সেলিম ওসমানের সমর্থনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী: গোগনগর ইউনিয়নে মুখোমুখী হাই-বাদল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়ে মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল।  এ নিয়ে সদর থানা আওয়ামীলীগ ও গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।  একই সঙ্গে স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমানের সমর্থনকে তোয়াক্কা না করে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন শহীদ বাদল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী।  ১০ নভেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার নূর হোসেন।

এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি গোগনগর সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম উদ্বোধন ও মতবিনিময় সভায় আগামী নির্বাচনে গোগনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জসিম উদ্দীনকে সমর্থন ঘোষণা করেন এমপি একেএম সেলিম ওসমান।  ওই সময় মঞ্চে উপস্থিত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাইকে উদ্দেশ্য করে সেলিম ওসমান জসিম উদ্দীনকে নৌকা প্রতীক দেয়ার অনুরোধ রাখেন।   ওই সময় আব্দুল হাই দাঁড়িয়ে গোগনগর ইউনিয়নের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখান থেকে তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন।   আপনারা জসিম উদ্দীনের নামটি এক নম্বরে রেখে পাঠাবেন।

তখন সেলিম ওসমান বলেন, ‘নৌকা দেন বা না দেন, আমরা এখানে জাতীয়পার্টির কোনো প্রার্থী দিব না।  আমরা জসিম উদ্দীনকে সমর্থন দিলাম।’ তবে এখানে উল্লেখ্যযে, গত নির্বাচনে জসিম উদ্দীন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে নওশেদ আলীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।  ওই নির্বাচনে সেলিম ওসমান নওশেদ আলীর পক্ষেই ছিলেন।

এমপি সেলিম ওসমানের এমন সমর্থন ঘোষণার পর নিজেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রচারনায় নামেন নওশেদ আলীর ভাই ব্যবসায়ী ফজর আলী।  বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও প্রধানমন্ত্রী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে গত ৫ জুন গোগনগর তাজেক প্রধান স্কুলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজর আলী।  ওই সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি শহীদ বাদল।  এই অনুষ্ঠানে সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাজির প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ১৯ জুন শনিবার সৈয়দপুুুর এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দীনের আয়োজনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সুস্থ্যতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়।  যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই।  ওই অনুুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আব্দুল হাই তার বেশির ভাগ বক্তব্য ছিল নির্বাচন কেন্দ্রীক।  তিনি সেদিন অনেকটা ফজর আলীকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন, নৌকার মনোনয়ন কিনে আনার মত টাকা কারো হয়নি।  নৌকা প্রতীক দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জসিম উদ্দীনের এই কর্মসূচিকে কাউন্টার দিতে ২১ জুন সোমবার ফজর আলীর বাড়িতে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন নিয়ে প্রস্তুতি সভা করার সিদ্ধান্ত নেয় সদর থানা আওয়ামীলীগ।  মুলত প্রস্তুতি সভার আদলে ফজর আলীকে শক্ত অবস্থানে নেয়ার চেষ্টা ছিল।  কিন্তু সদর থানা আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাদের বিরোধীতার কারনে ফজর আলীর বাড়িতে আর সেই প্র্রস্তুতি সভাটি বাতিল করা হয়।  এই সভাটির পেছনে জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতাদের স্বদিচ্ছা ছিল বলেও জানাগেল।

যদিও এর আগে ১২ জুন গোগনগর মসিনাবন্দ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানের ছবি লাগিয়ে নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেছেন ফজর আলী।  ওই কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমানের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির পায়তারা করছেন ফজর আলী।  কারন সেলিম ওসমান আগেই জসিম উদ্দীনকে সমর্থন ঘোষণা করেছেন।  কিন্তু ফজর আলী শামীম ওসমানের ছবি লাগিয়ে কর্মসূচি পালন এবং শহীদ বাদলকে নিয়ে কর্মসূূচি পালন করাটা সেলিম ওসমানের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুুলী দেখানোর সামিল।  যেখানে সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ফজর আলীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে।  এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।