মহানগর বিএনপির কর্ণধার সাখাওয়াত, কমিটি নিয়ে কালাম কামালের কারসাজি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবুল কালাম যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ্য ও সেক্রেটারি এটিএম কামাল যখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতিকে সচল রেখে আসছেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। অনেকটা মহানগর বিএনপির রাজনীতি তিনিই সচল রেখেছেন এবং মহানগর বিএনপির কর্ণধার হিসেবে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন সেই সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে বিএনপির মধ্যেই চলছে ষড়যন্ত্র। এমন অভিযোগ রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীদের।

নেতাকর্মীদের দাবি- নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতির ক্রান্তিলগ্নে রাজনীতির হাল ধরেন দেশব্যাপী আলোচিত নারায়ণগঞ্জের এই আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। বয়েসের বাড়ে অসুস্থ্য সাবেক এমপি অ্যাডকোকেট আবুল কালাম যখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির হাল ছেড়ে দেন তখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। ঠিক এ সময়েই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন সংগ্রামে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির হাল ধরেন রাজপথের সক্রিয় এই নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সফল সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সাখাওয়াতের হাতেই এখন অভিভাবকহীন মহানগর বিএনপির নিয়ন্ত্রণ চায় তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূলে দাবি তাদের একমাত্র ভরসা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানই।

জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকেই সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিজের ড্রয়িং রুমে ফ্রেম বন্দির মত করে রাখেন। এক সময়কার রাজপথের নেতা এটিএম কামালও নিজেকে নেন গুটিয়ে। কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মাথায় এটিএম কামাল ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলেও রাতের আধারে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান সুদূর আমেরিকায়। চলে আসেন জাতীয় নির্বাচনের আগ নাগাদ। তা নিয়ে বিষয়টি নেতাকর্মীদের কাছে রহস্যে ঘেরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন- সভাপতি ও সেক্রেটারির নিষ্ক্রিয়তায় যখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর অচল হয়ে যাওয়ার অবস্থা তখন বীরের বেশে এসে নেতাকর্মীদের মনে আশার আলো দেখান রাজপথ কাঁপানো সংগ্রামী কারানির্যাতিত নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান। আজ অবধি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম আর মাথার উপর ছায়া দানের জন্য নেতাকর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এখনো টিকে আছেন সংগ্রামী ও মামলায় জর্জরিত বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের পাশে দাড়ানো সাখাওয়াত হোসেন খান। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একমাত্র ভরসা সাখাওয়াত হোসেন খান।

অথচ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হয় তাকে তৃতীয় সহ-সভাপতি পদে। যদিও ওই কমিটি আটকে গেছে নানা সমালোচনার মুখে। বিগত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা সরাসরি বিএনপির দলের বাহিরে গিয়ে জাতীয় পার্টির নির্বাচন করেছিলেন আতাউর রহমান মুকুল ও শওকত হাশেম শকু। তাদেরকে সামনে এনে সেই সাখাওয়াত হোসেন খানকে পিছনে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেন কালাম ও কামাল। সরকারি দলের হয়ে কাজ করা নেতাদের সামনে রেখে কমিটি তৈরি করতে চান তারা। অথচ মহানগর বিএনপির রাজনীতিকে সচল রাখা সাখাওয়াতকে রাখতে চান পিছনে।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন দলের দুঃসময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। আরও কজন নেতাকর্মী বলেন, গোল্লাছুট খেলার মত নেতা ও বিরোধীদলে থেকেও সরকার দলীয় নেতাদের সাথে আতাঁত করে ব্যবসা বানিজ্য করছেন। অথচ তাদেরকে বড় বড় পদে রেখে সক্রিয় নেতাদের পিছনে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্তু কালাম ও কামাল। এমন নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ- তারা সরকারি দলের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়নেই তারা মুকুল ও শকুদের মত নেতাদের মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সামনে রেখে সাখাওয়াতকে পিছনে রাখার মিশনে নেমেছেন।

জানাগেছে, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছিলেন। সেলিম ওসমানের জনসভায় গিয়ে সেলিম ওসমানকেই এমপি হিসেবে দেখতে চান বলেও ঘোষণা দেন তিনি। নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরামের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন মুকুল। যা অভিযোগ করেছিলেন এসএম আকরাম।

মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাশেম শকু। তিনিও মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মারধর ও হুমকি ধমকি দিয়েছিলেন। যা সংবাদ সম্মেলন করে কাসেমী অভিযোগ করেছিলেন। মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেলিম ওসমানকে বিজয়ী করতে যত টাকা লাগে তা দিবেন হান্নান সরকার। এসব নেতাদের মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপরের পদে রেখে সাখাওয়াত হোসেন খানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে নিচে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন শীর্ষ দুই নেতা। এর পিছনে সরকারি দলের টাকার গন্ধ দেখছেন নেতাকর্মীরা।