যে যুবলীগ নেতার বৃদ্ধ বাবা-মা খাটলেন জেল: খবরও নেয়নি চাচা ভাতিজা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

ছেলে যুবলীগ সভাপতি। নির্বাচনে কাজ করছিলেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কায়সার হাসনাতের পক্ষে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবা ও ষাটোর্ধ্ব মাকে জেল খাটতে হলো। ছোট বোন ও ছোট ভাই সহ পুলিশ ধরে নিয়ে গেল যুবলীগ নেতার পরিবারের ৫ জনকে। দেয়া হলো গাঁজা উদ্ধারের মামলা! অথচ যাদের পিছনে রাজনীতি করায় একটি অসহায় পরিবারকে এমন করুণ দশা বহন করতে হয়েছে সেই চাচা মোশারফ হোসেন ও ভাতিজা কায়সার হাসনাত সেই পরিবারটির খবরও নেয়নি।

নেতাকর্মীরাও জানিয়েছেন, শুধু তাই নয় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের পাশে দাড়ায়নি। এমনকি নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের নিয়ে কোন ধরনের বৈঠকও করেননি। এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আসছে তাই আবারো নেতাকর্মীদের ব্যবহার করার সময় তাদের হয়েছে। হাসনাত পরিরার মনে করে সোনারগাঁয়ের মানুষ তাদের ভয়ে তাদের পক্ষে রাজনীতি করবে। কিন্তু সেই দিন এখন শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা নেতাকর্মীই পাচ্ছেন না। স্থানীয় যেসব জনপ্রতিনিধি নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তারাও এখন নৌকার প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে নেই। তারা সমর্থন দিয়েছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামকে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা এইচএম মারুফ ওমর এক স্ট্যাটাজে বলেছেন, হাসনাত পরিবারের রাজনীতি করতে সোনারগাঁবাসী ভয় পায়।’

জানাগেছে, সোনারগাঁও কাচপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহাবুব পারভেজ গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সিংহ প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। যে কারনে তার বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা, ছোট ভাই ও ছোট বোনকে পুলিশ ধরে নিয়ে মাদকের মামলায় চালান দেয়। ওই সময় তিনি দাবি করেছিলেন মুলত মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকে লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে নির্বাচনে কাজ না করার কারনেই তাদের পুুলিশ তাদের আটক করে মাদকের মামলায় চালান করে দেয়। ওই সময় তাকে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন। তিনি কাজ করেছিলেন সিংহ প্রতীকে কায়সার হাসনাতের পক্ষে।

বিস্ময়ের বিষয় হলো- যুবলীগ সভাপতি মাহাবুব পারভেজের বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা ও ভাই বোন সহ ৫ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও তার বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মাকে দেখতে তার বাসায় আসা তো দুরের কথা কিংবা সামান্য সহযোগীতা তো দুরের কথা তার পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেননি কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেন। এমনকি ফোন করেও জানতে চাওয়া হয়নি তাদের মামলায় জামিন হয়েছে কিনা কিংবা মৌখিকভাবে সাহসটুকুও ওই যুবলীগ সভাপতিকে দেয়া হয়নি। কিন্তু এখনও বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় আসামী হলে তাদের নেতারা আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন, মামলায় জামিনটাও করিয়ে দেন। অথচ তারা সরকারি দলের নেতা হয়েও নির্যাতিত হয়রানির শিকার যুবলীগ নেতার পরিবারের প্রতি সহানুভুতিটাও দেখায়নি মোশারফ হোসেন ও কায়সার হাসনাত।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কথা হয় কাচপুুর যুবলীগ সভাপতি মাহাবুব পারভেজের সঙ্গে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আদালতপাড়ায় কেন আসছেন? তিনি বলেন, নির্বাচনের ওই মামলায় জামিনের পর কিছু কাজ আর হাজিরা দিতে হচ্ছে।’ আপনার পরিবারের ৫ জন মানুষকে পুুলিশ ধরে নিয়ে গেল যেখানে আপনার বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা ও ভাই বোন। তো আপনার নেতা কায়সার হাসনাত কোন সহযোগীতা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অনেকটা স্তব্ধ হয়ে নিচু স্বরে বলেন, ভাই রাজনীতিটা করি কায়সার হাসনাতকে ভালবেসে। আমার পরিবারের উপর এমন একটা দকল গেল অন্তত ফোন করেও জানতে চাননি জামিন করিয়েছি কিনা বা আমি পাশে আছি এই কথাটুকু বলেও সাহসটা দিলেন না আমার নেতা। নির্বাচনের আগে হয়তো কায়সার ভাই ঢাকায়। কিন্তু মোশারফ হোসেন সাহেব তো আমার বাড়িতে আসতে পারতো। তিনিও আসেননি। খবরও নেননি।’

তিনি আরও বলেন, এখন মানুষ যখন জানতে চায় কিরে তোর নেতা কায়সার হাসনাত তোর পরিবারের লোকজনকে তো দেখতে আসলো না? কোন সহযোগীতা করছে নি? আমি তো এসবের উত্তর দিতে পারিনা। আমি কোন সহযোগীতা আশা করিনা। অন্তত ফোন করে সাহসটুকু দিবেন সেটা আশা করেছিলাম। এলাকার মানুষ যখন বলে কার সাথে রাজনীতি করোস এমন বিপদে খোজ খবরও নিল না, তখন তো মুখ দেখাতে লজ্জা পাই। কারন যারা লাঙ্গল প্রতীকে কাজ করেছিল তারাই তো লজ্জা দেয়।’

তিনি বলেন, শুধুমাত্র সিংহ প্রতীকের পক্ষে রাজনীতি করার কারনেই আমার বাবা মা ভাই বোনকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ। আমাকে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছিল আমি করিনি। সে কারনেই আমার পরিবারের উপর নির্যাতন করা হলো। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এখন তো খুব হিসেব নিকেষ করেই রাজনীতি করতে হবে। যেখানে বিপদে পড়লে সাহসটুকুও নেতারা দেয়না সেখানে রাজনীতি করতে হলে তো হিসেব করেই এগুতে হবে।’

জানাগেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সমর্থকের মাহবুব পারভেজের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দূর্ব্যবহার করে। পরে পুলিশ মাহবুব পারভেজের বাবা ৬০ বছরের বৃদ্ধ আওয়ামীলীগ নেতা হাজী আব্দুল বারেক, তার মা মমতাজ বেগম (৫৫), ছোট ভাই শাহাদাৎ (২৮), বোন শামীমা আক্তারকে (২৪) ও যুবলীগ কর্মী খোকনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ওইদিন কাঁচপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুব পারভেজ সাংবাদিকদের মুঠো দাবি করেছিলেন- সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে ২৬ ডিসেম্বর রাত সোয়া ৩টার দিকে কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকায় তার বাড়িতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে অভিযান চালায়। পরে মাহবুব পারভেজকে বাসায় না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতার সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করে। বাড়ির সকলের সাথে দূর্ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সেলিম মিয়া তার মোবাইল ফোনে কথা বলে মাহবুবের বৃদ্ধ বাবা আওয়ামীলীগ নেতা হাজী আব্দুল বারেক, মাতা-ভাই-বোনসহ ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের বাড়ি থেকে গাজাঁ উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দেয় পুলিশ।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান কালাম ছিলেন লাঙ্গলের পক্ষে। সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তার পক্ষে কাজ করেছিলেন মোশারফ হোসেন। ৩১ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন কালাম যার পিছনে এমপি খোকার সমর্থন।