তৈমূর আলমের ভাই সাব্বির হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের আপন ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। নিহত সাব্বির আলম খন্দকারের আরেক ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তিন বারের কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার। দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি।

১৮ ফেব্রুয়ারী সোমবার ছিল সাব্বির আলম খন্দকারের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় তিনি সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী আন্দোলনে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। বাংলাদেশ নীট ম্যানুফ্যাক্চারাস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোশিয়েসনের সহ-সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন সাব্বির আলম খন্দকার।

সোমবার সকাল ১০টায নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করতে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবি করা হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের শোক র‌্যালী কর্মসূচি পালন করেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।

পরে মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, নারায়ণঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সী শামছুর রহমান বেনু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ খান ভাসানী ভুইয়া, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকার, অ্যাডভোকেট শিপলু, জেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন, মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন প্রমুখ।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার বলেন, ‘আমার ভাইকে কোন ব্যক্তিগত কারণে হত্যা করা হয়নি। শুধু মাত্র সমাজসেবায় মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজীদের নাম উল্লেখ্য করে এবং তারা কে কত টাকা পায় এসব বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজও আমার ভাইয়ের হত্যা বিচার পাইনি। শুধুমাত্র টাকার কাছে হেরে গেছি। হত্যাকারীরা টাকা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট করিয়েছে। তাই আজও বিচার পাইনি। খুনিরা আবারো ঢাকায় ফিরে আমাদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে। তিনি ১৮ই ফেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবী করেন।

এছাড়াও ১৮ ফেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবী করে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আজ যেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে সরকার সহ দেশবাসী কথা বলছে, সেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শহীদ শাব্বির আলম খন্দকার নব্বইয়ের দশক থেকেই সোচ্চার ছিলেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় মাদক ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের চক্ষুসূলে পরিনত হন। সমাজের ও দেশের চিন্তা করেই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েও তার হত্যার বিচার পাইনি তার পরিবার।

প্রয়াত সাব্বির আলম খন্দকারের ১৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার দাবীতে সোমবার ১৮ ফেব্র্রুয়ারী ১০টায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত উক্ত শোকর‌্যালীতে দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শতশত নারায়ণগঞ্জবাসী যোগ দেয়। শোক র‌্যালী নিয়ে মাসদাইর পৌর কবরাস্থানে গিয়ে শহীদের কবর জেয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, নিহতের পরিবারের দাবি ২০০২ সালের ২২শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস, চাঁদা ও মাদক মুক্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসে অনুষ্ঠিত জেলার ৩২টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার ”আমার জানাযায় অংশ গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শুরু করছি“ বলে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের গডফাদারদের নাম প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তখন শহীদ সাব্বিরের ব্যাপক তৎপরতায় ঝুট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, চুন ফ্যাক্টরী ও নারায়ণগঞ্জ বাসী নিস্তার লাভ করে।

চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা হয়ে পরলে তাদের গডফাদারদের ষড়যন্ত্রে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা প্রাতঃকালীন ভ্রমনকালে শহীদ সাব্বির আলম খন্দকারকে গুলি করে হত্যা করে। তৎসময়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা দায়ের থেকে শুরু করে তদন্ত সহ সকল ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে। ফলে দীর্ঘ ১৪ বছরেও একটি গ্রহণ যোগ্য চার্জশীট প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি বলে নিহতের পরিবারের দাবি।