মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের তিন নেতা একজোট, কোণঠাসা মামা-ভাগনে!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত মার্চ মাস থেকে করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পক্ষ থেকে কোন একটি কর্মসূচি পালন না করে ব্যক্তি স্বার্থে নিজেকে প্রচারে রেখেছিলেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এমন বিষয়টি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরেছিলেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা। যুবদলকে অবজ্ঞা করে খোরশেদ নিজেকে হাইলাইট করে সংগঠনের চেয়েও নিজেকে বড় করে প্রচার করেছিলেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়।

এমনকি টিম খোরশেদের নামে তিনি করোনায় কাজ করলেও কখনও তার দলের প্রধান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও মুখে জপেননি। রহস্যজনক কারনে তিনি সরকারি দলের এক নেতা ‘বীর বাহাদুর’ আখ্যায়িত করায় তিনি স্বাদরে গ্রহণ করেন। তার অনুুগামী নেতাকর্মীরা সরকারি দলের নেতার এমন খেতাবে আত্মাহারা হয়ে দলকেই ভুলে যান।

কেন্দ্রে আরও অভিযোগ তোলা হয়- করোনা পরিস্থিতিতে মহানগর যুবদলের অন্যান্য নেতারা দলের পক্ষে মানুষের পাশে দাঁড়ালেও খোরশেদ সরকারি দলের বেশকজন নেতার বাহবা ও খেতাব পেয়ে নিজ সংগঠনের কার্যক্রমই ভুলে যান। নেতাকর্মীরা বলছেন- বিএনপির মুলমন্ত্র থেকে বিচ্ছিন হয়ে পড়েছেন খোরশেদ। কারন বিএনপির মুলমন্ত্র হলো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু খোরশেদের কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়- সেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় যুবদলের এক মিটিংয়ে।

একই সঙ্গে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরাও বিষয়টি বুঝতে পেরে তার নেতৃত্ব থেকে সটকে পড়েছেন। যেখানে মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের শীর্ষ তিন নেতার ঐক্যে এবার কোণটাসা হয়ে পড়েছেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার ভাগনে সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু। যদিও রশুকে মামার সঙ্গেও রাজনীতিতে তেমনটা দেখা যায়না। সেই সঙ্গে মামা সভাপতি হওয়ার কারনে এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রশু হয়ে গেছেন ভেলুলেস। কারন তার কোন মতামত বা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি কমিটি গঠনের পর। এদিকে গত সপ্তাহে বৈঠকে কেন্দ্রীয় যুবদলের সঙ্গে কমিটি গঠনের বিষয়ে মহানগরীর তিনটি থানার নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে পূনরায় কমিটি তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়। এর জন্য নেতাদের হাতে তথ্য সংগ্রহ ফরম তুলে দেয়া হয়। সেই ফরম বিতরণে এবার ভিন্ন চিত্র। খোরশেদের নেতৃত্ব ছেড়েছেন সিংহভাগ নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে জানাগেছে, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন খোরশেদের স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। এদের সঙ্গে রয়েছেন মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা, আহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক মুছা, ফিরোজ আহম্মেদ সহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। মামা খোরশেদ ও ভাগনে রশুকে বাদেই এবার বন্দর থানায় তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছে মহানগর যুবদল।

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন বন্দর যুবদলের আওতাধীন ৯টি ওয়ার্ড যুবদলের নেতাকর্মীদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্দরের কবিলের মোড় এলাকায় মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানার বাড়িতে মহানগর যুবদলের আয়োজনে নেতাকর্মীদের মাঝে এই তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা।

তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণের পূর্বে আলোচনা সভায় অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নাই। মানুষের কোন অধিকার নাই। বাক স্বাধীনতা নাই। আইনের শাসন নাই। একদলীয় শাসন চলছে এখন। তাই গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হলে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে হবে।

এছাড়াও শীর্ষ নেতারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের রাজনীতি কারো একক ব্যক্তিগত মতামতে পরিচালিত হবে না। যুবদলের কোন নেতাকর্মী কোন ভাইয়ের রাজনীতি করবে না। আমরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনায় রাজনীতি করবো। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে আমাদের দলের স্বার্থ দেখতে হবে। কেউ এমপি মন্ত্রী মেয়র হবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যুবদলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব নয়। যুবদলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী ও সু-সংগঠিত করা।

নেতারা আরও বলেন, মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের মাঝে মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। সেটা কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যাবে না। আমরা সিনিয়র নেতারা এক হয়ে যাবো। কর্মীদের দায়িত্ব দলকে সু-সংগঠিত করে দলের আন্দোলন সংগ্রাম সভা সমাবেশে সক্রিয় ভুমিকা পালন করা।

রাজপথে সক্রিয় নেতাকর্মীদের প্রতিটা ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠনের মাধ্যমে মুল্যায়ণ করা হবে বলেও আশ^স্থ করেন শীর্ষ নেতারা। ব্যক্তি স্বার্থে নয় দলের স্বার্থে কাজ করার জন্য সকল নেতাকর্মীদের প্রতিও আহ্বান জানান বক্তারা।

এ ছাড়াও মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুসার উপর হামলায় লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বক্তারা দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষৎে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা দেখতে চাইনা। কারন যুবদলের প্রতিটা নেতাকর্মী বিএনপির কর্মী। তারা কারো ব্যক্তিগত কর্মী নয় যে যেনো তেনো আচরণ করা হবে। তারা দলের কর্মী, তারা দলের জন্য কাজ করে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের উপর নিজেরাই আচর দিলে একশত বার ভাবা উচিত।

এর আগে নেতারা জানান, প্রতিটি নেতাকর্মীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় যুবদল থেকে তথ্য সংগ্রহ ফরম দেয়া হয়েছে। এই তথ্য সংগ্রহ ফরমে নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক তথ্য দেয়া থাকবে। এসব ফরম পূরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে তুলে দেয়া হবে।

এদিকে জানাগেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বাসায় তার অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে সুপার ফাইভের তিন নেতা সহ অনেককেই জানানো হয়নি। ওইদিন সেখানে গেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক মুছার উপর হামলা করে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে খোরশেদের বিরুদ্ধে।