নারায়ণগঞ্জ ডিসি কার্যালয়ে পুলিশের মারধরের শিকার নারী আইনজীবী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পুলিশের এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মারধরের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) যিনি একজন নারী আইনজীবী। ১৩ মার্চ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ এডিএম জ্যোতিকা যুথি সরকারের কক্ষে একটি মামলার বিষয়ে শুনানি করতে গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা এই মারধরের শিকার হন নারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। তবে ওই সময় এডিএম তার কক্ষে ছিলেন না। তার সহকারী আবদুর রহমান দাবি করেছেন ওই সময় এডিএমের কক্ষে কেউ ছিল না। আমি কাউকে মারধর করতে দেখিনি। এ রিপোর্ট লেখার সময় জানাগেছে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জাসমিন আহমেদ।

জানাগেছে, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নকিবের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের সার্কেল অফিসার। আর স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি। গত ৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্বামী আবু নকিবের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেন অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। ওই মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ এডিএমকে দায়িত্ব দেন।

আহত জাসমিন আহমেদ দাবি করেন- বুধবার দুপুরে এডিএমের কক্ষে অন্য একটি মামলার বিষয়ে যান জাসমিন আহমেদ। সেখানে গিয়ে দেখেন স্বামী আবু নকিব বসা অবস্থায়। জাসমিন আহমেদ দাবি করেছেন তাকে দেখেই তার স্বামী আবু নকিব মারধর করেছে এবং তাকে হত্যা চেষ্টায় তার গলা চেপে ধরেছে। এডিএমের সহকারী আবদুর রহমানের সঙ্গে আবু নকিব কথা বলছিলেন বলেও অভিযোগ করেন নারী আইনজীবী। তিনি আরও অভিযোগ করেন-মামলার বিষয়ে তদবির করতে, সত্য ঘটনাকে প্রভাবিত করে ভিন্ন দিকে নিতে এবং তদন্তে প্রভাবিত করতে এডিএমের কার্যালয়ে এসেছিল নকিব।’

তবে এ বিষয়ে এডিএমের সহকারী আবদুর রহমান বলেন, আজকে কাউকেই মামলার বিষয়ে তদন্তকে ঢাকা হয়নি। ওই ভদ্র লোক এখানে এসে বলেছেন তিনি এডিএম স্যারের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। তাই তাকে বসতে দিয়েছিলাম। আমি ওই ভদ্রলোককে বসতে দিয়ে কাজে বাহিরে বের হই। একটু পরেই ওই নারী আইনজীবী চিৎকার করতে থাকেন তাকে মারধর করা হচ্ছে বলে। ওই ভদ্রলোক পরে দ্রুত বের হয়ে যান। তবে মারধরের বিষয়টি আমি দেখিনি। তবে এ বিষয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে জানাগেছে, ওই মামলায় জাসমিনের স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা আবু নকিবকে প্রধান আসামি করা হয়। নকিব ছাড়াও নকিবের ভাই মো: নাছের নিপুণ, বোন জুবরিয়া বেগম, অপর ভাই মো: আবু নোমান সজন ও ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন আক্তার হিরাকে আসামি করেন জাসমিন আহমেদ।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সন্তানদানে অক্ষম জেনেও জাসমিন আহমেদের সঙ্গে ২০০৭ সালের ১৪ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মো: নকিব। বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার উপর অত্যাচার করতে থাকেন স্বামী।

দাবি করা হয়- নিজ বিবাহজীবন সুখে-শান্তিতে কাটানোর জন্য স্বামীকে ১২লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার, ১টি মোটরসাইকেল ও ঢাকায় জমি কেনার জন্য নগদ ৫০ লাখ টাকা দেন জাসমিন।

মামলায় আরো দাবি করা হয়- জাসমিনের স্বামী নকিব সম্প্রতি চালচলন পরিবর্তন করে উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইসলামের অনেক অপব্যাখ্যা দিয়ে জাসমিনকে তার দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রায়ই জাসমিনকে হত্যার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল থেকে একবার ফেলে দিয়ে, আরেকবার ঘুমের মধ্যে গলাটিপে ধরে এবং বালিশচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল।

মামলা দায়েরের পর জাসমিন আহমেদ বলেছিলেন, আমাকে না জানিয়ে আরো দুটি বিয়ে করেছে নকিব। পরে জাসমিন আহমেদের খোঁজ-খবর নেয়া বন্ধ করে দেন। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাসমিনের সঙ্গে দেখা করেন নকিব। সে সময় মারধর করে নগদ ৫ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দলিল ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে চলে যান।