যুবদল সেক্রেটারি মন্তুর সেই ৫ লাখ টাকা কি খোরশেদের পকেটে!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটি গঠনের জন্য তৎকালীন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক ও বর্তমান সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা পদ বানিজ্যের অভিযোগ তুলেছিলেন। একটি চেকের মাধ্যমে খোরশেদকে কমিটি গঠনের জন্য বর্তমান মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলেও তিনি মিডিয়াতে দাবি করেছিলেন। যা তিনি এও দাবি করেছিলেন তিনি একটি চেকের মাধ্যমে এই পদ বানিজ্যের টাকা খোরশেদকে দিয়েছিলেন যা তার কাছে ছিল। যদিও খোরশেদ সেই সময় অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছিলেন, মন্তুর মত কমিটি ও পদ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারনেই এসব অবান্তর অভিযোগ করেছেন।

যদিও পরবর্তীতে মন্তুকেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি করেন খোরশেদ। যে কারনে নেতাকর্মীদের কাছে এখনও প্রশ্ন ওঠে যায় তাহলে কি মন্তু ওই ৫ লাখ টাকা দিয়েই তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়েছিলেন? যদি তিনি ৫ লাখ টাকা না দিতেন তাহলে কেন তিনি সভাপতি পলেন এবং কেন তিনি তার অভিযোগ মিডিয়াতে প্রত্যাহার করে নেননি? যে বিষয়টি নেতাকর্মীদের কাছে পরিষ্কার। তবে খোরশেদ ও মন্তুর ঐক্য দেখে নেতাকর্মীদের মাঝে আবার এও প্রশ্ন ওঠেছে মন্তুর সেই ৫ লাখ টাকা কি খোরশেদের পকেটে নাকি মন্তুর পকেটেই ফেরত গেল তা নেতাকর্মীরা আর জানতে পারেননি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তুর রহস্যজনক ভুমিকার কারনে পূর্বের সেই বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। নেতাকর্মীরা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে খোরশেদ সেই মন্তুর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েই তাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন কিনা? এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সে রকম কিছুই কি ঘটেছে নাকি যে কারনে মন্তু ও খোরশেদ এখন এক সূরে কথা বলছেন। যেখানে মহানগর যুবদলের প্রথম সভায় অধিকাংশ নেতারা বয়কট করে মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

ওই অভিযোগের কয়েকদিন পরেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেন খোরশেদ। কমিটিতে মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে সভাপতি, জুয়েল প্রধানকে সেক্রেটারি, জুয়েল রানাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করেন তিনি। কমিটি গঠনের পর মন্তু রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। যার ফলে সাগর প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে পদে বহান খোরশেদ। যা নিয়ে মন্তু নানান সময় নানান ধরনের বক্তব্য দেন এবং নিজেকেই সভাপতি দাবি করেন। এই চার জনই ছিলেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।

অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে মহানগর যুবদলের ঘোষণা করা বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। ৬ এপ্রিল শনিবার বন্দরে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু। কমিটি গঠনের ১২ ঘন্টার মধ্যেই এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি।

আরও জানাগেছে, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন তৎকালীন জেলা যুবদল দাবি করে আসছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতারা ৫টি ইউনিয়ন জেলার আওতাধীন থাকবে বলে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা যুবদলের তৎকালীন সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ থেকে সরে দাড়িয়ে ৫টি ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য মহানগর কমিটিকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে সেখানে বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন করেছিল মহানগর যুবদল। সেই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের এলাকা নিয়ে বন্দর থানা যুবদলের কমিটিও গঠন করে মহানগর যুবদল।

এর আগে জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর উপজেলা যুবদলের ব্যানার নিয়ে ঢাকায় এক কর্মসূচিতে যোগদান করতে গেলে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন বন্দর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির।

ওই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বন্দরে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে জুড়া ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু ও বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হিরন। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি বিরোধ এড়াতে মহানগর যুবদলের উপর ছেড়ে দেয় ওই ৫টি ইউনিয়ন। কিন্তু বর্তমান জেলা যুবদল সেই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করায় আবারো মহানগর ও জেলা যুবদলের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকা থেকে জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি কমিটিতেই নেতাদের পদে রাখা হয়েছে।

কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, বন্দর উপজেলা যুবদলের কমিটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির নির্দেশ এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের যুবদলের নেতাদের জানানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এখন কাগজের মাধ্যমে এভাবে কমিটি হবেনা। সকল কমিটি এখন সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।’

বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন জেলা নাকি মহানগর কমিটির আওতাধীন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত জানাবো। আপাতত আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছিনা। মহানগর যুবদল বন্দরে যে কমিটি গঠন করেছে সেটা আমরা স্থগিত করেছি।’

এদিকে জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু দাবি করেছেন- বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদলের আওতাধীন হিসেবেই রাখা হয়েছে। ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে অনেক নেতাদের জেলা যুবদলে রেখেই জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের জানানো হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই গঠন করব। আর সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা নাই। ৫টি ইউনিয়ন মহানগর যুবদলের আওতাধীন থাকবে।’

৬ এপ্রিল শনিবার নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। বন্দর উপজেলা যুবদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৯০ দিনের জন্য এই ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।

কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পারভেজ খান ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম মনু, মোঃ রুবেল মিয়া, বাবুল হোসেন মেম্বার, আবদুস সাত্তার, মোঃ মামুন ভূইয়া, মোঃ জাহিদ খন্দকার, আল-মামুন প্রধান, মোঃ নুর হোসেন, গোলজার হোসেন ভূইয়া, মোঃ আসাবুদ্দিন, মোঃ শিপন মাহমুদ, মোঃ বর জাহান, সেলিম খন্দকার, কামরুল ইসলাম, জাহিরুল খন্দকার জনি, স¤্রাট হাসান সুজন।