বাবুর গুণকীর্তন, পরাজয়ে নৌকার প্রার্থী সোহাগ রনিকে দোষারোপ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেও দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেছেন আরিফ মাসুদ বাবু। নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আওয়ামীলীগের ৪ নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সোহাগ রনি। নির্বাচনের পূর্বে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন করেছেন আরিফ মাসুদ বাবু। যেখানে বাবুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিস্কারের সুপারিশ প্রস্তাব আনা নিয়ম এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করা। কিন্তু উল্টো সোহাগ রনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। বাবুর গুণকীর্তন করে পরাজয়ের জন্য সোহাগ রনিকেই দায়ী করছেন তারা।

জানাগেছে, গত ১৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাজী শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি এক হাজারাধিক ভোটের ব্যবধানে বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবুর কাছে পরাজিত হোন। নির্বাচনে উপজেলার শীর্ষ বেশকজন নেতার ভুমিকা নৌকার পক্ষে ছিলো না।

ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও রফিকুল ইসলাম নান্নু নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সোহাগ রনি।

সোহাগ রনির এমন অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের তদন্ত ছাড়াই সোহাগ রনির অভিযোগের বিরোধীতা করলো উপজেলা আওয়ামীলীগ। উল্টো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করেই তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টায় নেমেছেন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। যারা দুদিন আগেও বিবাদে বিরোধে ছিলেন সেইসব নেতারাও একজোট হয়েছেন সোহাগ রনির বিরুদ্ধে। ৪ জুন সোমবার উপজেলা আওয়ামীলীগের জরুরী সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটাই দেখা গেলো। বিরু, কায়সার সামসুর হটাত এমন একতার সূরে কথার বলায় রহস্য দেখছেন স্থানীয়রা।

জানাগেছে, সোমবার বিকেলে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির জরুরী বর্ধিত সভা শেষে আওয়ামীলীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার পক্ষে লিখিত বক্তব্য শোনান উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, গত ১৫ জুনের মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত প্রার্থী সোহাগ রনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোনারগাঁও তথা বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা গত ১১ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির বর্ধিত সভার মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী সোহাগ রনির পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নে নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করেছি।

উপজেলা আওয়ামীলীগ উল্টো দাবি করে- প্রার্থীর নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার কারণে দ্বারপ্রান্তে গিয়েও নৌকাকে জিতাতে পারিনি। যার ফলে প্রার্থী তার নিজের দায় এড়াতে বিভ্রান্ত হয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, রফিকুল ইসলাম নান্নু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন লাইভে ও বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও এমন একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। যাহা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তিনি জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কায়সার হাসনাত, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুম, সদস্য আবু জাফর চৌধুরী বিরু, রফিকুল ইসলাম নান্নু। সোহাগ রনির অভিযুক্ত ৪জনকে নৌকার পক্ষে কেন প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাযনা- স্থানীয় এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার হাসনাত দাবি করেন- জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে লিফলেট বিতরণে নান্নু ছিলেন। নামকাওয়াস্তে নান্নুকে এমনটা দেখা গেলেও বাকি ৩জনের বিষয়ে কোনো সদুত্তোর দিতে পারেনি কায়সার হাসনাত। তবে তিনি একাধিকবার আরিফ মাসুদ বাবু ও তার পুর্বপুরুষদের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বাবুর গুণকীর্তন করেছেন। দুৃদিন পূর্বে মোগরাপাড়া ইউনিয়নে একটি কর্মীসভায় বাবুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কায়সার হাসনাত এবং তাকে মঞ্চে নিয়েই কর্মীসভা করেন তিনি। একইভাবে সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও কায়সার হাসনাত এক পর্যায়ে দাবি করেন- আরিফ মাসুদ বাবু পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন সেটা আমরা গ্রহণও করিনি, আবার ফেরতও দেইনি।