বিএনপির ডুয়েল পলিটিক্স, তারা কেনো বহিষ্কার নয়?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

মুখে বলছে এই নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের কোনো নির্বাচনই মানিনা। আবার বিএনপির নেতাকর্মীরাই এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে নির্বাচন করছেন। যারা দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করছেনা বিএনপি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ এই নির্বাচন কমিশনের সকল নির্বাচনকে অবৈধ এবং পাতানো নির্বাচন অভিযুক্ত করে করেছে বিএনপি।

গত কয়েক বছর পূর্বে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় কোনো নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে না। কারণ তারা এই নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থাশীল নয়। বিএনপি মনে করে এই নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন, তারা সরকারের পারপাস বাস্তবায়ন করতেই কাজ করছেন। এছাড়া এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। যেখানে বিএনপি দাবি করছে এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে কোনো নির্বাচন বৈধ নয়, সেখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সহ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন যারা বিএনপি’র রাজনীতিতে জড়িত সরাসরি।

নেতাকর্মীদের মতামত হলো- এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে সকল নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হয়ে যায় যখন বিএনপি খালেদা জিয়ার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সহ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয়। যেখানে বিএনপি বলছে নির্বাচন কমিশনের সকল নির্বাচন অবৈধ এবং তারা নির্বাচন পরিচালনার যোগ্য নয়, সেখানে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অংশ অংশগ্রহণ করছে এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে। যার ফলে এতে প্রমাণিত হয় এই নির্বাচন কমিশনের উপর বিএনপির নেতাকর্মীরা আস্থাশীল এবং তারা এই নির্বাচের ফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র দাবিকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সিদ্ধান্তকে মিথ্যা প্রমাণিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।

যদি এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে বিএনপি আস্থাশীল না হতো তাহলে কেন নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করলো সে বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ্যমে প্রশ্ন রেখেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রতি। আর যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে সকল নির্বাচনকে অবৈধ এবং নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে নির্বাচন বয়কট করে থাকেন তবে নারায়ণগঞ্জ নেতাকর্মীরা কেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন? এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না? একইসঙ্গে তাদেরকে কেন বহিষ্কার করা হবে কেন?

এদিকে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় জেলা বিএনপি’র পদ থেকে তাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জেলা ও মহানগর বিএনপি’র পদধারী সহ বিএনপি’র নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছেন যারা বিএনপি’র সরাসরি জড়িত তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিএনপি।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবারও তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তার আপন বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার মেয়র প্রার্থী। মহানগর বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শওকত হাসেম শকু সিটি কর্পোরেশন ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউসার আশা সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছক্কুু, তিনি ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমএইচ মামুন, তিনি ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন মহানগর বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মাকিদ মুস্তাকিম শিপলু, ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক দিদার খন্দকার, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক লিয়াকত আলী লেকু। ৮নং ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাগর প্রধান ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।

সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি সমর্থক আফসানা আফরোজ বিভা হাসান, যার পরিবার বিএনপি জড়িত। নগর বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদের স্ত্রী তিনি। মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আয়েশা আক্তার দিনা, তিনিও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার, কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন মহানগর বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া, এনায়েত হোসেন, গোলাম নবী মুরাদ সহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন বহু নেতাকর্মী। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বিএনপির রাজনীতি কিংবা বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পদবী সহ যারা সরাসরি জড়িত তারাও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। যার ফলে এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে সকল নির্বাচনকে তারা বৈধতা দিচ্ছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।