এমপিদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম: আইভীর ভুমিকায় ক্ষুব্ধ জনতা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ ছাপিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত দেশের প্রথম কোন সিটি কর্পোরেশনের একমাত্র নারী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভুমিকায় চরম ক্ষুব্দ নারায়ণগঞ্জের মানুষ। যেখানে জেলার ৫জন এমপি করোনা মোকাবেলায় যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন। তবে জেলায় করোনায় আক্রান্ত মানুষের সেবার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন এমপি একেএম সেলিম ওসমান ও এমপি একেএম শামীম ওসমান। কারন জেলায় করোনা রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপাতালটিকে। এখানে সার্বিক বিষয়টির তদারকিতে রয়েছেন এই দুই এমপি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ যাকে বারবার ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন সেই সব মানুষকে চরম হতাশ করেছেন মেয়র আইভী।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়- নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেছেন। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি তিনি গরীব অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন দিনরাত। নিজের হাতে রাতের আধারে ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন সাধারণভাবে চলা এই এমপি।

চিকিৎসা ব্যবস্থার সুবিধার্থে তিনি সার্বক্ষনিক এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন। দুটি স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করেছেন। একটি টিম খাদ্য সামগ্রী মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছেন। এখনও লকডাউনে থাকা ও করোনায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে এমপি খোকা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। আরেকটি টিম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত লাশ দাফণে কাজ করছে। এই টিম ইতিমধ্যে ১৬টি লাশ দাফনে কাজ করেছে। করোনার শুরু থেকেই সচেতনতা বাড়াতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ শুরু করেন তিনি। করোনায় যখন প্রান্তিক কৃষক শ্রমিক সংকটে পড়েছে তখন তার স্বেচ্ছাসেবী টিম কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন।

একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুও করোনা পরিস্থিতিতে নিজ হাতে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। একইভাবে তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার সুবিধার্থে এ্যাম্বুলেন্স সেবা সহ চিকিৎসা সেবার সুবিধায় কাজ করেছেন। নিজ হাতে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এই এমপি। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সার্বক্ষনিক কাজ করছেন। তিনিও অন্যান্য এমপিদের সঙ্গে কাজ করছেন।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর। তিনি একই সঙ্গে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী। তিনি তার নিজ আসন রূপগঞ্জের মানুুষের চিকিৎসার বিষয়টি মাথায় রেখে ল্যাব স্থাপন করেছেন নিজ উদ্যোগে। তিনি নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে স্বশরীরে না থাকলেও তার উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ চলছে।

তবে স্থানীয়দের মতামত- এসব এমপিদের চেয়েও করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণে ও গরীব মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রেখেছেন এমপি সেলিম ওসমান ও এমপি শামীম ওসমান।

গত মার্চে সরকার গণপরিবহন বন্ধ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে কমপক্ষে ১২ লাখ শ্রমিক সহ সাধারণ দিন মজুর। যার মধ্যে গরীব অসহায় দিনমজুুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলো রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ান ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নও।

তিনি করোনার শুরুতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ১০ হাজার স্যানিটাইজার, ১০ হাজার মাস্ক দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে ছাত্রলীগের বিশাল নেতাকর্মীর বাহিনী। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডসহ ফতুল্লা এলাকায় অয়ন ওসমানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে জীবাণুনাশক ছিটানো হয় অলি গলিসহ বিভিন্ন সড়কে। সেই সঙ্গে ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এদিকে সাধারণ ছুটি বাড়ানোর পর কর্মহীনদের খাদ্যের অভাব অতিমাত্রায় শুরু হলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কর্মহীন ও বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে এগিয়ে আসেন জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও এমপি শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি। তিনি ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহর এলাকায় রাতের আঁধারে সালমা ওসমান লিপির ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে পাঠানো হয়।

অপরদিকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেন শামীম ওসমান। এর মধ্যে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে কর্মহীন ও মধ্যবিত্ত ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে রাতের আঁধারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তার নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তিনি দুস্থ কর্মী, বিভিন্ন সংগঠন, নানা শ্রেণী পেশার ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে নগদ ৪০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তাও দেন। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি গণমাধ্যম, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য সহায়তায় নিযুক্তদের মধ্যে ৫০০ পিস ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করা হয় শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ নগরীর কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার হকার পরিবার ও পরিবহন সেক্টরের প্রায় ২ হাজার পরিবারকেও খাদ্যসামগ্রী দেন শামীম ওসমান। এর পাশাপাশি শামীম ওসমানের আহ্বানে তার সমর্থক দলীয় নেতারা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মোট ৩৮ হাজার ৫শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন।

অন্যদিকে ওসমান পরিবারের আরেক সন্তান বিকেএমইএর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ২০ হাজার ৬শ’ দুস্থ পরিবারকে রমজানে খাদ্যসামগ্রী কিনতে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেন। এ টাকা দেওয়া হয় মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট বা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জিজিটাল পদ্ধতিতে।

সিটি করপোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ডের সব কাউন্সিলর এবং বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারদের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ এলাকার সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ মানুষদের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া রমজান মাসে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে পারে এমন শিক্ষিত বেকার যুবকদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ২০ জন করে মোট ৪৮০ জন যুবককে রমজান মাসের জন্য ৪ হাজার ৫শ টাকা করে সম্মানি দেওয়া হয়।

পাশপাশি করোনায় মৃত্যু ব্যক্তিদের মরদেহ দাফন ও দাহ করতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর খোরশেদকে ১০ লাখ টাকা এবং খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও ২০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানান সেলিম ওসমান। যদিও খোরশেদ সেই টাকা না নিয়ে গরীবদের মাঝে বিতরণ করার আহ্বান জানান এবং বিতরণ করা হয়।

এছাড়াও ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক যারা ত্রাণ ও সেবায় নিয়োজিত তাদেরও নয় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের আনা নেওয়ার কাজে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলদের মাধ্যমে এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ কেজি করে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রথম থেকে কোমর বেঁধে মাঠে নামেন ওসমান পরিাবরের দুই এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। জেলাকে লকডাউন করতে অনুরোধ করা সহ পরপর দুইবার টেলিভিশনের লাইভে এসে হাতজোড় করে জেলাবাসীর জন্য করোনা ল্যাব স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান শামীম ওসমান। জেলার প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের আর ক্লিনিক চালাতে পারবে না। শামীম ওসমানের আহ্বানে চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা সংগ্রহের জনবল দেওয়া হয় এবং তাদের সহায়তায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে নমুনা সংগ্রহকারীদের জন্য ২টি সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স দেন শামীম ওসমান।

শামীম ওসমানের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আইসিইউ এর ব্যবস্থা হয় শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায়। ল্যাব স্থাপনের উদ্বোধন করেন সেলিম ওসমান। দুই এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান করোনা চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকার জন্য শহরের নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, ডাক বাংলো ও একটি স্কুলে সার্বিক ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়টি চিন্তা করে যখন তারা এত্তসব কাজ করছেন তখন নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভুমিকা কি জনগণের পাশে? গত তিন মাসে মেয়র আইভীকে জনসম্মুখে দেখা গেছে দুইবার। এর আগে একবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন তার নির্দেশনায় সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলর কাজ করছেন। এর আগে একবার তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়। এরপর সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান এবং একই দিন তিনি সিটি কর্পোরেশনের সভায় উপস্থিত হোন। এ ছাড়াও জনগণের মাঝে তাকে আর দেখা যায়নি। অসহায় জনগণের মাঝে তার ভুমিকা এবং করোনা চিকিৎসার বিষয়ে তার উদাসীনতায় নারায়ণগঞ্জের জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার চরম ক্ষুব্ধতার বিষয়টি প্রকাশ করছেন।