বন্ধু শিপলুর কর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদের নাম ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি।

এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সদস্য হা-মীম শিকদার শিপলু। গত নির্বাচনে শিপলুর পক্ষে কাজ করেছিলেন আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদ। তবে নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার পর শিপলুর নানা কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ইউনিয়নের লোকজন। আশরাফুল ও শিপলু চেয়ারম্যান দুজনের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। যে কারনে শিপলুকে চেয়ারম্যান বানানোটা আশরাফুলের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। সেজন্য তিনি জামপুর ইউনিয়নবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

ঘোষণার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদ বলেন, আমি নেতা হতে আসিনি, আমি চেয়ারম্যান হতে আসিনি, অর্থের জন্য আসিনি, ক্ষমতার জন্য আসিনি, আমি এসেছি কারো সন্তান হতে, কারো ভাই বন্ধু হতে, আমাকে যদি আপনারা চেয়ারম্যান নির্বাচিতও করেন, তখনও আপনারা আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে ডাকবেন না। আমাকে সন্তান, ভাই বন্ধু হিসেবে ডাকবেন।

গত নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান হা-মীম সিকদার শিপলুর পক্ষে কাজ করাটা নিজের ভুল ছিল দাবি করে আশরাফুল বলেন, আমি গত নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে শিপলুকে চেয়ারম্যান বানিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার অন্যায়। সেজন্য জামপুরবাসী আমাকে ক্ষমা করে দিন।

এর আগে এমপি খোকা তার বক্তব্যে বলেন, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে আমরা ভোটে হারিনি। আমাদের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, এবার আমরা ছিনিয়ে নিতে দিব না। গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন শাহ মোহাম্মদ হানিফ। আমরা তাকে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব করেছি, যা অনেক বড় সম্মানের এবং চেয়ারম্যান থেকে অনেক বড় জায়গা। আমাদের সোনারগাঁয়ে ১০টি ইউনিয়নে ভাল ভাল মানুষগুলোকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।

২ মার্চ মঙ্গলবার জামপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদের নাম ঘোষণা করেন এমপি খোকা। এর আগে প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনেন এবং নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদকেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাবি তুলেন।

মঙ্গলবার বিকেলে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে জামপুর ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির কর্মী সভায় এই প্রার্থী ঘোষণা দেন এমপি। একই সঙ্গে দুজন সংরক্ষিত মেম্বার ও ৬জন মেম্বার প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেন তিনি।

এ ছাড়াও তিনি বলেছেন, আমি গত ৭টি বছর জামপুর ইউনিয়নে অনেক রাস্তা, স্কুল, মসজিদ ব্রিজ , হরিহরদী ব্রীজ সহ ব্যপক উন্নয়ন করেছি। আমি করোনার সময়ে যখন সোনারগাঁওয়ে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামেনি তখন আমি জামপুর সহ পুরো সোনারগাঁয়ে অনেক খাদ্য সামগ্রী নিজ হাতে দিন রাতে বিতরণ করেছি। নেতাকর্মীদের নিয়ে টিম গঠন করে কাজ করেছি। স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে করোনাকালে লাশ দাফন করেছি।

নেতাকর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে এমপি খোকা আশরাফুল ভুঁইয়া মাকসুদের নাম ঘোষণা করে বলেন, সকলের দাবিমতে এবার নির্বাচন করবে আপনাদের জামপুর ইউনিয়ন জাতীয়পার্টির সবাপতি আশরাফুল ভূঁইয়া মাকসুদ। আপনারা তাকে সমর্থন দিলেই হবেনা, তাকে যদি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কা দেই তাহলে তার পক্ষে কাজ করে এবং ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। প্রতি ভোট কেন্দ্র অনুযায়ী কমিটি করতে হবে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জাতীয় পার্টির সবাইকে নিয়ে এখন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বাচনী গণসংযোগ করতে হবে। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। তাদের বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্যের সাথে একজন উন্নয়নকামী চেয়ারম্যান থাকলে ঐ এলাকায় কোন উন্নয়ন কাজ বাকি থাকবে না। কারন এমপির মাধ্যমে কাজগুলো করা হয়। এখন এমপির সঙ্গে যদি চেয়ারম্যানের যোগাযোগ না থাকে তাহলে বরাদ্দ নেয়া হয়না।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের এক নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কতজনের গলাবাজি দেখলাম। কিন্তু করোনাকালে তারা কোথায় ছিল? মানুষের বিপদের সময় তো তাদেরকে দেখলাম না। আমি একটি অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলাম, বলেছিলাম যারা মাদক সেবন করো তোমরা এসব ছেড়ে দেও, প্রয়োজনে আমি তোমাদের চিকিৎসা করাবো। আর যারা মাদক ব্যবসা করো তারা ভাল হয়ে যাও, নতুবা বাড়ি থেকে ধরে এনে পুলিশে দিব। এই কথাটা কি খারাপ বলেছিলাম? কিন্তু আওয়ামীলীগের একজন নেতা ‘ক’ দিয়ে যার নাম, সোনারগাঁয়ের না, বাড়িও কুমিল্লার দিকে, ওই নেতা বক্তৃতা দিলো ‘আমি মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে আনার কে?’

ওই নেতাকে প্রশ্ন রেখে এমপি খোকা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিলে আপনার সমস্যা কোথায়? তাহলে কি বুঝা যায় উনিও মাদক ব্যবসায়ী? এতদিন মাদক ব্যবসায়ীদের কথা বলেছি, এবার মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদারকে খুঁজে বের করবো।

জামপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টি আহ্বায়ক মোঃ আশরাফুল ভূঁইয়া মাকসুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি ও শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল, পৌর জাতীয় পার্টি সভাপতি এমএ জামান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম শফি, কেন্দ্রীয় নেতা আবু তালেব চৌধুরী জিসান, ফজলুল হক, আলীজান মেম্বার, শ্যামল সিকদার, আবুল কালাম, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রেজাউল করিম, মোঃ রমজান, ছগির ভূঁইয়া গ্যালমান মেম্বার, সানাউল্লাহ সানু মেম্বার, বকুল মেম্বার ময়না মেম্বার সহ জামপুর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। ওই সময় শত শত নেতাকর্মী কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন।