এখন অনিয়মটাই নিয়ম, সিস্টেমের ভেতরে যারা তারাই সিস্টেম ভাঙ্গে: শামীম ওসমান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, কোরআন হাদীসের পড়ে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, ভুল ক্রটি হলে আল­াহ মাফ করুণ যারা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নিহত হয়েছেন তারা শহীদের দরজা পেয়ে গেছেন। এখন প্রশ্ন হয়তো তাদের মৃত্যু অনেক কষ্টের মধ্যে হয়েছে। কিন্তু তারা এখন জান্নাতের দরজায় পৌছে গেছেন ইনশাল­াহ।

শামীম ওসমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে একজন এতিম মানুষ। উনি জানেন স্বজনহারা বেদনা কত কষ্টের। ওনাদের দুই বোন একদিন হঠাৎ করেই জানতে পেরেছিলেন তাদের পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। তিনিও স্বজন হারিয়েছেন। একটি দূর্ঘটনা একটি হত্যা। দুটি ঘটনায় স্বজন হারানোর। তাই আপনাদের স্বজনহারা বেদনা তিনি উপলব্দি করতে পারেন প্রতি মূহুর্তে।

শামীম ওসমান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের জন্য নামাজে বসে দোয়া করেছেন এবং আপনাদের স্বজনহারা মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন যে, তিনি যেন আপনাদের জন্য কাজ করতে পারেন। দেশের সকল মানুষের মুখে যেন হাসি ফোটাতে পারেন। এই ৫ লাখ টাকা বা ৫ কোটি টাকা কোন টাকাই না। স্বজন আর ফিরে আসবে না। দুনিয়ার সব সম্পদ দিলে বাবার কাঁেধ ছেলের লাশ আর মায়ের সামনে সন্তানের লাশের যন্ত্রানা অপূরণীয়।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই মহামারী চলছে এর মধ্যে কিছু লোক নানা অপকর্ম করছে। কিন্তু এখন যেকোন সেক্টরে এখন অনিয়মটাই নিয়ম। সিস্টেমের ভেতর যারা আছে তারাই তো সিস্টেম ভাঙ্গে। নারায়ণগঞ্জে বাড়িঘরের অনুমতি দেয়ার কথা রাজউকের। আর কে দিয়েছে। রহমউল­াহ ইনস্টিটিউট ভাঙ্গার হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেটার দায়িত্ব তো জেলা প্রশাসক ছিলেন। কিন্তু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সবাই আইনের ভেতরে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আমরা নিজেরা যারা রক্ষক তারা যদি ভক্ষক হয়ে যাই তাহলে কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম আইনকে মানবে না। আমার মনে হয় আমাদের সময় হয়েছে আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে একসাথে কাজ করি। কিন্তু এই অনিয়ম কে নিয়মে পরিণত করা একা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব না। এটা সবাই মিলে করতে হবে।

২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল­ার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ও আহত ৩৫ পরিবারের হাতে পরিবার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

শামীম ওসমান আরো বলেন, যারা চলে গেছে তারা আসলেই অনেক ভাগ্যবান। কিন্তু আমাদের সামনে তো অনেক পরীক্ষা আছে মনে হয়। কিভাবে যাব। কি নিয়ে যাব । আমাদের মৃত্যুর ভয় থাকলে আসলে দেশে কোন প্রশাসন লাগে না। নাহলে আপনারাই বলেন এই করোনাকালে মানুষ চুরি করে কেন। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দূর্নীতি করে কেন। ব্যবসা করা এক জিনিস আর ধান্দা করা আরেক জিনিস। এরা কি মানুষ।

তিনি বলেন, যারা শহীদ হয়েছে আপনাদের পাশে প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমার পুরো পরিবার বেশীরভাগ সদস্য করোনায় এখন আক্রান্ত। তারপরে ছুটে এসেছে একটু আপনাদের দেখতে। একটু দোয়া নিতে আর প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া ভিক্ষা চাইতে। একটি দেশকে এগিয়ে নিতে একটি মানুষের প্রয়োজন হয়। তিনি হচ্ছেন শেখ হাসিনা। একবার দেশকে স্বাধীন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাকে হত্যা করে আমরা একবার দেশের অগ্রগতিকে পথ রোধ করে দিয়েছিলাম। এখন তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই অগ্রগতিকে আবার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আর্থিক সাহায্যের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন মোস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শাকিল আহমেদ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারি, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক, জেলা আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু প্রমুখ।

প্রসঙ্গত গত ৪ সেপ্টেম্বর ফতুল­ার তল­া বাইতুস সালাম জামে মসজিদে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৩৫ নিহত ও দুই আহত অবস্থায় এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে।