পদ ছাড়াই এখনও তিনি কর্মীবান্ধব নেতা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

সাধারণত বাংলাদেশের রাজনীতিতে পদ না থাকলেই বেশির ভাগ নেতা কর্মী শূন্য হয়ে যান। দীর্ঘদিন পদের দায়িত্বে থাকার সময় হাজার হাজার কর্মীরা নেতার চার পাশে ঘিরে থাকেন। আবার যখন পদশূন্য হয়ে যান তখন তিনি রাস্তা দিয়ে একা হাটলেও কেউ সালামটুকুও দেয়না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছেন অনেক নেতা যাদের পদ না থাকলেও তারা কর্মীবান্ধব নেতা। দলের মিটিং মিছিল সভা সমাবেশে শত শত কিংবা হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে তাদের পদচারণাও দেখা যায়। এমনি একজন নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি। যেখানেই তিনি যাচ্ছেন সেখানেই শত শত নেতাকর্মীকে দেখা যায় তার পাশে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হন মিজানুর রহমান সুজন। সানি সুজন জুটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সেরা জুটি হিসেবে দাবি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত বছর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে সানি ও সুজনের কমিটি এতটাই সাংগঠনিকভাবে রাজনীতি করেছেন এখনও তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখনও সানির সঙ্গেই রাজনীতি করছেন।

সানি সুজনের কমিটির কার্যক্রম ছিল অষ্টধাতুর মত। যেমন আওয়ামীলীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। প্রতিটি কর্মসূচিতেও তাদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতই। সক্রিয় ছিল জনদূর্ভোগ লাঘবের কর্মকান্ডেও। স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নিরাপত্তার দায়িত্বে যেমন ছিল তেমনি ফুটপাত রাস্তা যানজট নিরসনে তারা ছিল ট্রাফিকের ভূমিকায়। আবার রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিগুলোতেও ছিল সক্রিয়। কোন ধরনের দস্যূতা, ভুমিদস্যূতা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন কিংবা মাদক বিক্রি, বালু মহাল দখলের মত কোন ঘটনায় সানি সুজনের কমিটির কোন নেতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ ওঠেনি। সারাদেশের মধ্যে বিতর্কের বাহিরে ছিল ছাত্রলীগের ওই কমিটির নেতারা।

তৎকালীন ছাত্রলীগের কমিটির অনেক শীর্ষ নেতার নিজেদের পকেটে রিক্সা ভাড়াটুকুও ছিল না এমন অনেক শীর্ষ নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছিলেন। মুুলদলের নেতাদের কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছিল ছাত্রলীগের ওই কমিটির নেতারা। তবুও কোন ধরনের বির্তকে জড়িয়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় নামেননি। অন্যান্য সংগঠনগুলোর মধ্যে সভাপতি ও সেক্রেটারির মধ্যে মতপার্থক্য কিংবা বিরোধ দেখা গেলেও সভাপতি সানি ও সেক্রেটারি সুজনের মধ্যে কোন ধরনের বিরোধের ঘটনা দেখা যায়নি। দুজনের বলিষ্ট নেতৃত্বের কারনে ছাত্রলীগ ছিল ঐক্যবদ্ধ। যে কারনে ছাত্রলীগের ওই কমিটিকে এযাবতকালের সেরা কমিটি হিসেবেই দেখেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। তবে আশা দেখছেন বর্তমান কমিটি নিয়েও।

ওই কমিটির সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি এখনও কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলে তার পাশে শত শত নেতাকর্মীকে দেখা যায়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কয়েকশ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শপথ পাঠ করান সাফায়েত আলম সানি। ২০ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত ভাষা সৈনিক শামসুজ্জোহার মৃত্যুবার্ষিকীর দোয়া মাহফিলেও দেখা গেল সমান চিত্র। শত শত নেতাকর্মীদের নিয়েই অংশগ্রহণ করেন সাফায়েত আলম সানি।

জানাগেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানির নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে ও তার আদর্শ বাস্তবায়নে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার এবং বঙ্গবন্ধুর কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠনে নিজেদের নিয়োজিত করার শপথ করেন নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান প্রা ২শতাধিক নেতাকর্মী। ১২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে এমপি শামীম ওসমানের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ সাফায়েত আলম সানি।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট থাকার শপথ নেন শেখ সাফায়েত আলম সানি। ওই সময় তিনি সহ প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীও শপথ গ্রহণ করেন।

শেখ সাফায়েত আলম সানির শপথে যা ছিল:

‘আমি এই মর্মে শপথ গ্রহণ করছি যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সদা সচেষ্ট থাকবো।’ ‘আরো অঙ্গীকার করছি যে, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রেখে সকল প্রকার লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।’

‘আমি শপথ করছি যে, মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য সততা, নৈতিকতা ও ন্যায়পরায়নতা বাস্তবায়নের স্বার্থে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষে রাজনীতি চর্চাই আমাদের চলার পথের পাথেয় হবে।’

‘আমি আরো শপথ করছি যে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং তার সুযোগ্য তনয়া দেশরতœ গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বিশ্ব-মানবতার মা শেখ হাসিনার ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠনে নিমগ্ন থাকবো।’