আওয়ামীলীগ নেতাদের মুখে অশালীন অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায় বক্তৃতা! তীব্র সমালোচনা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। দলটি টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের ক্ষমতায়। সেই দলের নারায়ণগঞ্জে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের মুখে অশালীন অশ্লীল অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায় যখন বক্তৃতা শোনা গেল তখন সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক মহল ও সচেতন নাগরিকদের মাঝেও চলছে সমালোচনা। এসব বক্তৃতার ভাষায় যখন একজন জাতীয় সংসদ সদস্য যিনি আইন প্রণেতা এবং যার উপর সাংবিধানিক অধিকার বর্তায় সেই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এমন সব বক্তব্য রেখেছেন তখন সোনারগাঁয়ের মানুুষের মাঝে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

আবার প্রতিবাদ সমাবেশের নামে প্রকাশ্যে একজন আইন প্রণেতাকে হুমকি ধমকির বিষয়টিও ভিন্ন চোখে দেখছেন খোদ আওয়ামীলীগ নেতারাই। আওয়ামীলীগেরই অনেক সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে তারা বলেন, এ ধরণের বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। প্রতিবাদের ভাষা হবে রাজনৈতিক। কারন সাধারণ মানুষ রাজনীতিকদের ভাষা বক্তৃতা শ্রবণ করেন। যেসব বক্তৃতায় ভাল কিছু থাকবে এবং জনগণ তা শুনে ভাল মনে করবে সেই দলের পাশে জনগণ দাঁড়াবে। সেদিকেই জনগণ থাকবে। যে কোন বিষয়ের প্রতিবাদ করা যেমন তার সাংবিধানিক অধিকার কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষাও হতে হবে শালীন ও রাজনৈতিক। কিন্তু সেখানে দলীয় বা কোন সংগঠনের ব্যানারে ব্যক্তিগত চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কাউকে হেয় করে অশালীন অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় বক্তব্য দেয়া হয় তখন সেটা রাজনৈতিক প্রতিবাদ থাকে না। তখনি সেটা হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাঙ্গার ঘটনায় ২০ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে জেলা পরিষদের আয়োজনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুুল ইসলাম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, জেলা পরিষদ সদস্য আলাউদ্দীন আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, রোমান ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট নূর জাহান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সামসুজ্জামান খান ভাসানী, পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি তিন নেতা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা প্রমূখ।

মুলত সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের জাতীয়পার্টির টানা দুইবারের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে ওই নামফলক ভাঙ্গার জন্য দায়ী করা হয়। ওই ঘটনায় এমপি খোকাকে অভিযুক্ত করেই সমাবেশের সকল বক্তারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বেশক’জন নেতা তাদের বক্তব্যে এমপি খোকার চরিত্রহননের চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ হুমকি ধমকি দিয়েছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব ছাড়াও বক্তব্যে এমন সব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা সংবাদপত্রের ভাষায় লিখনযোগ্য নয়। কারো কারো বক্তব্যের ভাষা নিম্মশ্রেণির লোকজনদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে। সমাবেশে আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে কে কত নোংরা ভাষায় এমপি খোকাকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য রাখতে পারবেন চলছে সেই প্রতিযোগীতা। সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা নানা অশ্লীল শ্লোগানও দিয়েছেন।

ওই সময় আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে উপস্থিতিদের মাঝে হাসির খোরাক সৃষ্টি হলেও সমাবেশ শেষে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে যখন ওইসব নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি সোনারগাঁয়ের সচেতন নাগরিকদের মাঝেও এমন সব বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। উপস্থিত সাংবাদিক সমাজও ওইসব নেতাদের ওইসব বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচার করেননি। তবে দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যে কারনে আবার জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরাও ফেসবুকে কঠোর সমালোচনা করে মন্তব্য করছেন।

অন্যদিকে জানাগেছে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া করোনাকালেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছিলেন। ওই বিষয়ে অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের নিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে বৈঠক করেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি জানান সরকার বেতনের ব্যবস্থা করেছে। তারপরেও বিদ্যালয়ের কোন অর্থের প্রয়োজন হয় সেটা আমি দেখবো।

ওইদিন বিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটকের সামনে গেটে লাগানো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেলা হয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া মিডিয়াতে বক্তব্যে বলেছেন, এমপি খোকা চলে যাওয়ার পরে তার লোকজন নামফলক ভেঙ্গেছেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন মিডিয়াতে দাবি করেছেন, এমপি খোকা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নামফলক ভাঙ্গিয়েছেন। দুজনের বক্তব্যে বিস্তর ফারাক থাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা জাতীয়পার্টি বিবৃতিতে দাবি করেছে, এমপি খোকা বিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পর দুষ্কৃতকারীরা নামফলক ভেঙ্গেছে, এখানে এমপি খোকার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এখানে উল্লেখ্যযে, অর্থ আদায় না করার নির্দেশনা দিয়ে অভিভাবকদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে এমপি খোকার প্রতি নারাজ হন অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া। এই সুলতান মিয়া হলেন এমপি খোকার ঘোর বিরোধী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের মামা।

(প্রত্যেক বক্তার বক্তব্যের ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত)