ফতুল্লায় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা করলো চাচা-ভাতিজা, র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর, ক্লু-লেস ও নৃশংস ‘সুজন ফকির’ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ ও হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেম হোসেনকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে নাটোরের বাগাতিপাড়া থেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ১৮ অক্টোবর সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।

তিনি জানান, গত ১৬ অক্টোবর সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একটি নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পরই একই তারিখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সজিব ফকির নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা ও রক্তাক্ত লাশটি দেখে লাশটি তার বাবা সুজন ফকির বলে শনাক্ত করেন।

উক্ত ঘটনার অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নিহতের ছেলে বাদী হযে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৩৭ তারিখ ১৬/১০/২০২১। এই ঘটনা স্থানীয় সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

র‌্যাব আরও জানায়, উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে র‌্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ অক্টোবর সোমবার র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নাটোরের বাগাতিপাড়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে সুজিন ফকির হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ ও মজজেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আব্দুল মজিদ নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থানার ডুমরাই সরকার পাড়া এলাকার মোঃ আফাজের ছেলে ও হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেম হোসেন একই এলাকার মোঃ মহাকাতের ছেলে।

র‌্যাব জানায, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদের স্ত্রীর সাথে নিহত সুজন ফকিররের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এর কারণে সমসাময়িককালে মজিদ ও তার স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ অক্টোবর আব্দুল মজিদের স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পর স্ত্রীকে না পেয়ে আব্দুল মজিদের মনে সন্দেহ হয় যে, তার স্ত্রী সুজন ফকিরের হেফাজতে রয়েছে। তখন থেকেই সে তার ভাতিজা মোঃ মজজেম হোসেনকে নিয়ে সুজন ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আব্দুল মজিদ তার ভাতিজা মোঃ মজজেম হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার কথা বলে।

মজজেম নাটোর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার সময় তার খালাতো ভাই মোঃ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে হত্যাকান্ডের আগের রাতে নারায়ণগঞ্জে আসে। আব্দুল মজিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ঘটনার দিন সকালে সুজন ফকিরের বর্তমান ঠিকানায় যায়।

ঘটনার দিন সকালে আব্দুল মজিদ মোবাইল ফোনে ভিকটিম সুজনকে মোঃ মজজেমের সাথে দেখা করতে বলে। ভিকটিম সুজন ফকির মোঃ মজজেমের সাথে দেখা করতে আসলে মোঃ মজজেম কথা আছে বলে অটোরিক্সা যোগে অন্যত্র রওনা দেয়।

যাওয়ার পথে সকাল অনুমান সাড়ে ৭টায় নয়াবাজার এলাকায় চলন্ত অটোরিক্সার পিছনের সীটে বসা মজজেম সামনে বসা সুজন ফকিরের গলায় পিছন থেকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-৫ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ১৮ অক্টোবর নাটোরের বাগাতিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আব্দুল মজিদ এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোঃ মজজেমকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী অপর সদস্য মোঃ হাসান গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য র‌্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।