ওসমান বিরোধীরাই খোকা বিরোধী আন্দোলনে!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের গেইটের সামনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামালীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার ইস্যূতে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের দুইবারের জাতীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সকলেই নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের বিরোধী শিবির হিসেবে পরিচিত। এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। অর্থাৎ যারা আন্দোলন করছেন তারা আগে থেকেই শামীম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধেই রাজনীতিতে জড়িত।

এসব কারনে জেলার জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের দাবি- এ বিষয়ে জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা কিংবা এমপি খোকা নিজেও বিচলিত নন। কারন এই বলয়টি দীর্ঘদিন যাবত ওসমান পরিবার ও ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে আসছেন। সেই সঙ্গে এমপি খোকাও তাদের বিরোধী বলয়ে রাজনীতি করেই আজকে দুইবারের এমপি। যারা মুলত শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ওসমান বিরোধী তারাই সোনারগাঁয়ে গিয়ে এমপি খোকার বিরুদ্ধে নানা ধরণের কটুক্তি করে বক্তব্য রেখেছেন। আবার শহর কেন্দ্রীক আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারাও ওসমান পরিবার বিরোধী শিবিরের। মুলত ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার কারনেই এমপি খোকাকে নিয়ে সামান্য ইস্যূকে কেন্দ্র করে এমপি খোকাকে বিতর্কিত করতেই এসব আন্দোলন করা হয়েছে বলেও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের দাবি।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষের বিষয়টির সমাধান করতে যান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওইদিন এমপি খোকা জানান, শিক্ষকদের বেতনের জন্য সরকার বরাদ্ধ দিয়েছে। তারপরেও যদি অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে সেখানে এমপি খোকা নিজে ভর্তূকি দিবেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকে জানান এ নিয়ে শিক্ষক, গভর্নিং বডির সদস্য ও অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষ করে সেখান থেকে পৌরসভার দরপত ঠোটালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে আবার সাদিপুর ইউনিয়নের দবির উদ্দীন ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের ৪তলা নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমপি খোকা।

এদিকে সন্ধ্যার দিকে খবর বের হয় ওই বিদ্যালয়ের গেটে লাগানো আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেলেছে কে বা কারা। এর জন্য অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্যের কারনে মিডিয়ার বরাদে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এমপি খোকাকে দায়ী করেন। সর্বত্র খবর ছড়িয়ে পড়ে এমপি খোকা বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর তার লোকজন নামফলক ভেঙ্গে ফেলেছে। এই ঘটনায় ১৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত নেতাকর্মীদের নিয়ে এমপি খোকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। জিএম আরাফাত মুলত নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠজন হলেও জিএম আরাফাত ওসমান পরিবার বিরোধী রাজনীতিতে জড়িত।

ওই ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভী সহ তার অনুগামী আরও বেশকজন নেতা আনোয়ার হোসেনের পক্ষে মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে এমপি খোকাকে দোষারোপ করেন। মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এমপি শামীম ওসমানের বিরোধী শিবিরের অন্যতম রাজনীতিক যা দেশব্যাপী আলোচিত।

১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ের সামনে পৌর আওয়ামীলীগের ব্যানারে এমপি খোকার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। তারা মুলত মেয়র আইভী বলয়ের রাজনীতিতে জড়িত। একই সঙ্গে তারা ওসমান বিরোধী রাজনীতিতেও। আবার সোনারগাঁয়ে তাদের আগের সেই দাপট এমপি খোকার জন্য কমে আসছে। যার ফলে তারা এমপি খোকার বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন সেটাই স্বাভাবিক।

২০ নভেম্বর শুক্রবার একই বিদ্যালয়ের সামনে জেলা পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভু্ইঁয়া, সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান এবং জেলা পরিষদের বেশকজন সদস্য, যারা মুলত মেয়র আইভী অনুগামী ও ওসমান পরিবার বিরোধী রাজনীতিতে জড়িত।

এদের মধ্যে আরজু রহমান ভুঁইয়া ও জাহাঙ্গীর আলম হলেন ওসমান পরিবারের কট্টর বিরোধী। এক সময় ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহচর থাকলেও বিভিন্ন কারনে ওসমান পরিবারের বলয়ের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন মাহফুজুর রহমান কালাম। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালাম মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ও এমপি খোকার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সোনারগাঁয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর বেশ বেকায়দায় পড়েছেন কালাম। যে কারনে তিনিও এখন ওসমান পরিবার বিরোধী শিবিরের রাজনীতিতে। এর আগে থেকেই কালামের সঙ্গে শামীম ওসমানের সম্পর্কে ফাটল ধরে।

২১ নভেম্বর শনিবার মহানগর আওয়ামীলীগের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। যেখানে ওইসব নেতাদের মধ্যে বেশকজন উপস্থিত ছিলেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হোন আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদা মালা। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকে জানান গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এই তিন নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে ওসমান পরিবারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। মাহামুদা মালাও কঠোর ভাষায় বক্তব্য দেন। ওই নির্বাচনের পর ওসমান পরিবারের সঙ্গে খোকন সাহার সম্পর্ক শিথিল হলেও বাকি আনিসুর রহমান দিপু ও মাহামুদা মালা ওসমান পরিবার বিরোধী শিবিরের রাজনীতিতে এখনও রয়েছেন। তবে খোকন সাহার উপস্থিতি থাকলেও খোকন সাহা সোহার্দ্যপূর্ণ ভাষাতেই বক্তব্য রেখেছেন এবং যেহেতু তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি সেই হিসেবে তাকে সেখানে থাকাটাই স্বাভাবিক।

যদিও মহানগর আওয়ামীলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজাম সহ ওসমান পরিবারের অনুগামী কোন নেতাই এমপি খোকা বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন না।

অনেকেই জানিয়েছেন, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোল পাল্টে ওসমান পরিবারের অনুগামী সেজেছিলেন আনোয়ার হোসেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের বদৌলতেই মহানগর কমিটির প্রস্তাবনায় কেন্দ্রে আনোয়ার হোসেনকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নাম পাঠানো হয়। কিন্তু আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এর আগে আইভীকে নৌকা প্রতীকে মনোনিত করে দল। কিন্তু আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ওসমান পরিবারের বলয় ত্যাগ করে আবারো পল্টি দেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছিলেন গত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আগে মাজার জিয়ারত করে আনোয়ার হোসেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ওসমান পরিবারের পক্ষেই থাকবেন।