রাজনীতিতে শুরু থেকে শেষ বিএনপির সাবেক চার এমপি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে বিদায় বেলায় বিএনপির সাবেক চার এমপি। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই চার এমপির কেউই দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পাননি। চার জনের মধ্যে আবার তিনজনই ১/১১ এর সময় বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে দল ভাঙ্গার ষড়ন্ত্রকারী সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত। রাজনীতিতে তাদের সেই প্রভাবের রেসটুকুও নেই। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির রাজপথের আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন এই চার এমপি। কালেভদ্রে বিএনপির ঠান্ডা কর্মসূচিতে দেখা গেলেও দলের কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে তাদের ছায়াও পড়েনি। কেবল নির্বাচন আসলেই তারা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং করে আলোচনায় আসতেন। কিন্তু এবার সেই চার এমপির রাজনীতিতে বিদায় ঘন্টা। বয়সের ভারেও নুব্জ হয়ে পড়েছেন। কর্মী সমর্থকদের আগ্রহও নেই এই চার এমপিকে নিয়ে।

নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে তিন বারের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুুল কালাম। তিনি যদিও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতির পদে রয়েছেন। গত নির্বাচনে এখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পান নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি এসএম আকরাম। ফলে মনোনয়ন বঞ্চিত হন আবুল কালাম। যদিও প্রাথমিক মনোনয়ন বাছাইয়ে ছিলেন আবুল কালাম। ১/১১ এর সময় তিনি সংস্কারবাদীদের সঙ্গে ছিলেন। তারপরও তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ। বর্তমানে তিনি দেশের বাহিরে চিকিৎসার জন্য রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনেরও একই অবস্থা। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে এসেই নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন আগে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালে কারাগারে থাকায় মনোনয়ন পাননি। এরপর এবারের নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাননি। এ আসনে ২০০৮ সালে মনোনয়ন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম ও এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। বিএনপির রাজনীতিতে তিনিও নিষ্ক্রিয়। আগের সেই প্রভাবও নেই তার। তারও যথেষ্ট বয়স হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে বেশকবার এমপি হয়েছিলেন রেজাউল করিম। হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও। তিনিও ছিলেন সংস্কারবাদী। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই জোড়ালো বিরোধীতা করেছিলেন রেজাউল করিম। তারপরও ২০০৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন। এবারের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এ আসনে মনোনয়ন পান এবার কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে রেজাউল করিমের আগের সেই অবস্থান নেই। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসা পর দলের সক্রিয় কর্মসূচিতেও ছিলেন না তিনি। শারীরিকভাবেও এখন ফিট নন। ফলে তারও রাজনীতিতে বিদায় বেলা।

নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের সাবেক তিন বারের এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। তিনিও সংস্কারবাদী নেতা। আওয়ামীলীগ থেকে এসেই বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছিলেন তার বড় ভাই প্রয়াত নেতা এএম বদরুজ্জামান খান আঙ্গুুরের ফলে। ২০০৮ সালে আতাউর রহমান খান আঙ্গুর মনোনয়ন পাননি। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পান এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ। বর্তমানে আড়াইহাজারের রাজনীতিতে আঙ্গুরের আগের সেই প্রভাব নেই। দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন না আঙ্গুর। যার ফলে রাজনীতিতে তারও বিদায় বেলা। বয়সও হয়েছে তার যথেষ্ট। ফলে আগামী ৫ বছর পর নির্বাচনের যথেষ্ট শারীরিক সক্ষমতা ও রাজনীতিতে প্রভাব থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কাই রয়েছে বেশ।