সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে এমপি খোকার প্রতিপক্ষ এক ডজন!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার নির্বাচনের সম্ভাবনার সময় যত সামনে আসছে ততই স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার প্রতিপক্ষ বাড়তে থাকছে। দিনকে দিন তার সামনে পাহাড়সম বাধা হয়ে আসছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতারা। পৌরসভা নির্বাচনে এমপি খোকা তার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতকে নিয়ে মাঠে নেমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পড়ে গেছেন।

এখানে হেরে গেলে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা কমবে আবার জয়ী হলে আরো শক্ত অবস্থান তৈরি হবে তার। আর এমনটি ভেবেই সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন- পৌর নির্বাচনে ডালিয়া লিয়াকত মেয়র হলে শক্ত অবস্থান তৈরি হবে এমপি খোকার এবং সোনারগাঁয়ে এমপি খোকার শক্ত অবস্থান তৈরি হলে আওয়ামীলীগ নেতাদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন আরো কয়েক বছর পিছিয়ে যাবে।

সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে যখন এমপি তার সহধর্মিনীকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তখন আওয়ামীলীগের সকল পক্ষই এখন এমপির এমন মিশন ঠেকানোর সঙ্গে একজোট হয়েছেন। আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে মতের দিকে একই মত এখানকার বেশকজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গেরও।

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাগেল, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে প্রকাশ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি একেএম শামীম ওসমানের।

এদিকে সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী মাঠে আলোচনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমপি শামীম ওসমানের সবুজ সংকেত নিয়েই ডালিয়াকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু জেলার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন- এমপি খোকার সঙ্গে আগের মত সুসম্পর্ক এমপি শামীম ওসমানের নাই। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

আবার এমপি শামীম ওসমানের সহধর্মিনী লিপি ওসমান জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান আর ডালিয়া সোনারগাঁও উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে লিপি ওসমান জনপ্রতিনিধি না হতেই তার আগেই ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র হিসেবে শামীম ওসমান কতটা সহজে মেনে নিবেন সেটাও ভাবার বিষয়। ফলে শামীম ওসমানের অবস্থান দোয়াশা।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু তার ভগ্নিপতি জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীকে নিয়ে এবারও মাঠে নেমেছেন। এবার এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে এমপি বাবুর বর্তমানে সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে এমপি বাবুও এমপি খোকার শক্ত প্রতিপক্ষ। রাব্বীর হাতে এবার নৌকা আসলে শামীম ওসমানকে নিয়েই এমপি বাবু নৌকার পক্ষে নামবেন বলেও জানাগেল।

আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের সমর্থন রয়েছে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমানের দিকেই। কায়সার ও মোশারফের সঙ্গে রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামও। যদিও কালামের ভুমিকা সব সময়ই থাকে রহস্যজনক। এদিকে আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এইচএম মাসুদ দুলালও রয়েছেন এমপি খোকা বিরোধী শিবিরে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু। এখানে এমপি খোকার শক্ত অবস্থান যত তৈরি হবে ততই বিরুর জন্য হুমকিস্বরুপ। ফলে বিরুও এবার প্রতিপক্ষ। নৌকার পক্ষে তার ভুমিকা থাকবে জোরালো।

প্রয়াত এরশাদের পালিতা কন্যা কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমীর সঙ্গে এমপি খোকার সাপে নেউলে সম্পর্ক। মৌসুমী সুযোগ পেলেই সোনারগাঁয়ের রাজনীতি নিয়ে এমপি খোকাকে আকার ইঙ্গিতে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন। এবার কেন্দ্রে বসেও সেই কাজটিই করছেন মৌসুমী।

পৌর নির্বাচনে পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তারের বেশ সুদৃষ্টিতে ঝরা। একইভাবে কেন্দ্রীয়ভাবেও ঝরার শক্ত লবিং রয়েছে। স্থানীয়ভাবেও সবার সাথে যোগাযোগ করছেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম হলেন এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। একইভাবে তারা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সেক্রেটারি শহীদ বাদলেরও প্রিয়ভাজন। কিন্তু পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সামনের নির্বাচনে বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম বিডিআরকে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করিয়ে লাঙ্গল তুলে দেয়ার চেষ্টার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান করোনার হিরো দানবীর ইঞ্জিনিয়ার মাসুম বেশ জনপ্রিয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর আলমের তেমন কোন প্রভাব সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে না থাকলেও পৌরসভার পাশের এলাকা সনমান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার ভাই জাহিদ হাসান জিন্নাহ। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে ভোট সংগ্রহ ও লোকবলের বিষয়ে বেশ ভুমিকা রাখতে পারেন জিন্নাহ। যদিও জাহাঙ্গীর ও জিন্নাহর অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয়।

এত্তসব প্রতিপক্ষের মাঝে এবার বেশ জোড়ালো অবস্থান নিয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন ও দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

২৩ অক্টোবর শুক্রবার পৌরসভার গোয়ালদি মামুন ভুঁইয়ার বাসায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গের সামনে বক্তব্যে মামুন ভুঁইয়া কঠোর ভাষায় বলেছেন, সোনারগাঁয়ে প্রবাসী ঢুকে গেছে, একজন থানাবাসী আরেকজন পৌরবাসী প্রবাসী, ওয়ান ভোট ওয়ান ক্যান্ডিডেট। এতে পৌরবাসীর পেইন হচ্ছে।’ ওই অনুষ্ঠানে আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ছগীর আহাম্মেদের দিকেই বক্তব্য রেখেছেন।

অন্যদিকে অনেকেই বলছেন-উপরোক্ত এসব নেতাদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের নির্দেশনায় কাজ করে থাকেন। যদি এবারের নির্বাচনে গত নির্বাচনের মত শামীম ওসমানের ভুমিকা না থাকে তাহলে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনীকে নির্বাচনী ভোটের মাধ্যমে জয় কঠিন হবে বলে মনে করছেন পৌরবাসী।

একই সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে উপরোক্ত নেতারা একজোট হলে নৌকার বিজয় ঠেকিয়ে ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র নির্বাচিত করাটাও কঠিন হবে। কেউ কেউ বলছেন- আওয়ামীলীগ নেতাদের কেউ কেউ বিকিকিনি না হলে এবং সকলে একজোট হলে এখানে ডালিয়া লিয়াকতের জয়ের সম্ভাবনায় বিরাট বাধা। আরো মজার বিষয় এখানকার নৌকা প্রত্যাশি চার প্রার্থীর মধ্যে কেউ কাউকে আকার ইঙ্গিতেও বিরোধীমুলক বক্তব্য দেন না। কিন্তু চার জনের কন্ঠেই বহিরাগত ও প্রবাসি ঠেকানোর কথা শোনা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান।