২০১৬ সালে ৩৬টি নির্বাচনে যাদের বেঈমানিতে হেরেছিল বিএনপি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী সহ ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩৬টি নির্বাচনে হেরেছিল বিএনপি। যেখানে নিজ দলের নেতারাই নিজ দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করা এমন বিএনপি নেতারাও নিজ দলের প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দিয়েছেন। ওই সময় যেসব প্রার্থীরাই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছিলেন বিএনপি নেতা। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও প্রকাশ্যে বিএনপির বেশকজন বিএনপির প্রার্থীদের বিরোধীতা করে সরকারি দলের পক্ষে কাজ করেছিলেন।

এখন নতুন করে নারায়ণগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। আবারো সেই পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে বিএনপির। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে কাউকে প্রার্থী করেনি। এখানে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরীফ আহম্মেদ টুটুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। একইভাবে সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনেও দূর্বল সম্ভাব্য প্রার্থী লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়নকে নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। যদিও এখনও সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

ওই সময়ের ঘটনায় নেতাকর্মীরা সান নারায়ণগঞ্জকে জানান, ২০১৬ সালে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬টি নির্বাচনে হেরেছিল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক। আর ধানের শীষ প্রতীকের পরাজয় নিশ্চিত করতে কাজ করেছিলেন খোদ বিএনপিরই দলীয় নেতারা। কোন কোন নির্বাচনে প্রার্থীই দেয়নি বিএনপি। কোন কোন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও সরিয়ে নিয়েছেন। আবার কোন কোন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ওই সময় সরকারি দলের প্রার্থীদের কাজ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার অভিযোগও ওঠেছিল। তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এমন সব অভিযোগে বেশকজন প্রার্থীকে বিএনপি থেকে অব্যাহতিও দিয়েছিলেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১৬ সালটি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় গেছে। বছরটিতে বিএনপিরই বেঈমান আঁতাতকারী ও দালাল টাইপের নেতাদের কারনে এসব পরাজয় গুণতে হয়েছে বিএনপিকে। বেঈমানির কারনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ভুরাডুবি ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠেছিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাদে এ জেলায় ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে একটিতে জয়ী হলেও বাকি ৩৫টিতে পরাজিত হয়েছে বিএনপি।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৬টি পরিষদ ও রূপগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোলাব ইউনিয়নে ছাত্রদল নেতা আলমগীর হোসেন টিটু অনেকটা লড়াই করেই জয়ী হয়েছেন। যদিও তাকে আওয়ামীলীগের বিভক্তিই এ জয়ের সুযোগ করে দেয়। রূপগঞ্জে নির্বাচনের পূর্বে ৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জয়ী হয়েছিল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। যে নির্বাচনের পূর্বে ৬টি পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগেই বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সরে দাঁড়ান।

ওই নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারনে ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিএনপির প্রর্তীকে নির্বাচন করার কারনে মোট ৭জন বিএনপি নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার। অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলো- কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওমর আলী, বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকবর আলী সুমন, আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন, কুতুবপুরে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আলী আকবর, কায়েতপাড়া বিএনপি নেতা গোলজার হোসেন ও বিএনপির মনোনয়ন না নেয়ার কারনে ফতুল্লা থানা বিএনপির ওই সময়কার সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টু। তৈমূর আলমের বাসায় নির্বাচনী বৈঠকে সেন্টুকে ডেকেও ধানের শীষ প্রতীক দেয়া যায়নি। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। যদিও তিনি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত রয়েছেন বর্তমানে।

এ ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধুমাত্র ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহামুদুল হক আলমগীর লড়াই করেছিলেন। কিন্তু তার নিজের ভোটটিই তিনি দিতে পারেননি। তিনি যে তার ভোট কেন্দ্রে ভোটটি দিতে গিয়েছিলেন ওই ব্যালটটিতে নৌকা প্রতীকের সীল আগেই মারা ছিল। প্রিজাইডিং অফিসার ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে জানান তার ভোটটি দেয়া হয়েছে গেছে। তখন আলমগীর ভোটের ব্যালট প্রিজাইডিং অফিসারের দিকে ছুড়ে মেরে বের হয়ে যান।

ওই নির্বাচনে তৎকালীন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক যিনি বর্তমানে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের ‘দালালীর’ কারনে বিএনপির প্রার্থীরা সরে দাড়ান বলে অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে এনায়েতনগরের প্রার্থী আলমগীরের পক্ষে বিএনপি নেতারা কাজ করেনি। প্রার্থীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস।

যে কারনে নির্বাচনের পূর্বে মাসদাইরে তৈমূর আলমের বাসায় একটি নির্বাচনী বৈঠকে আজাদ বিশ্বাসের সামনেই আজাদ বিশ্বাসকে ‘দালাল’ বলে ঘোষণা দিয়ে শ্লোগান তুলেছিল নেতাকর্মীরা। বৈঠকের এক পর্যায়ে জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজাদ বিশ্বাসের সামনেই আঙ্গুল উচিয়ে বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস শামীম ওসমানের দালাল, আওয়ামীলীগের দালাল। বিএনপিকে ডুবানোর জন্য সে কাজ করছে। তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’ ওই সময় আজাদ বিশ্বাস চুপসে বসে থাকেন। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রতিবেদক ওই সভার নিউজ কভারেজ করতে সভায় উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্বাস উদ্দিন ভুঁইয়া, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রসুল, ভোলাব ইউনিয়নে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আলমগীর হোসেন টিটু, মুড়াপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান পারভেজ, কায়েতপাড়ায় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট গোলজার হোসেন। নির্বাচনে রূপগঞ্জ ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদে আলমগীর হোসেন টিটু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এসব নির্বাচনগুলোতে সরকারি দলের সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আঁতাতের অভিযোগ ওঠেছিল। গোলজার হোসেন নির্বাচনের দলের প্রার্থী হলেও তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে জেলা বিএনপির ওই সময়কার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আতাতের অভিযোগ ওঠার পর তাকে শোকজ করেছিলেন তৈমূর আলম। তখন জেলা বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি মুহাস্মদ শাহআলমকে শোকজ করা হলেও তৈমূর আলমকে কোন জবাবই তারা দেননি। শোকজ করা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে তখন তৈমূর আলম কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারেনি। তাদের দুজনকে শোকজের বিষয়টি তখন সান নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছিলেন তৈমূর আলম।

একই বছরের ২৮ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ ও আড়াইহাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আড়াইহাজারে ভোট গ্রহণের পুর্বেই ৭টি পরিষদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়ে যান। ভোট গ্রহণের পর বাকী ৩টি পরিষদেও আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়।

আড়াইহাজারে ৭টি পরিষদে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারলেও যার মধ্যে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগেই ৪জন বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আর বাকী তিনজন নির্বাচনে নামেমাত্র অংশগ্রহণে থাকলেও কোন ধরণের গণসংযোগও করতে পারেননি এলাকায়। তবে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নে মোঃ লাক মিয়াও বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপির প্রার্থী সামসুল হক আদালতে আপিল করে তার মনোনয়ন পত্র বৈধ হলে ভোট গ্রহণে লাক মিয়াই নির্বাচিত হন। এখানে বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং ও আঁতাত থাকায় দাড়াতেই পারেনি বিএনপির প্রার্থীরা। শীর্ষ নেতারাও এগিয়ে আসেনি প্রার্থীদের পাশে।

একই দিনে জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭টিতে আওয়ামীলীগ, দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও একটিতে জাতীয় পাটির প্রার্থী নির্বাচিত হন। এখানে ১০টি পরিষদের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী দিলেও সনমান্দি ইউনিয়নে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। যার ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেছেন।

রহস্যজনক কারনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের আপত্তির কারনে সনমান্দি ইউনিয়নে বিএনপি কোন প্রার্থী দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠেছিল। কাচঁপুর ইউনিয়নে ফজলুল হক, সাদিপুর ইউনিয়নে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া মাছুম, জামপুরে বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার জাহিদ টুলু, শম্ভুপুড়ায় বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, নোয়াগাঁওয়ে ডা: মিজানুর রহমান, বারদি ইউনিয়নে সেলিম হোসেন দিপু, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে আবু তালেব, পিরোজপুর ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম বিডিআর ও মোগড়াপাড়া ইউনিয়নে সাজ্জাদ পারভেজ চৌধুরী চপলকে বিএনপি থেকে মনোনিত করা হয়েছিল।

এর মধ্যে অভিযোগ ওঠেছিল- সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান নৌকার প্রার্থীর সাথে আঁতাত করে বারদি ইউনিয়নে ড্যামী প্রার্থী হিসেবে যুবদল নেতা ও মান্নানের পিএস সেলিম হোসেন দিপুকে প্রার্থী দেয়ার অভিযোগ ওঠেছিল। একইভাবে পিরোজপুরে ইউনিয়নেও মান্নান চেয়েছিল তার আত্মীয় আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীকে সুবিধার্থে তার বিপক্ষে যুবদল নেতা আব্দুর রউফকে ড্যামী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে। আব্দুর রউফকে প্রার্থী হিসেবে মান্নান ঘোষণাও করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে ধানের শীষ পান বিডিআর রফিক। যে কারনে নির্বাচনে বিএনপির বিরোধীতা করেছিলেন মান্নানের লোকজন।

ওই বছরের ৫জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জাতীয়পার্টির তিনজন ও আওয়ামীলীগের দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হন। ৫টি পরিষদের মধ্যে বিএনপি তাদের ৪টিতে প্রার্থী দিলেও একটিতেও জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে মদনপুর ইউনিয়নে বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া হিরন, বন্দর ইউনিয়নে পারভেজ খান, ধামগড় ইউনিয়নে মাসুদ রানা ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নে থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন শিশির নির্বাচন করেছিলেন।

