নির্বাচনে যেসব বিষয়গুলো ডালিয়া লিয়াকতের সম্ভাবনা বাড়ায়

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশক’জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী রয়েছেন বেশ আলোচনায়। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার অলিগলি চায়ের দোকানগুলো সরগরম হয়ে ওঠেছে নির্বাচনী আলোচনায়। সেই আলোচনা চায়ের দোকান ছাড়িয়ে জেলার শীর্ষ রাজনৈতিকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। পৌর নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এখন ডালিয়া লিয়াকত যিনি স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ও জাতীয় মহিলা সংস্থা উপজেলা শাখার চেয়ারম্যান।

ইতিমধ্যে সোনারগাঁও পৌর নাগরিক কমিটি আগামী নির্বাচনের জন্য ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এই নাগরিক কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বর্তমান পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা। এই নাগরিক কমিটিতে রয়েছেন স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনেরা। নির্বাচনে ডালিয়া লিয়াকতের সম্ভাবনায় বাড়ায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা তার পক্ষে পজেটিভ ভুমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তার কর্মী সমর্থকেরা।

স্থানীয়রা বলছেন, মেয়র প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি জনগণের মাঝে পজেটিভ প্রভাব ফেলবে বর্তমান পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়ার সমর্থণের ঘোষণাটি। কারন পৌরবাসীর মাঝে সাদেকুর রহমান কয়েক যুগ ধরে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তি। এখনও প্রবীণ নারী পুরুষ সাদেকুর রহমানের নামের উপর ভোট প্রদান করেন। টানা দশ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও আমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদেরও ১৮ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বাংলাদেশ ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি।

এদিকে গত ১৭ অক্টোবর শনিবার সোনারগাঁও আমিনপুর মাঠে উপজেলা ও পৌর জাতীয়পার্টির সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন মেয়র সাদেকুর রহমান। ওইদিন তিনি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই বাহাউল হক যখন জাতীয়পার্টির এমপি ছিলেন, আমি ছিলাম চেয়ারম্যান। আমি সেই সময়ও জাতীয়পার্টির কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইনি। আজকে আমি আওয়ামীলীগ নেতা হয়ে এবং এবার যদি নির্বাচন করতাম তাহলে নৌকা প্রতীকেই মনোনয়ন চাইতাম, সেই আমিই এবার জাতীয়পার্টির মঞ্চে ওঠে ঘোষণা দিচ্ছি আগামী পৌরসভার নির্বাচনে আমার মেয়র প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকত।’ যদিও এর আগের দিন রাতেই পৌর নাগরিক কমিটির সভায় ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন সাদেকুর রহমান।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি হিসেবে রয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। যিনি একজন সাধারণ মানুষের মতই চলাফেরা করেন। একজন নিরহংকারী মানুষ তিনি। তিনি এমপি হওয়ার আগে এখানকার সাবেক এমপিদের ছায়া পাওয়াও ছিল সোনার হরিণের মত। একজন এমপি সাধারণ মানুষের মতই এটা ভুলেই গিয়েছিলেন সোনারগাঁয়ের মানুষজন।

এ আসনে যখন বিএনপির রেজাউল করিম বেশক’বার এমপি নির্বাচিত হোন তার সঙ্গে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা মধ্যমসারির বিএনপি নেতাকর্মীদেরও তার সাক্ষাত পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তার ঘনিষ্ঠজনরাই সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকার সেক্টর নিয়ন্ত্রণ দেখভাল করতেন।

একই দশা ছিল আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের ক্ষেত্রেও। বৃহত্তর দুটি থানা এলাকা নিয়ে তিনি ছিলেন এমপি। তার আমলে তার ঘনিষ্ঠ দু’চারজন নেতা ছাড়া আর কেউ তার সাক্ষাতই পাননি। তিনি কোথায় থাকতেন, সেই বিষয়েও বলতে পারতো না কায়সারের লোকজনই। দলীয় কোন বড় ধরণের কর্মসূচি হলে কায়সার হাসনাতের ছায়া দেখা যেতো। তার সাক্ষাৎ পাওয়া ছিল সাপের মাথার মনি’র মতই।

যে কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষ বলছেন- আগে যারা এমপি ছিলেন তারা হয়তো থাকতেন সাত আসমানে, এখন এমপি খোকা থাকেন পথে ঘাটে হাটে বাজারে চায়ের দোকানে। সাধারণ মানুষ তার কাছে যাওয়ার আগে তিনিই সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যান এসব জায়গায়।

লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি হওয়ার পর সোনারগাঁয়ের সাধারণ মানুষের ধারণাই পাল্টে গেল। কখনও চায়ের দোকানে, কখনও হাটে ঘাটে মাঠের টং দোকানে আমজনতার পাশে বসে চা পান করতে পারেন লিয়াকত হোসেন খোকা। গরীব দুঃখী ফকির মিসকিনদেরও জড়িয়ে ধরেন তিনি। দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই তিনি জনগণের পাশে সময় দেন। একজন ভিক্ষুকও তার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যাননা। একজন আমজনতার নেতা হিসেবে তিনি সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। এমপি খোকার মতই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন ডালিয়া লিয়াকতও। যে কারনে এমপির এমন বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মাঝে ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে নির্বাচনে টনিকের মত আকৃষ্ট করতে পারে।

আবার এসব কারনেই মুলত বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও ঝুঁকছেন এমপির নেতৃত্বের দিকে। এমপি খোকার এমন সব বিষয়গুলো মেয়র ডালিয়া লিয়াকতের জন্য বেশ ভাল ভুমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন পৌরবাসী।

অন্যদিকে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে জাতীয়পার্টির কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বচ্ছ বিতর্কহীন ব্যক্তিদের নিয়েই মুলত জাতীয়পার্টির এসব কমিটিগুলো গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী টিমওয়ার্ক তৈরি হয়ে গেছে যা ভোটের মাঠে কাজ করবে এবং নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন তারা। একই সঙ্গে জাতীয় মহিলা পার্টির কমিটিগুলোও গঠন করা হয়েছে। যারা প্রতিটি ঘরের নারীদের বুঁঝিয়ে ভোট টেনে আনার কাজটিও করবেন।

এদিকে সোনারগাঁয়ের শিক্ষার উন্নয়নে কয়েক বছর ধরেই ভুমিকা রেখে আসছেন আবু নাঈম ইকবাল। উপজেলায় তিনি একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবেই পরিচিত। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্যও তিনি। শিক্ষক সমাজের মাঝেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। যার ফলে পৌর নির্বাচনে শিক্ষক সমাজও ডালিয়া লিয়াকতের পাশে থাকছেন। একই সঙ্গে ইকবাল একজন ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়া সংগঠক। তিনি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ফলে ক্রীড়াপ্রেমী বিশেষ করে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট প্রেমীরাও থাকছেন ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষেই। আবু নাঈম ইকবাল বর্তমানে উপজেলা জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডালিয়া লিয়াকতের কর্মী সমর্থকরা সান নারায়ণগঞ্জকে বলছেন- শুধুমাত্র ট্যাক্সের টাকায় পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বড় বড় কাজগুলো করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার ডিও লেটারের প্রয়োজন হবে। পৌরসভার মেয়র পদে যদি ডালিয়া লিয়াকত দায়িত্বে থাকেন তাহলে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাও উন্নয়নের জন্য চাপে থাকবেন এবং তিনিও বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরগুলোতে দৌড়াবেন কাজের জন্য। এতে পৌরসভার কাজ হবে এবং উন্নয়ন হবে। এখানে এমপি হিসেবে লিয়াকত হোসেন খোকা আসার পর উন্নয়ন যেটুকুই হোক না কেন সোনারগাঁয়ে রাজনৈতিক কোন সংঘাত হয়নি, বিশৃঙ্খলা হয়নি। সাধারণ মানুষ অশান্তিতে ছিলেন না। এসব বিষয়গুলোও ভোটের মাঠে কাজ করবে।

অন্যদিকে এমএ জামান রয়েছেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও মেয়র প্রার্থী ডালিয়ার সঙ্গেই। পারিবারিকভাবেই একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক হিসেবে পৌর এলাকায় পরিচিত এমএ জামান। পৌরসভা নির্বাচনে তার ভুমিকাও থাকবে বেশ জোড়ালো। নিয়মিত তিনি ডালিয়া লিয়াকতের নির্বাচনী প্রচারণায় পাশেই রয়েছেন। অতীতে পৌর নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সেটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। আর সেই এমএ জামান যখন ডালিয়া লিয়াকতের পক্ষে থাকে তখন ডালিয়ার সম্ভাবনার পাল্লা ভারী হয় সেটাই স্বাভাবিক।

এ ছাড়াও পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লাও রয়েছেন ডালিয়া লিয়াকতের পাশে। তিনিও রয়েছেন পৌর নাগরিক কমিটিতে। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছে, নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন ডালিয়া লিয়াকত। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় অর্ধশত উঠান বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছে নাগরিক কমিটি। প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক করা হবে। যেখানে সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া ও সাইদুর রহমান মোল্লা মেয়র প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতের জন্য ভোট চাইবেন। প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিগত ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে নাগরিক কমিটি এসব উঠান বৈঠক করবে।