বিএনপি ডুবিয়ে পালালেন শাহআলম, আওয়ামীলীগের পথে আজাদ বিশ্বাস!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতিকে ডুবিয়ে রাজনীতি থেকে পালিয়ে গেলেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। একাই যখন বিএনপির বেশকটি পদের মালিক হয়ে বসে ছিলেন তখন ফতুল্লা থানা বিএনপির সক্রিয় নেতারা হয়ে যান নিষ্ক্রিয়। আর ক্ষমতার দাপটে অযোগ্য লোকজনদের বসিয়েছেন দলের বড় পড় পদে। মুলত আওয়ামীলীগের দালাল খ্যাত আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে দিয়ে বিএনপির নিয়ন্ত্রন করাতেন। সেই শাহআলম এখন বিএনপির রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের পর আলোচনায় এখন আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগে যোগ দিতে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন বেশকজন নেতাকর্মী।

শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোহাম্মদ শাহ আলম। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদেও ছিলেন। তবে তার পদত্যাগের বিষয়টি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। পদত্যাগের বিষয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেছেন, স্বাস্থ্যগত কারণে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে পদত্যাগ করেছি।

শাহ আলম আরও বলেন, ‘দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে এসেছিলাম। তবে আমার মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আফিয়া-জালাল ফাউন্ডেশন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জান্নাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আজীবন জনগণের সেবা করে যাব। জনকল্যাণমূলক কাজে দলমত-নির্বিশেষে সকল এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করি।’

নাশকতার মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন গত সেপ্টেম্বরে আমার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ১১টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্প্রতি এই বিষয়ে অবগত হয়ে উচ্চ আদালত থেকে নাশকতার ওই মিথ্যা মামলায় জামিন পেয়েছি।’

নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

তবে নির্বাচনের পর তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির পুরো কমিটি নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন। একই সঙ্গে বিএনপির ঘাটি খ্যাত ফতুল্লা থানার রাজনীতি প্রায় ধ্বংসের পথে নিয়ে যান শাহআলম। থানা বিএনপির সেক্রেটারি করেন তার আত্মীয় আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে যিনি সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। বর্তমানে আজাদ বিশ্বাস জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এর আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই কমিটিতেও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন শাহআলম।

রাজপথের আন্দোলন তো দুরের কথা শাহআলম কখনও বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতেও ছিলেন না। আজাদ বিশ্বাস ছিলেন সরকারি দলের কর্মকান্ডেই বেশি। ডিএনপি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত শামীম ওসমানের জনসভায় মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন আজাদ বিশ্বাস। ওই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ এর আগে আরেক অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা আর কেউ নাই।’

এছাড়াও বন্দরের শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ বসের ঘটনায় মহাজোটের এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদের পক্ষেও মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। কিন্তু তার দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিনি জোড়ালোভাবে থাকেন না। জেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোপীনাথ দাস বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিলেও মুচকি হেসেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই সময়কার জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই বিষয়টি মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও বিএনপি নেতা হয়ে প্রতিবাদ করেননি আজাদ বিশ্বাস।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দেন আজাদ বিশ্বাস। যে কারনে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় এক অনুষ্ঠানে মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া আজাদ বিশ্বাসের সামনেই বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল।’
ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটির নেতাদের নিষেধাজ্ঞা ছিল বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে না নামার। নিজেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির একজন ডোনার হিসেবে দাবি করে বলতেন তিনিই পাবেন মনোনয়ন। তখন নির্বাচনে কাজ করলেই হবে। যে কারনে বিএনপি নেতাকর্মীরা নামেননি। তবে বিধি বাম গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। শাহআলমের পদত্যাগের পর আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগে যোগদান করতে যাচ্ছেন বলে নেতাকর্মীদের মাঝে গুঞ্জন চলছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগে এক পা দিয়েই রেখেছেন।