আওয়ামীলীগের সাথে সমযোতার মাধ্যমে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ বিএনপি কোন প্রার্থী দেয়নি বলেও সে সময় অভিযোগ ওঠেছিল। বাকী ৪টি পরিষদের মধ্যে তৈমূর আলম বলয়ের প্রার্থী ছিলেন ৩ জন ও বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম বলয়ের ছিল একজন প্রার্থী। এখানে তৈমূর বলয়ের নেতাকর্মীরা কাজ করেছিলেন কালাম পন্থী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবার আবুল কালাম ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল সহ তাদের অনুগামীরা কাজ করেছিলেন তৈমূর বলয়ের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে। যার কারনে বিএনপিকে একটিতেও জোরালোভাবে লড়াইটাও করতে পারেন। ফলাফল বিএনপির ধানের শীষের ভরাডুবি।

একই ঘটনা ঘটিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও। এখানে নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুুল কালাম। এসব নেতারা নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করলেও লড়াইয়ের চেষ্টায় নেমেছিলেন আলোচিত আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালও। নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন খানকে ধানের শীষ প্রার্থী করা হয়।

নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বারবার কঠোরভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে তিন নেতাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাখাওয়াতকে প্রার্থী করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে জোড়ালোভাবে কাজ করেননি বলেও অভিযোগ ওঠেছিল। নির্বাচনের সময়ই প্রার্থী নিয়ে মিডিয়াতে অসন্তোষ প্রকাশের আভাস দিয়েছিলেন তৈমূর। নির্বাচনের পর প্রার্থীরা চরম বিরোধীতা করে মিডিয়াতে বক্তব্য রাখেন।

এমনকি নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচনে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠেছিল তৈমূর আলমের বিরুদ্ধে। জেলা মহিলা দলের নেত্রী নুরুন্নাহারকে ধানের শীষের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে বলেছিলেন তৈমূর- এমন বিষয়টি নেত্রী গয়েশ^র রায়কে জানিয়ে দিলে লঙ্কাকান্ড ঘটে যায়।

বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আইভীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের সামনে ধানের শীষ ব্যাচ লাগিয়ে দাঁড়াতে দু’চারজনকেও দেখা যায়নি। নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সিটির ১৩নং ওয়ার্ডে, গিয়াসউদ্দীন আহম্মেদের ছেলে জিএম সাদরিল ৫নং ওয়ার্ডে, মহানগর বিএনপি নেতা শওকত হাশেম শকু ১২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হোন। ২৩নং ওয়ার্ডে আবুল কালামের ছেলে আশা নির্বাচন করলেও তিনি পরাজিত হোন। নির্বাচনের তিন শীর্ষ এই তিন নেতাকে তিনটি ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে দেখা যায়। তারা নেমেছিলেন তাদের স্বজনদের কাউন্সিলর নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে তাদের অবস্থান ছিল না।

ওই নির্বাচনের পর ২০১৭ সালে ফতুল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে আওয়ামীলীগের আয়োজিত সমাবেশে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘আজকে আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’ একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা মনিরুল আলম সেন্টুও সরকারি দলের এমপি মন্ত্রীদের মঞ্চে থেকে সরকারের প্রসংশা করেছিলেন। এর বেশকিছু দিন পূর্বে সেন্টু বলেছিলেন, শামীম ওসমান উন্নয়ন করে জনগণের পীর হয়ে গেছেন। তাকে জনগণ আবারো নির্বাচিত করবে। এছাড়াও ওই বছরের ৩০জুলাই বন্দরের একটি অনুষ্ঠানে জাতীয়পাটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল বলেছিলেন, আমি সব সময় এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে থাকবো।

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষে বিএনপি নেতারা হুমরি খেয়ে পড়েছিলেন। সেলিম ওসমানের নির্বাচনী সভায় বন্দরে ছিলেন মুকুল। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবেও বিএনপির বেশকজন নেতা ছিলেন। সেলিম ওসমানের পক্ষে প্রকাশ্যে মিছিল নিয়ে ভোট প্রার্থনা করায় যদিও শহর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন দেওয়ানকে অব্যাহতি দিয়েছিল তৈমূর। বাকিদের বেলায় কিছু হয়নি। যদিও এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। এ নির্বাচনে বিএনপি নেতা হান্নান সরকারও কাজ করেছিলেন লাঙ্গলের পক্ষে। তিনি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও মেয়র আইভীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এমপি সেলিম ওসমান অন্যতম ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাশেম শকু। এসব নেতারা গত জাতীয় নির্বাচনে প্রকাশ্যে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের বিরোধীতা করে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন যা সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমে তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ছবি সহ নিউজ হয়েছিল।