কমিটিতে চাচা-ভাতিজা, নাই কালাম: সন্দেহে তাদের ঐক্য!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি পূণর্বিন্যাস করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। ২২ মার্চ সোমবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত এক প্যাডে এই কমিটির অনুুমোদন দেন।

কমিটিতে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি সান নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই।

কমিটির গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেছেন, ১৩ নম্বরে যে মাহবুব হোসেন সরকার নামটি রয়েছে সে বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখেছি। কারন সোনারগাঁয়ে মাহবুব সরকার নামে বেশকজন আমাদের আওয়ামীলীগের নেতা রয়েছেন। এটা আমরা পরবর্তীতে নিশ্চিত করবো কাকে রাখা হয়েছে। বাকি পদগুলো ঠিক আছে।

কমিটি গঠনের পর নেতাকর্মীরা বলছেন, সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্যতম কায়সার হাসনাত ও মাহফুজুর রহমান কালাম। কায়সার হাসনাত এমপি থাকাকালীন সময়ে বেশ সুম্পর্ক ছিল তাদের। পরবর্তী রাজনীতিতে তাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে বেশ হোচট খান এই প্রভাবশালী নেতা।

ওই আহ্বায়ক কমিটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। ওই কমিটি গঠনের পর তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক মঞ্চে ওঠে রাজনীতিও করেছেন। সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ যোগাযোগটা ভাল কালামের। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি পূণর্বিন্যাসে কায়সার হাসনাত, তার চাচা মোশারফ হোসেন, আরেক চাচাতো চাচা আরিফ মাসুদ বাবুর ঠাই হলেও মাহফুজুর রহমান কালামকে রাখা হয়নি। তবে কালামের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে রাখা হলেও কালামের বিশাল কর্মী বাহিনী তৃপ্তি পাচ্ছেনা তাতে।

ফলে রাজনৈতিক মহলে প্র্শ্ন দেখা দিয়েছে- এমন পরিস্থিতিতেও কি বর্তমান নতুন কমিটিকে বৈধ কমিটি হিসেবে দাবি করছেন কায়সার ও মোশারফ? কিংবা কালাম? নাকি কালামকে ফেলেই আহ্বায়ক কমিটিতে জায়গা করে নিলেন কায়সার ও মোশারফ? এখন কি কালামের জন্য কায়সার ও মোশারফ আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখান করে দাবি করবেন এই কমিটিও অবৈধ? যদি তারা এই কমিটি মেনে নেয় তাহলে আবারো কালামের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে যাচ্ছে হাসনাত পরিবারের। এমনটাই সামনে চলে আসছে।

এই কমিটি গঠনের পর কায়সার হাসনাত ও কালামের অনুগামী অনেক নেতাকর্মীদের মাঝে তাদের ঐক্য নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তারা কি ভেতরগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন নাকি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন? এমনটা নিয়ে বিশ্বাস অবিশ্বাস এখন দুই পক্ষের কর্মীদের মাঝে। এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে আবারো নতুন করে মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন কর্মীরা।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির বিরোধীতা করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ বেশকজন নেতা। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিকেই চূড়ান্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।

ওই কমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।

এদিকে নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার পর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কায়সার হাসনাত এবং পরবর্তী যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নাম রাখা হয়েছে। বাকিরা সবাই সদস্য।

বাকি সদস্যরা হলেন- ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, শামসুদ্দীন খাঁন আবু, বাবুল ওমর, আরিফ মাসুদ বাবু, মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু, মোহাম্মদ আলী হায়দার, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, মোঃ জহিরুল হক, মাহবুব হোসেন সরকার, অ্যাডভোকেট আবু তাহের ফজলে রাব্বী, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, লায়ন মোঃ মাহাবুর রহমান বাবুল, মোঃ মাহাবুর রহমান লিটন ও গাজী মজিবুর রহমান।