‘বিরু ছাত্রশিবির করতো, তাহলে জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক হলো কিভাবে?’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু ময়মনমিংহ মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করাকালে জামায়েত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।

মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ডা. বিরু ছাত্রশিবির করতো, যদি সত্যি হয় তাহলে সে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলো কিভাবে?

১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৮ আগস্ট বুধবার দুপুরে মহানগরীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলের উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছেন জিএম আরাফাত।  এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

তবে জিএম আরাফাতের দেয়া ওই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমি কাউকে খুঁশি করতে কিংবা কারো বিরুদ্ধে কথাটা বলিনি এবং আমি জেলা পরিষদের সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোস্তফিজুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের বরাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছি তিনি যদি শিবির করে থাকেন তাহলে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হলেন কিভাবে? এটা আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়।

জিএম আরাফাত বলেন, আরো একটি বিষয় হলো অনেকেই দীর্ঘদিন রাজপথে ঘাম ঝড়িয়ে, বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে হামলা মামলা নির্যাতন, দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকারের পরেও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হতে পারেনা।  কিন্তু এই সরকারের আমলে হুট করে রাজনীতিতে এসেই অনেকেই কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কেউ আগে সরকারি চাকুরী করতো, দুর্নীতি মামলায় জেল খেটেছে, এমন সব ব্যক্তিরা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদ পায় কিভাবে? এই বিষয়টি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। কারন এসব চলতে থাকলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের কি হবে?

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৬ আগস্ট সোনারগাঁয়ের জাতীয় শোক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু এক সময় জামায়েত ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো বলে অভিযোগ তুলেছেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।  একই সঙ্গে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।  এও বলেছেন, বিরুর এক ভাই বিএনপির যুবদলের পদধারী একজন নেতা। এ ছাড়াও আরো নানা অভিযোগ তুলেন তিনি।

১৬ আগস্ট সোমবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলা সাদিপুর ইউনিয়নে কাজরদি এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিস্ফোরক এই তথ্য জানান মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।

তিনি ওই আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ডাক্তার বিরুর আমলনামা হচ্ছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী।  উনি ছাত্র জীবনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার সময় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো।  তার পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেন, তিনি সোনারগাঁয়ের রাজাকার এসএম সোলায়মানের সহযোগী ছিলেন।  বিরুর আরেক ভাই লিটন চৌধুরী জামপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি।

ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।

বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর দলে কাউয়া হাইব্রিড শ্রেণির লোকজনদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে সেই বিষয়টি ইঙ্গিত করে ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, যিনি বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়েছিলেন।

কায়সার হাসনাত বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিলেন, আজকে তাদের প্রতিফলনে, তাদের আত্মত্যাগের কারণে আজকে আওয়ামীলীগ এ পর্যায়ে।  আজকে দেশ প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন হচ্ছে।  আজকে এই মঞ্চে যারা উপস্থিত আছেন তারা দলের দুঃসময়ে বিভিন্ন মামলা হামলার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত এসেছেন।  কিন্তু ২০০৮ সালের পরে অনেকেই আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছে।  তারা সুবিধা নেওয়ার জন্য, তারা চায় চেয়ার দখল করার জন্য।  কিন্তু দলের দুঃসময়ে তাদেরকে পাওয়া যাবে না।  তাই এখন থেকে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নে দোয়া মাহফিল পূর্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন তিনি।

ওই সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট নিহত সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান মেম্বার, সনমান্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন সাবু, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন রবিন।

সাহাবুদ্দিন মেম্বার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাদিপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ওবাদুল্লাহ্ বাদল, মোশাররফ, আবু সিদ্দিক সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।