করোনার ২য় ধাপ মোকাবেলায় মাঠে সোনারগাঁয়ে সেই ‌’হাতেম তাঈ’ ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

প্রায় বছর খানিক পর বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি শিথিল হলেও আবারো দ্বিতীয় ধাপে বেড়ে ওঠেছে করোনা ভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে আবারো সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমজনতার মাঠে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।

যিনি গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ছিলেন সম্মুখযোদ্ধা। নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা, এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা, ত্রাণ বিতরণে হট লাইন চালু, রাতের আধারে এমপি নিজের হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে ছুটে যাওয়া, ঘরে ঘরে অসহায় মানুষের খোঁজ খবর রাখা এবং স্বেচ্ছাসেবী টিমের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের ব্যবস্থা সহ নাান উদ্যোগ নিয়েছিলেন এমপি খোকা। যে কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষ কেউ কেউ তাকে মাবনতার ফেরিওয়ালী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, কেউ বলছেন করোনাযোদ্ধা, আবার রাতের আধারে গরীবের ঘরে খাদ্য সামগ্রী নিজ হাতে বিতরণের কারনে এমপি খোকাকে হাতেম তাঈয়ের সাথে তুলনা করেছেন।

জানাগেছে, হঠাৎ করে করোনার প্রাদুভার্ব বেড়ে যাওয়ায় আবারও মাঠে নেমেছেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।

২ মার্চ শুক্রবার বিকেলে থেকে সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় ও জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ মাস্ক বিতরণ শুরু করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে এমপি খোকা বলেন, এক বছর ধরে সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দৃঢ়তার সাথে তা মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক এই দুর্বিপাকে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করছে আমার সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও ছড়িয়ে পড়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা। তাই আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর প্রকোপ মোকাবেলায় উজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মাস্ক বিতরণ ও জনসচেতনতামূলক প্রচারনা করা হয়।

এসময় যাদের মুখে মাস্ক ছিল না তাদেরকে মাস্ক পরিয়ে দেয়াসহ সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে নিজ ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে জনসাধারণকে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান এমপি খোকা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল, জাতীয় পার্টি নেতা লিয়াকত আলী, পিরোজপুর ইউপি সেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি আলমগীর হোসেন, জাতীয় পার্টি নেতা সহিদ, ৯নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ রাসেল, আওয়ামী লীগ নেতা হিরু প্রমূখ।

স্থানীয়রা বলছেন, হাতেম আল তাঈ বা হাতেম তাঈ-এর পূর্ণ নাম হাতেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ আত তাঈ। তিনি বিখ্যাত মূলত: তার মহানুভবতা ও দানশীলতার জন্যে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও প্রাচীন ভারতবর্ষে তিনি অতিসুপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। খ্রিষ্টান এই আরব ব্যক্তিটি ছিলেন তাঈ গোত্রের লোক। এই গোত্রটি আরব উপদ্বীপের মধ্যভাগে হাইলে বসবাস করত।

হাতেম তাঈ এর দানশীলতার কথা সারা প্রাচ্যের লোক সুবিদিত ছিল। এখন পর্যন্ত তিনি তার চরম মহত্ব ও দানশীলতার জন্যে আরবদের মাঝে আইকন হয়ে রয়েছেন। তার নামে একটা প্রবাদ বাক্যই প্রচলিত রয়েছে- ‘হাতেম এর চেয়েও মহানুভব!!’-কারও দানশীলতার পরিমাপে মানুষ এটি ব্যবহার করে।

হাতেম বাল্যকালেই তার পিতাকে হারিয়েছিলেন। ফলে তিনি তার পিতামহের কাছে মানুষ হন। কথিত আছে, তার মাতা গুনাইয়া বিনতে আফিফ তাঈও অতি দয়ালু ছিলেন। আর সম্ভবত: হাতেম তার মাতার নিকট থেকেই দানশীলতার এই গুণটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, হাতেমের দানশীলতার কারণেই তার পিতামহের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তার পিতামহ দান করাকে অপচয় হিসেবে মূল্যায়ণ করতেন। আর এ কারণেই তিনি একসময় হাতেমকে পরিত্যাগ করেছিলেন। যে হাতেম তাঈ রাতের আধারে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতেন বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে যেতেন। নিজের পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশে তিনি ত্রাণ বিতরণ করছেন।

গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে সেই হাতেম তাঈয়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সোনারগাঁয়ের কোন মানুষ না খেয়ে মরবেন না। প্রতিদিন রাতে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেিছিলেন। মুলত যেসব মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে বাহিরে এসে ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারছেন না তাদের ঘরেও পৌছে দেন ত্রাণ।

স্থানীয়রা আরও বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের ফলে সমাজের শ্রমজীবি ও নিম্ম আয়ের লোকগুলো পড়ে যায় বিপাকে। যানবাহন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখার ফলে বেকার হয়ে পড়েছিল অসংখ্য মানুষ। এতে দেখা দেয় খাদ্যভাব। সোনারগাঁয়ে একটি লোকও খাবারে মারে যাবে না সেজন্য সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার উদ্যোগে নেয়া হয়।

সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার কোন না কোন এলাকায় তার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত ছিল। গত বছরের ৩০ মার্চ সোমবার তিনি মোগরাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাবিবপুর ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাবার পৌচ্ছে দিতে উপস্থিত হন তাদের বাড়িতে। রাতের আধারে তিনি ওই এলাকার প্রতিটি নিম্ন আয় ও শ্রমজীবি মানুষের হাতে খাবার তুলে দেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করে খাবার সংগ্রহের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেন।