহবায়ক পদে তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এই সরকারের আমলে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাভোগ করেছেন দীর্ঘদিন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কালীন সময়েও কারাভোগ করেছেন সাখাওয়াত।

এক এগারোর মতো কঠিন সময়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে যে ক’জন নেতা দলটির অক্সিজেন দিয়ে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাখাওয়াত হোসেন খান। কিন্তু ২০০৯ সালের পর নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির কমিটি গঠনে তাকে বঞ্চিত করা হয়। অনেকটা কারসাজি এবং মেকানিজম করে প্রয়াত জাহাঙ্গীর কমিশনারকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই সময় বিএনপির বৃহত্তর অংশের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীর কমিশনার ও এটিএম কামালের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে নুরুল ইসলাম সরদারকে সভাপতি, সাখাওয়াত হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।

মূল কমিটিতে না থাকলেও পাল্টা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন করেন সাখাওয়াত ও টিপু। প্রায় কেন্দ্রীয় প্রতিটি কর্মসূচি পালন করেন। নুরুল ইসলাম সরদার একপর্যায়ে রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে গেলেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি সাখাওয়াত হোসেন খান ও টিপু। অন্যদিকে আদালতপাড়ায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সাখাওয়াত হোসেন খান।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সভাপতি পদে প্রার্থী হতে চান সাখাওয়াত। কিন্তু তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সাখাওয়াতকে আবারো বঞ্চিত করেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুর রহমান দিপু ও বিএনপি সমর্থক প্রার্থী আব্দুল বারী ভূঁইয়াকে নির্বাচনে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন সাখাওয়াত। সেই থেকে সাখাওয়াতের রাজনীতির ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি হলে আইনজীবী সমাজের ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এডভোকেট চন্দন সরকার সহ সাত জন নিহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের নিয়ে তুমুল আন্দোলন করেন সাখাওয়াত। ওই আন্দোলন সারা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। আন্দোলনের ফলে একপর্যায়ে র‌্যাবের অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকটা জীবনবাজি রেখে তিনি বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেন। সাত খুন মামলার বিচারও সম্পন্ন হয়।

এভাবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত নারায়ণগঞ্জ ছাড়িয়ে দেশব্যাপী আলোচিত আইনজীবী নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। যার ফলশ্রুতিতে আবারো চ্যালেঞ্জে নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ২০১৬ সালের ওই নির্বাচনে তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতা সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে ধানের শীষের পরাজয় নিশ্চিত করলেও সাখাওয়াত হোসেন খান ৯৬ হাজার ভোট পান। ওই নির্বাচনের পর মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সাখাওয়াত হোসেন খানকে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

তারপর থেকে সাখাওয়াত তার বিশাল অংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেন ও কর্মসূচি পালন করেন। এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও তৎকালীন সেক্রেটারী এটিএম কামাল আপত্তি জানিয়ে সাখাওয়াতকে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে সাখাওয়াত হোসেন খান পৃথকভাবে কর্মসূচি বাদ দিয়ে মূলধারার সাথে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম ও কর্মসূচি পালন করেন। সবশেষ গত পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হোন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির যে পারিবারিক রাজনীতি চলে আসছিলো, সেই পারিবারিক রাজনীতির করব রচনা হয়েছে। পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে রাজপথের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। নারায়ণগঞ্জের মহানগরীর রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছেন তিনি। তার বিকল্প হিসেবে এখন কেউ নাই।