কায়সার কালাম মাসুমকে বিরু: ‌‌‌’বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো, এটা আমার অঙ্গীকার!’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু। একই সঙ্গে তার পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। ওই অভিযোগের বিষয়ে এবার আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে দেশের প্র্রচলিত আইনে মামলা করে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন আবু জাফর চৌধুরী বিরু।

২৭ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামের আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও একুশে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপরোক্ত শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে তাদের পূর্বপুরুষদের অতীত রাজনীতির ইঙ্গিতও দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল।

উপরোক্ত নেতাদের ইঙ্গিত করে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু বলেছেন, সোনারগাঁয়ের চিত্র আমার দেখতে ভাল লাগে না। ২০০৮ সালে সোনারগাঁয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পাশ করিয়েছিলাম। ২০১৪ সালে তিনি নৌকা প্রতীক হারালেন। কেন হারালেন? সেদিন তো আমরা নৌকার দাবিদার ছিলাম না। হারালেন তার ব্যক্তিগত অযোগ্যতার কারনে। তার পরপর দুইবার নৌকা হারিয়েছেন। দুর্দশা লেগেছে তৃণমুল নেতাকর্মীদের। সে নেতাকর্মীদের পানিতে ফেলে দিয়েছে। সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। যারা থানা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা কি করেছেন? তারা ২০০৮ সাল থেকে নেতাকর্মীদের ভাগ করে রেখেছিলেণ। তখন দলের মধ্যে বিভক্ত হয়নি? এখন আপনারা এক্যর ডাক দিচ্ছেন।

কায়সার ও কালামকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আপনারা আশির দশক থেকে দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। বারবার নৌকাকে সোনারগাঁও থেকে বিতারিত করেছেন। তার জন্য বিচারের পর্যায়ে এসেছেন, আপনারা বহিস্কার হয়েছেন, পুলিশ দিয়ে আপনাদেরকে বাধ্য করা হযেছে নির্বাচন থেকে সরে যেতে, আপনাদের দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর আজকে আপনারা কুৎসা রটনা করেন? কে শিবির করেছে, কে রাজাকার, যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনী ব্যবস্থায় আপনাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে অবশ্যই আপনাদের দাঁড় করাবো এটা আমার অঙ্গীকার।

এরপর নারায়ণগঞ্জজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাইকে ইঙ্গিত করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল তার বক্তব্যে বলেন, কথায় কথায় হাইব্রিড বলেন, আরে হাইব্রিডটা কে দেখান না? আওয়ামীলীগে হাইব্রিডটা দেখান। আই এম দ্যা জেনারেল সেক্রেটারি অব নারায়ণগঞ্জ ডিস্ট্রিক আওয়ামীলীগ। যদি কোনো প্রমাণ করতে পারেন তাকে বহিষ্কার করা হবে।

শহীদ বাদল আরও বলেন, কোনো এক নেতা শুনলাম সেদিন এই সনমান্দি আইসা গেছে, ঘুইরা গেছে। আবার ওই গোগনগর আলীরটেকে উনি মিটিং কইরা আসছেন, সেখানে তিনি বললেন যে কমিটিতে হাইব্রিডের নাম ছিল, আমি সই করতে দেই নাই। আমি বলতে চাই জনাব আমি বাদল তখন কোথায় ছিলাম? আমি কি ছিলাম না সেখানে? আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনি কিসের মুক্তিযোদ্ধা? আপনি কোন সেক্টরে আপনি যুদ্ধ করেছিলেন তার প্রমাণ দেখান। মানুষ বলে, আপনার বোনের জামাই এমপি ছিল, খন্দকার মোশতাকের দলে ডুকার জন্য লাইন দিয়ে খন্দকার মোশতাকের বাসায় আপনি গিয়েছিলেন। যদি প্রমাণ চান এটা মানুষ প্রমাণ দিবে। বেশি কথা বলবেন না, কথা কম বলবেন।

ঘ্টনা সূত্রে সোনারগাঁয়ের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার সামনে পাশাপাশি দুটি স্পটে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলো আওয়ামীলীগের দুটি বলয়ের নেতাকর্মীরা। যেখানে একটির আয়োজনে ছিলো আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নেতৃত্বে উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগ, অপরটির আয়োজনে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু। কিন্তু ১৪ আগস্ট ও ১৫ আগস্ট দুই দফায় বিরুর আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল ভাংচুুর করা হয়।

ভাংচুরের ঘটনায় ডা. বিরু সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে দায়ী করেছেন। যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের এক অনুষ্ঠানে কায়সার হাসনাত বলেছেন, বিরু নিজেই তার লোকজন দিয়ে প্যান্ডেল ভাঙ্গিয়ে আওয়ামীলীগে বিভক্তি আছে সেটা প্রমাণ করতে চায়।’

পরবর্তীতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু শিক্ষাজীবনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে জামায়েত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।

এমন পরিস্থিতিতে ডা. বিরুর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের রীতিমত শাসিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। গত ২০ আগস্ট উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে ডা. বিরুর পক্ষের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে কঠোর ভাষায় বক্তব্য ছেড়েছেন তিনি।

ওইদিন শহীদ বাদল তার কঠোর ভাষায় মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। স্টপ ইউর মাউথ।’ একই সঙ্গে শহীদ বাদল তার বক্তব্যে ডা. বিরুকে সাচ্চা আওয়ামীলীগার বানানোর চেষ্টাও করেছেন। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে যে কায়সার-কালামরা রাজপথে রক্ত ঝড়িয়েছিল, যে কায়সার হাসনাতের শরীরের রক্তে সাদা পাঞ্জাবী রক্তে লাল হয়ে ওঠার দৃশ্য আজো সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের চোখে ভেসে ওঠে, অথচ সেই কায়সার-কালামদের বিপক্ষে গিয়ে এই সরকারের আমলে রাজনীতিতে উত্থান বিরুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শহীদ বাদলের মত একজন রাজপথের নেতা! যা নিয়ে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ।

গত ১৬ আগস্ট সাদিপুুর ইউনিয়নের একটি জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবু জাফর চৌধুরী বিরু এক সময় জামায়েত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। একই সঙ্গে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এও বলেছেন, বিরুর এক ভাই বিএনপির যুবদলের পদধারী একজন নেতা। এ ছাড়াও আরো নানা অভিযোগ তুলেন তিনি।

২০ আগস্ট জামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের এক দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শহীদ বাদল বলেছেন, সোনারগাঁও পৌরসভার একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাংচুর করা হয়েছে। বিষয়টি ডা. বিরু আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে। সেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কেউ যদি উদ্ধ্যত্ত হাত ওঠাতে চায়, সেই হাত জনগণ প্রতিহত করবে। ওরা বাংলার মাটিতে থাকতে পারেনা। ওরা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, ওরা ৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তাই ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীর প্যান্ডেল ভাংচুুর করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যেই মাটিতে হাসনাত ভাইয়ের জন্ম, যে মাটিতে বিরুর মা মনোয়ারা চৌধুরীর জন্ম, যেই বিরুকে নিয়ে গর্ব করি, কায়সারকে নিয়ে গর্ব করি, এই দুই বীর সন্তান ওদেরকে খুজে বের করবে যারা ভাংচুর করেছে। যদি না পারেন তাহলে আমরা খুজে বের করবো। টাকা খাইছেন? কত টাকা খাইছেন? লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার টাকা পাইয়া আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হইয়া শক্তি বেড়ে গেছে? বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের প্যান্ডেল ভাঙ্গছেন? হাত পুইড়া ফেলাবো, হাত খুইলা নিয়ে আসবে জনগণ। ঘাত প্রতিঘাত হবে, বড় বড় কথা সাবধানে বলুন। স্টপ ইউর মাউথ, খুব সাবধান। আমি ধর্য্য ধরলাম। যত বড় মুখ না তত বড় কথা। ময়মনসিংহ কলেজে তার লেখাপড়ার সময়ের বীরু ভাই সম্পর্কে মির্জা আজম ভাইয়ের কাছে বলা হয়েছিল। সভাপতি হাই, সামসুল ইসলাম ভাই আমাদের সামনে ময়মনসিংহের মোয়াজ্জেম ভাইয়ের কাছে বিরু ভাই সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। মোয়াজ্জেম ভাই বলেছেন, যে কর্মী আমার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর রণাঙ্গনের সৈনিক তাকে নিয়ে কথা বলা হলে আমি সহ্য করবো না।’

এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ডা. বিরু ছাত্রশিবির করতো, যদি সত্যি হয় তাহলে সে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলো কিভাবে?

১৮ আগস্ট বুধবার মহানগরীর বাবুরাইলে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছেন জিএম আরাফাত। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

তবে জিএম আরাফাতের দেয়া ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি কাউকে খুঁশি করতে কিংবা কারো বিরুদ্ধে কথাটা বলিনি এবং আমি জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছি তিনি যদি শিবির করে থাকেন তাহলে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হলেন কিভাবে? এটা আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়।

জিএম আরাফাত বলেন, আরো একটি বিষয় হলো অনেকেই দীর্ঘদিন রাজপথে ঘাম ঝড়িয়ে, বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে হামলা মামলা নির্যাতন, দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকারের পরেও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হতে পারেনা। কিন্তু এই সরকারের আমলে হুট করে রাজনীতিতে এসেই অনেকেই কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কেউ আগে সরকারি চাকুরী করতো, দুর্নীতি মামলায় জেল খেটেছে, এমন সব ব্যক্তিরা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদ পায় কিভাবে? এই বিষয়টি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। কারন এসব চলতে থাকলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের কি হবে?