সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
৪র্থ ধাপে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১ মার্চ শুক্রবার রাতে ওই তিনটি উপজেলা পরিষদে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনটি উপজেলা নিয়েই গঠিত নারায়ণগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসন। ওই তিনটি আসনের বর্তমান তিন এমপির কট্টর বিরোধীদের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে নৌকা প্রতীক। এ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় তিন এমপির সম্পর্ক সাপে নেউলে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই তিন এমপিকে ঠেকাতে প্রকাশ্যে সরাসরি মাঠে ছিলেন তাদেরকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনিত করেছে আওয়ামীলীগ।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বর্তমানে এমপি হিসেবে রয়েছেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন হলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে পুলিশ তার বাড়িতে হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করলে কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী বেশকটি সভায় এমপি খোকার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, এমপি খোকা আপনি হাওয়ার মাঝে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। সোনারগাঁয়ে আপনার কোন ভোট নাই। আপনি বাড়িতে গিয়ে ঘুমান।’ গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিলে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে গেলে এখানে এমপি নির্বাচিত হন খোকা। এ নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। কালাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুইবার নির্বাচনে করে তিনি পরাজিত হয়েছেন।
এদিকে আগেই নেতাকর্মীরা ধারণা করে আসছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ধরাশয়ী খেলেও যদি মোশারফ হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তাহলে সেটা হবে সোনারগাঁয়ে এমপির খোকার রাজনীতি ঝুকি ও রাজনীতিতে হুমকি। এখানকার রাজনীতিতে এবার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন কিংবা উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের। তবে এই দুজনের কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এখানে বেশ রাজনীতিতে বেকায়দায় পড়বেন এমপি খোকা- এমনটা ধারণা ছিল নেতাকর্মীদের। সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে দুজনই পাকাপোক্ত। এদের কেউ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এমপি খোকা তাদের কারো উপরে চেপে বসতে পারবেন না। চলবে না খবরদারীও।
সোনারগাঁয়ের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, একজন এমপির কাজ হলো আইন প্রনয়ণ করা। সেক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের আওতায় থাকে যাবতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়মুলক কাজগুলো। ফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রনে থাকবে বেশির ভাগ কাজ। মোশারফ হোসেন এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এমপি খোকার খবরদারিত্ব থাকবে না। মোট কথা এখানে এমপির ক্ষমতা হ্রাস পাবে। আবার রাজনৈতিকভাবে এমপি খোকার চেয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী মোশারফ হোসেন। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সোনারগাঁয়ে এমপি খোকার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে।
আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কায়সার তার আপন চাচার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের সমর্থন পান কালাম এবং কায়সার হাসনাতের সমর্থন ছাড়াই চাচা মোশারফ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রন নিয়ে চেয়ারম্যান গ্রুপ ও এমপি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমনকি টেন্ডারবাজি নিয়েও সংঘর্ষ হয়। সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরের একটি টেন্ডারবাজি নিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিও ভাংচুরের ঘটনা ঘটনায়। ওই সময় কায়সার হাসনাতের পাশে ছিলেন কালাম। মোশারফ হোসেনের কারনে অনেকটা কোণঠাসা থেকে কালামই তখন কায়সার হাসনাতকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।