শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ দাবিতে ডিসি বরাবর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের স্মারকলিপি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচি করোনা পরিস্থিতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। ২১ জুন রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীনের হাতে এই স্মারকলিপি পৃথকভাবে তুলে দেন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। ওই সময় করোনা পরিস্থিতির কারনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।

স্মারকলিপিতে করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা নারায়ণগঞ্জের সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতনের উপর নির্ভর করে থাকা শিক্ষকদের বেতনের ঘাটতি সরকারি তহবিল থেকে পূরণের দাবি জানানো হয়।

এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীব এবং মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন নেতারা।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে মশিউর রহমান রনি উপস্থিত নেতাকর্মী ও সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্ররাই হলো ছাত্রদলের প্রাণ। সেজন্য সকল দুঃসময়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি আদায়ের জন্য ছাত্রদল প্রাণপণ লড়াই করতে প্রস্তুত। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি জেলা প্রশাসক সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষর্থীদের বেতন মওকুফের দাবির বিষয়টি ভালভাবে দেখবেন।

স্মারকপিলি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি খাইরুল ইসলাম সজীব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সহ-সভাপতি কামরুল হাসান মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী নাহিদুল ইসলাম সাদ্দাম, আরিফ খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক হাসানুজ্জামান লিমন, জেলা ছাত্রদল নেতা আতা-ই-রাব্বি, মোবারক হোসাইন, সোহেল রানা, জহিরুল প্রধান, আদিত্য প্রধান ফরহাদ, রবিউল ইসলাম প্রধান, হাসান, সিফাত আদনান, শাকিল আহমেদ, রিয়াদ আহম্মেদ, মাহফুজ ও সঞ্চয় প্রমুখ ।

স্মারকলিপিতে ছাত্রদল উল্ল্যেখ করেছে যে, জাতীয়বাদী ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে সোচ্চার। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেরও লকডাউনের কারণে স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশসহ বিশ^ অর্থনীতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বেতন সহ পড়াশোনার খরচ চালানো তাদের অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি সদয় হয়ে সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বেতনাদি মওকুফ করে দিলে তা হবে মানবতার জন্য এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। সরকারী ও বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয় এবং স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে টেলিভিশন, অনলাইনে কিছুটা কার্যক্রম চালু থাকলেও সেটি সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। কিছু পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীন দুই হাজারের বেশী কলেজ এর বাইরে আছে। এক জরিপে দেখা গেছে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস চালানো সম্ভব নয়। এমনকি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরও অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সঙ্গতি নেই। এটির অন্যতম কারণ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবার থেকে আসে। বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী বর্তমানে গ্রামের বাড়ীতে আছে। তাদের অনেকেই স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ডাটা ক্রয়ের আর্থিক সামর্থ্য নেই। এর ওপর অনেকের এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করে শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করে, সেটাও করোনা মহামারীর কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ইন্টারনেটের উচ্চ মূল্য, মূল্যবান ডিভাইস কেনাও অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব, এর ওপর অনেক স্থানে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারণে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস বা পড়াশোনা অব্যাহত রাখা একেবারেই অসম্ভব। তাই সরকারী ও বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজে এই মূহুর্তে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস, ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য আপনার নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে করোনা মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী রাজস্ব থেকে বেতন পায় না এবং ঐসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভরশীল সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘাটতি সরকারী তহবীল থেকে পূরণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরও দাবি করা হয়- করোনার অর্থনৈতিক আঘাতে হয়তো অনেকের শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে উদ্ভব যাতে না হয় সেজন্য পরিবারিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। তবে পরবর্তীতে করোনা মহামারীর গতি কিছুটা স্তিমিত হলে ভয়, শষ্কা ও উদ্বেগকে পেছনে ঠেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও সেশনজট সামাল দিতে একটি পরিকল্পিত সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিতে এগিয়ে যাওয়াটা সমীচীন হবে বলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে। অবিলম্বে উল্লিখিত দাবিগুলির প্রতি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছি এবং অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের জন্য আহবান জানাচ্ছি।