আউয়ালের নির্দেশে নৌকায় ফেরদাউস ও হারুন! যারা হেফাজত তাঁরাই নৌকা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে যখন শোডাউন করেছেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক, মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হারুন অর রশীদ, তখন নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তারা কার ইশারায় কার নির্দেশে নৌকার উপর ভর করে হেফাজতে ইসলামকে চাঙ্গা করে তুলছেন? নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল। মাওলানা আব্দুল আউয়ালের দুই সেনাপতি হিসেবে পরিচিত মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও মাওলানা হারুণ অর রশীদ। সেই ফেরদাউস ও হারুন যখন নৌকার পক্ষে সরকারি মাঠে তখন সেটা মাওলানা আউয়ালের নির্দেশেই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।

অনেকেই জানিয়েছেন- জেলার মধ্যে আলীরটেক ইউনিয়নে বেশকটি মাদ্রাসা রয়েছে যেখানে প্রায় সকল শিক্ষক হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জড়িত। তাদের মাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অতীতে একাধিকবার সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে নামানো হয়েছিল। সেইসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যখন নৌকা প্রতীকের পক্ষে বিশাল শোডাউন করেন তখন নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারো কারো ধারণা এখানে হেফাজতে ইসলামে পূর্বের ন্যায় হেফাজতের ঘাটি গড়তে চায়, সে কারনে হেফাজত ঘেষা জাকির হোসেনকে বিজয়ী করতে পারলে সেই কাজটি সহজ হবে। একইভাবে নৌকার উপর ভর করে বড় ধরণের কোনো নাশকতার পরিকল্পনায় হেফাজত রয়েছে কিনা সেটাও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা উচিত। নতুবা বড় ধরণের কোনো নাশকতার সৃষ্টি হলে প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে।

স্থানীয়দের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে শোডাউন করে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের ও জামায়েত ইসলামের শীর্ষ নেতারা। যারা সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডজন ডজন মামলার আসামি। জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল ছাড়া পরবর্তী পর্যায়ের প্র্রায় সকল শীর্ষ নেতারা এই নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন প্রকাশ্যে।

এতে করে এই নির্বাচনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হেফাজত ও জামায়েতের নেতারা এক জোট হয়ে বড় ধরণের নাশকতার সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন ইউনিয়নবাসী। তারা কৌশলগত কারনে নৌকা প্রার্থীর উপর ভর করে নাশকতা সৃষ্টির পায়তারার লক্ষ্যে ৪টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়েছেন। ইউনিয়নবাসী মনে করছেন- এখনি এদের লাগাম টেনে না ধরলে হেফাজত ইসলাম ও জামায়েত ইসলাম বড় ধরণের রাজনৈতিক ইস্যূ তৈরি করতে পারে এখানে।

জানাগেছে, ২৯ অক্টোবর শুক্রবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন।

হেফাজতে ইসলাম ও জামায়েত ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলার শীর্ষ নেতারা সহ ফতুল্লার কাশিপুর মাদ্রাসা, মুক্তারকান্দী মাদ্রাসা, ডিক্রিরচর মাদ্রাসা ও আলীরটেক ইউনিয়নের আশপাশের ব্রিকফিল্টের (ইটখোলা) শ্রমিকদের নিয়ে এই শোডাউন করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। যেখানে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও মাওলানা হারুন অর রশীদ ছাড়াও জেলা হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন কাসেমী, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সহ শীর্ষ নেতারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে এই শোডাউন করেছেন।

অন্যদিকে এর আগেই আলীরটেকের মানুষজন অভিযোগ করেছেন- আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যে হেফাজতের নানা নাশকতায় সরকারকে বারবার উন্নয়নের মুখে বাধায় পড়তে হয়েছিল সেই হেফাজত ইসলাম চাঙ্গা হয়ে ওঠছে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থী জাকির হোসেনের ছত্রছায়ায়। যারা সরকার পতনের হুংকার দিয়েছিল এখন তারা নৌকার প্রার্থীর উপর ভর করে নাশকতার সৃষ্টির পায়তারা করছেন। যে কারনে ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ- জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আলীরটেক ইউনিয়ন হবে জামায়েত ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের ঘাটি।

এখানে নির্বাচনের শুরুতেই হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে জেলা জুড়ে সমালোচনা চলছে হরদম। এরপর ফলে আওয়ামীলীগের রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আতংকে ওঠলেও জাকির হোসেনের উপর প্রভাবশালীদের ছায়া থাকায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা কেউ। এবার প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

আরো অভিযোগ রযেছে- নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন দাখিল শেষে জয় বাংলা শ্লোগান না দিয়ে ভিন্ন শ্লোগান দিয়েছেন ওই সময়, যে শ্লোগানটি সাধারণত হেফাজতের নেতাকর্মীরা দেন। ওই শ্লোগানের ভিডিও ফেসবুকেও প্রকাশিত হয়েছে এবং সংবাদকর্মীদের কাছেও সংরক্ষিত রয়েছে। জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিনেও জাকির হোসেনের সঙ্গে ছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

স্থানীয়রা বলছেন- নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থা ছিল এক সময় আলীরটেক ইউনিয়নে। আওয়ামীলীগ ছিল কোণঠাসা। আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করেছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা সায়েম আহমেদ। সায়েমের ভুমিকায় আলীরটেকে জামায়ত ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা পিছু হটেছিল। অথচ সায়েম নৌকা প্রতীক পাননি। কিন্তু নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জাকির হোসেন যিনি কোনোদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতেই ছিলেন না।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেড়া ও মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর মামলাও রয়েছে।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের মামলার আসামি আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নগরীর পাইকপাড়ার নয়াপাড়া এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চলে৷ নির্বাচনের বানচালের চেষ্টায় সংঘটিত ওই ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর এমপির অনুসারী এনামুল হক রিয়াজ মামলা করেন৷ ওই মামলায় ৭৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়৷ মামলার ৭৪ নম্বর আসামি জাকির হোসেন৷

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাকিরসহ এজাহারনামীয় ৭৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন আসামি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পাইকপাড়ার নয়াপাড়া ক্যাম্পে হামলা করে৷ ক্যাম্পের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে৷ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ সেই আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন৷ ক্যাম্পে থাকা অডিও প্লেয়ার, মাইক লুট করে আসামিরা৷