নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলে কলঙ্কজনক অধ্যায়

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

এবার নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ দেড় যুগ পর কমিটি গঠনের পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জুতা ঝাড়ু মিছিল করে এবং মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের ছবি বিকৃত করে ব্যানার বানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। যা ছাত্রদলের সাবেক নেতারা ভাল চোখে দেখছেন না। অতীতেও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর অভিযোগ ওঠেছিল। কিন্তু এ রকম অরাজনৈতিক কর্মকান্ড অতীতে দেখা যায়নি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহম্মেদের ছবি বিকৃত করে এবং ব্যানারে ইয়াবার ছবি লাগিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বন্দর থানা ছাত্রদলের ব্যানারে ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এই বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তবে ছবি এমনভাবে বিকৃত করে ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করাটা দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে অবহিত করেছেন সাবেক নেতারা। বিষয়টি ন্যাক্কারজনক বলেও দাবি করেছেন।

এর আগের দিন ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুুর বিরুদ্ধে জুতা ও ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন মহানগর ছাত্রদলেরই সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান সুুমন। এর ফলে এবার ছাত্রদলের রাজনীতিতেও জুতা ঝাড়ু মিছিলের প্রচলন শুরু হলো। ২০১২ সালের পর জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা কয়েক মাস জুতা ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন। এবার ছাত্রদলেও সেই কলঙ্ক লেগে গেল।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের আওতায় ঘোষিত ৬টি ইউনিট ঘোষণা করায় কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও দুই নেতার বিরুদ্ধে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন হামিদুর রহমান সুমন।

১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ু মিছিল করে বেলা ১টায় চাষাঢ়া প্রেসক্লাবের সামনে এসে মানববন্ধন করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহম্মেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। ব্যানারে সাহেদ ও বাবুর ছবিতে গলায় জুতা ঝুড়ে দিয়ে ব্যানার বানানোও হয়।

এর আগে কমিটির গঠনের পর মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান সুমন অভিযোগ করেন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাবুর নেতৃত্বে গতকাল ছাত্রদলের ৬টি ইউনিট গঠন করা হয়েছে যা সম্পূর্ন বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় কমিটির মশিউর রহমান রনিও তাতে জড়িত ছিল। আমরা মুখে শুধু জিয়ার সৈনিক বলে কাজ করি বাণিজ্যিক কমিটি। অছাত্র, গার্মেন্টস কর্মী, মাদক ব্যবসায়ী দিয়ে গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, গার্মেন্টস কর্মীকে নারায়ণগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। অবিলম্বে এ কমিটি বিলুপ্ত করা হোক। না না হলে আমাদের এ আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহম্মেদ দাবি করেন- রাজুর বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। এখনও সে সাজাপ্রাপ্ত না। তাই তাকে মাদক ব্যবসায়ী বলা যায়না। আর বর্তমান সরকারের পুলিশের এত্ত এত্ত নির্যাতন নিপীড়ন যা সকলেই দেখছেন। পুলিশ যা ইচ্ছা তাই করছে। আমরা যতটুকু বুঝেছে রাজুকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমাদের কাছে এমনটাই মনে হয়েছে। তাই আমরা চাইনি একজন উদীয়মান ছাত্র নেতার রাজনৈতিক ভবিষৎ এখানেই শেষ হয়ে যাক।

নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়েছে সে রকম তো কম দেখা যায়- এক্ষেত্রে সাহেদ উদাহরণ স্বরুপ বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানকে ধরে নিয়ে মাদক মামলা আসামি করেছিল পুলিশ। এ রকম অনেকেই ঘটনা রয়েছে।

সদস্য সচিব পদে লিমনের নাম জমা দিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে সাহেদ বলেন, বিকল্প হিসেবে আমরা অনেকেরই নামই দিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাছাই করে রাজুকে দেয়া হয়েছে।

ছবি বিকৃতি করে ব্যানার বানিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে সাহেদ আহম্মেদ বলেন, যার মন মানসিক অবস্থা বিকৃত তারাই এসব বিকৃত কর্মকান্ড করতে পারে। আর যারা এসব কাজে পেছন থেকে সহযোগীতা করেন তারাও বিকৃত মানসিকতার বলে আমি মনে করি।

এসব কর্মকান্ডে জড়িত যারা রয়েছে তাদের বিষয়ে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কোন উদ্যোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘অবশ্যই এসব কাজ দলীয় শৃৃঙ্খলা ভঙ্গ। সময়স্বাপেক্ষে এ বিষয়ে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সাহেদ আহমেদ দাবি করেন- যারা মিছিল করেছেন তারা ছাত্রদলের কেউ না। তারা চাঁনমারী বস্তির ছেলে পেলে। দুএকজন ছাত্রদলের থাকলেও থাকতে পারে। বাকিরা বস্তির পোলাপান।’