আজাদ বিশ্বাস বিএনপির ‘ত্যাগী নেতা’ বললেন মামুন মাহামুদ!

ছবি- ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ফতুুল্লায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত শামীম ওসমানের সমাবেশে মন্ত্রী ও এমপিদের সঙ্গে অাজাদ বিশ্বাস ও মনিরুল আলম সেন্টু্। ইতিমধ্যে সেন্টুকে বহিস্কার করেছে বিএনপি।

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সেক্রেটারির পদে থেকে সে আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সরকারি দলের এমপি ও মন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন এবং ওই সময় বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্ধি। আর ওই মঞ্চে ওঠে যখন আজাদ বিশ্বাস বলেন‘ এমপি শামীম ওসমান আমার নেতা। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ সেই আজাদ বিশ্বাসই নাকি বিএনপির ত্যাগী নেতা দাবি করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমের পদত্যাগ নাটকটি আরো স্পষ্ট করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। তিনি ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’ কে বলেন, মুহাম্মদ শাহআলম জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি দল ছাড়েননি এবং তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা সেটা আমরা জানি না। যতদিন পর্যন্ত দলের প্রাথমিক সদস্য পদে তিনি বহাল থাকবেন ততদিন তিনি দলেই আছেন।’

৩ মার্চ রবিবার এক সাক্ষাতে অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, যেহেতু সভাপতি মুহাম্মদ শাহআলম পদত্যাগ করেছেন। তাই কোন সাংগঠনিক এলাকা নেতৃত্ব শূণ্য থাকতে পারেনা। তাই আমরা সক্রিয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়েই কমিটি গঠন করেছি।’

কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির আহ্বায়ক সফর আলী ভুইয়া নিষ্ক্রিয় এবং ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধান মারা গেছেন, সেখানে আপনি সদস্য সচিব পদে আছেন। তাহলে সেখানেও তো নেতৃত্ব শূন্য সেখানে কেন কমিটি গঠন করলেন না জানতে চাই অধ্যাপক মামুন মাহামুদ বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছি যেটা শাহআলম সাহেব পদত্যাগের পর ফতুল্লায় থানায় আমার মত কেউ নাই। যে কারনে ফতুল্লায় কমিটি গঠন করতে হয়েছে।’

ফতুল্লা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন এবং নেতাকর্মীদের কাছে বিতর্কিত এমন বিষয়ে অধ্যাপক মামুন মাহামুদ বলেন, দল মনে করেনা আজাদ বিশ্বাস বিতর্কিত। আজাদ বিশ্বাস বিতকির্ত হলে তো তাকে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা বিএনপির কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখতেন না। আমরা রাজনীতিতে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়েই ফতুল্লা থানায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি। কোন বলয় বা ব্যক্তির লোক হিসেবে কমিটি গঠন করিনি।’

নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজপথের আন্দোলন তো দুরের কথা শাহআলম ও আজাদ বিশ্বাস কখনও বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতেও ছিলেন না। আজাদ বিশ্বাস ছিলেন সরকারি দলের কর্মকান্ডেই বেশি। গত ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ডিএনপি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত এমপি শামীম ওসমানের জনসভায় মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন আজাদ বিশ্বাস। ওই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ এর আগে আরেক অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা আর কেউ নাই।’ শামীম ওসমানকে আজাদ বিশ্বাস নিজের নেতা হিসেবে দাবি করার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা সেই হিসেবে দাবি করে আসছেন আজাদ বিশ্বাস শামীম ওসমানের কর্মী। যা আজাদ বিশ্বাস নিজেই স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও বন্দরের শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ বসের ঘটনায় মহাজোটের এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদের পক্ষেও মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। কিন্তু তার দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিনি জোড়ালোভাবে থাকেন না। জেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোপীনাথ দাস বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিলেও মুচকি হেসেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই সময়কার জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই বিষয়টি মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও বিএনপি নেতা হয়ে প্রতিবাদ করেননি আজাদ বিশ্বাস।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দেন আজাদ বিশ্বাস। যে কারনে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় এক অনুষ্ঠানে মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া তখন আজাদ বিশ্বাসের সামনেই বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল।’ তার পর থেকে নেতাকর্মীরা আজাদ বিশ্বাসকে আওয়ামীলীগের দালাল হিসেবে কটুক্তি করে আসছেন। একাধিকবার দলীয়ভাবে শোকজও খেয়েছিল আজাদ বিশ্বাস।

এদিকে জানাগেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় শিল্পপতি শাহআলম স্বীকার করেন তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। যা জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর একদিন পর ফতুল্লায় থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটির সকল নেতারাই শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। এতে আহ্বায়ক করা হয় আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে যিনি সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন নিয়মিত।

জানাগেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির অনুমোদিত ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে কমিটিতে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। আজাদ বিশ্বাস বর্তমানে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সেক্রেটারি পদে ছিলেন। নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।

কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মোঃ আব্বাস উদ্দিন বাবলু, এম এ আকবর, মোঃ সুমন আকবর, একরামুল কবির মামুন, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন বারী, আবু তাহের মোল্লা. অ্যাডভোকেট এসএম মাহমুদুল হক আলমগীর, নাদিম হাসান মিঠু, অ্যাডভোকেট আল আমিন সিদ্দিক, আবুল হোসেন, হাবিবুর রহমান রিপন, আমজাদ শিকদার, মন্টু মিয়া মেম্বার, বোরহান উদ্দিন বেপারী।