তৃণমুল চায় বাবুলের বহিস্কার, শোকজ দিলো সামসু কায়সার!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

‘আামি বারদীর ম্যাজিস্ট্রেট, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারদীতে আসলেও আমার হুকুম লাগবে’ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়ন পরিষদের বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান লায়ন মাহাবুবুর রহমান বাবুলের এমন বক্তব্যের পর জেলা আওয়ামীলীগ তাকে সাময়িক অব্যাহতি দিলেও স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ- সেই বাবুলকে বাঁচানোর চেষ্টায় নেমেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ তিন নেতা। দলীয় জরুরী সভা ডেকে বাবুলের বহিস্কারের সুপারিশ না করে ‍উল্টো শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। আবার শোকজের একদিন পর ২১ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত লায়ন বাবুলকে নিয়ে উপজেলা চত্বরে শহীদ মিনার বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় উপজেলা আওয়ামীলীগ! বিষয়টি রহস্যজনক।

এদিকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে লায়ন বাবুল দল থেকে বহিষ্কার ও তার চেয়ারম্যানশীপ ঠেকাতে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে ম্যানেজ মিশনে মাঠে নেমেছেন বাবুল। উপজেলা আওয়ামীলীগের ভুমিকা সেই গুঞ্জন অনেকটা সত্যে রূপ নিচ্ছে। বহিস্কারের সুপারিশ না করে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়ে শোকজ করা হয়। এই এক সপ্তাহ যে ৫২ সপ্তাহেও শেষ হবে না সেটা বুঝা যাচ্ছে। মুলত বাবুলকে বহিস্কার থেকে বাঁচাতে শোকজ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বলে স্থানীয়দের মত। আবার পরদিনই বাবুলকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের কর্মসূচি পালনে বিষয়টি পরিস্কার। একইভাবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই যখন জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে বাবুলের গ্রেপ্তার দাবিতে ডিসি এসপি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করলো তখন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল উল্টো স্মারকলিপির বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেন মিডিয়াতে। এতেও বাবুলকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। ফলে বাবুল ইতিমধ্যে অনেককেই ম্যানেজ করে ফেলেছেন সেটা বুঝা যায়।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী বেশ আলোচিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ জরুরী সভার মাধ্যমে বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়া বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুলকে শোকজ করা, উপজেলার দশটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তাকে সতর্ক করা হয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৩ নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার বিষয়ে প্রতিবাদ নিন্দা জানিয়ে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানায় উপজেলা আওয়ামী লীগ।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির জরুরী সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা আওয়ামীলীগের দেয়া অব্যাহতি বহাল রেখে কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না এ বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুলকে কারন দর্শাতে শোকজের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানান উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা।

সভায় সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, যুগ্ম আহবায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্যগণ।

অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া গণমাধ্যমে বলেন, ইতিমধ্যে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান লায়ন বাবুলকে সাময়িক বহিস্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা তাকে শোকজ করেছি। তার জবাব পেলে আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে বাবুলকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য সুপারিশ করবো।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে উপজেলার ১০জন চেয়ারম্যানের বিষয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় এ সভার মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে।একইসঙ্গে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের অবস্থিত কাইকারটেক হাটের ইজারা নিয়ে উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনায় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে এই মামলাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। গণমাধ্যমে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, হাটের ইজারা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনার সময় তারা তিনজনের কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অথচ তাদের নামে মামলা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

এখানে উল্লেখ্য যে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের পাইকপাড়া দেওয়ান বাড়ির বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের ম্যাজিস্ট্রেট। বারদীতে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসেন তাহলে আমার হুকুম লাগবে’ মন্তব্য করেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বাবুল। বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত এ চেয়ারম্যান এও বলেছেন, আমি যদি সুইচ অফ, দিস ইজ অফ। প্রশাসন আমার পক্ষে কাজ করবে। কারও ফোনে প্রশাসন আসবে না।

একই দিন বারদী ইউনিয়ন যুবলীগের এক কর্মীসভায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেছিলেন, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আরেক পাল্লায় যদি সোনারগাঁ থানা যুবলীগের সভাপতিকে রাখা হয় তাহলে সোনারগাঁ থানা যুবলীগের সভাপতি ওজন তাদের সমান হবে না, ওজন বাইরা যাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে চিনে। যদি যুবলীগের নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হয় তাহলে মুখ তালা দিয়া থুমু বইলা দিলাম।