‘মাদকসেবী’ অভিযোগ নিয়ে নীরব খোরশেদ বলয়: তাহলে কি মন্তুর বক্তব্যই সত্য?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ অনুগামীদের একটি অনুষ্ঠানকে ‘মাদকসেবীদের মিলন মেলা’ হিসেবে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু। তবে মমতাজ উদ্দীন মন্তুর এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত খোরশেদ অনুগামীদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিবাদও লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে মমতাজ উদ্দীন মন্তুর এমন দাবিই কি সঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন মহানগর যুবদলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মমতাজ উদ্দীন মন্তু মন্তব্য করেছিলেন ওই অনুষ্ঠানের ‘মঞ্চের ৭ জনের মধ্যে ৬জনই মাদকসেবী।’

এদিকে অভিযোগ ওঠেছে- নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের রাজনীতিতে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র চালু করেছেন সংগঠনটির সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি যুবদলের মধ্যে গণতন্ত্র হরণ করতে চাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। করোকানালে তিনি নিজেকে হাইলাইট করতে আত্মপ্রচারে ব্যস্ত থাকলেও মহানগর যুবদলের ব্যানারে এক মুঠো চালও তিনি বিতরণ করেননি। করোনা পরিস্থিতি শিথিল হওয়ার পথে কমিটি গঠনেও তিনি স্বৈরচারি মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। যে কারনে মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু সহ শীর্ষ নেতারা খোরশেদের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রীতিমত বিদ্রোহী হয়ে ওঠেছেন।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, চলতি মাসের ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের শীর্ষ ৫ নেতার সঙ্গে কমিটি গঠনের বিষয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় যুবদল। বন্দর, সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটি গঠনে খসড়ায় গড়মিল থাকায় পূণরায় কমিটি গঠনের জন্য নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশ- প্রতিটি থানা এলাকার যুবদল নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। তারপর কমিটি গঠন করা হবে। সেজন্য সুপার ফাইভের নেতাদের নিয়ে প্রতিটি এলাকায় তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণের জন্য মহানগর যুবদলের হাতে ফরম তুলে দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।

ওই বৈঠকে মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে বেশ তোপের মুখে পড়েন খোরশেদ। ওইদিন কেন্দ্রীয় নেতাদের তিন নেতা জানান- করোনাকালে মহানগর যুবদলের ব্যানারে খোরশেদ একটি কর্মসূচিও পালন করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নামে ব্যক্তি প্রচারনায় ব্যস্ত ছিলেন। দীর্ঘ ৫টি মাস তিনি করোনাকালে কাজ করলেও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামটিও মুখে নেননি।

ওই বৈঠকে খোরশেদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তোলা হয়- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও মিডিয়াতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি দলের দুই এমপি, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আওয়ামীলীগ নেত্রী সেলিনা হায়াত আইভীর প্রশংসা করেছেন বারবার। টিম খোরশেদ নামে তিনি কাজ করলেও তিনি মহানগর যুবদলের সভাপতি এবং বিএনপির রাজনীতি করেন সেটা তিনি ভুলেই গেছেন। তিনি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দলীয় শীর্ষ প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ভিন্ন স্বপ্ন দেখছেন।

এমপি সেলিম ওসমান একটি অনুষ্ঠানে খোরশেদকে বীর বাহাদুর মন্তব্য করায় সেটাকে খেতাব হিসেবে দেখে খোরশেদ ও তার অনুগামী কিছু চাটুকার খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তারা বিএনপিকেই ভুলে গিয়ে সরকারি দলের এমপির প্রশংসায় ভাসতে থাকেন। দলের নীতি আদর্শ ভুলে গিয়ে সরকারি দলের এমপির প্রতি খোরশেদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়ে।

আরও অভিযোগ করা হয়- স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে খোরশেদ দশ লাশ টাকা নিয়েছেন যা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যদিও খোরশেদ টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। আবার কদিন পরেই তিনি স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেছেন যা মিডিয়াতে এসেছে। এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে একটি অনুুষ্ঠানেও ছিলেন খোরশেদ। খোরশেদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ তোলা হয় ওই বৈঠকে।

এদিকে কেন্দ্রীয় যুবদলের দেয়া তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণে সুপার ফাইভের ৫ নেতাকে নিয়ে বিতরণের জন্য নির্দেশ দিলেও ১৫ সেপ্টেম্বর খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় তার বাড়িতে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছেন। যেখানে সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র সহ-সাগর প্রধান সহ সিনিয়র নেতাদের রাখেননি খোরশেদ।

এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের আওতাধীন বন্দর থানায় যুবদলের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছেন সুপার ফাইভের ওই শীর্ষ তিন নেতা। যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন বন্দর থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি কাজী ফিরোজ আহম্মেদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা কমিটির সেক্রেটারি আহাম্মদ আলী ও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা সহ শীর্ষ পর্যায়ের অন্যান্য নেতারা।

এই কর্মসূচিতে মুলত কাউন্টার দিতেই পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডের এনায়েতনগর এলাকায় সদস্য ফরম বিতরণ ব্যানারে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছেন মহানগর যযুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু। যেখানে সভাপতিত্ব করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধান। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু ও বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগরীর যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন। ওই অনুষ্ঠানে সেক্রেটারি মন্তুকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি পদেও দায়িত্বে রয়েছেন মন্তু। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাই মমতাজ উদ্দীন মন্তু ও সাগর প্রধান।

এদিকে ২১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছেন মমতাজ উদ্দীন মন্তু। এতে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাগর প্রধানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন। এতে আহাম্মদ আলী, নাজমুল হক রানাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতাজ উদ্দীন মন্তু বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে যে প্রোগাম হয়েছে সেটা যুবদলের কোন প্রোগ্রাম হয়নি। সেটা হয়েছে মাদকসেবীদের মিলন মেলা। মঞ্চের ৭ জনের মধ্যে ৬জনই মাদকসেবী। কেন্দ্রে খসড়া কমিটিতে নাম পাঠানো তিন জনের নামের উপর লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেছেন যুবদলে কোন মাদকসেবী থাকবে না। তিনজন মাদকসেবী। ১৮ তারিখে সেইসব মাদকসেবীদের নিয়ে প্রোগ্রাম করা হয়েছে। আমাদের চেয়েও বেশি খোজ খবর কেন্দ্রীয় নেতারা রাখেন।