আজাদকে নিয়ে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড: যুগান্তরের সংবাদে তোলপাড়

সান নারায়ণগঞ্জ টুযেন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বর্তমানে বেশ আলোচিত কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। এদের মাঝে অনেকটা রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে আড়াইহাজারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন আজাদ। এ নিয়ে স্থানীয় সরকারি দলের এমপির বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এদিকে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ওঠে এসেছে নজরুল ইসলাম আজাদকে নিয়ে বিব্রত বিএনপির হাই কমান্ড। গত ৮ জুন সংবাদটির শিরোনাম ছিল ‘তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি, মূল্যায়ন হবে দুস্থদের পাশে থাকা কর্মীদের’। এই সংবাদে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বেশ আলোচিত হয়েছে সংবাদটি। এ সংক্রান্ত যুগান্তরের সংবাদটি হুবহু প্রকাশ করা হলো-

করোনা মহামারীর এ সময়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে থাকা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর যেসব নেতাকর্মী এ সংকটে কাজ করছেন তাদেরও পুরস্কৃত করা হবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।

এদিকে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কয়েক নেতার কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা।

৪ মে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উপদেষ্টা ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের ‘জাতীয় করোনা পর্যবেক্ষণ সেল’ গঠন করে বিএনপি। পরে বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। তারা মূলত করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে কোন কোন নেতাকর্মী অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন তার তথ্য সংগ্রহ করছেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগান্তরকে বলেন, মামলায় জর্জরিত আমাদের নেতাকর্মীরা। তারপরও এ পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা ৪১ লাখেরও বেশি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। বিএনপি সব সময়ই ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে। করোনা পরিস্থিতিতে যারা মানুষের জন্য কাজ করছেন, তাদের অবশ্যই দল মূল্যায়ন করবে। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর যেসব নেতাকর্মী এ সংকটে কাজ করছেন তাদেরও পুরস্কৃত করা হবে। করোনা মহামারীর শুরু থেকেই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ সচেতনতামূলক কাজ করছে ছাত্রদল। পাশাপাশি বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের ধানও কেটে দিচ্ছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রদল মূলত ত্যাগী নেতাদের সংগঠন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যারা কাজ করছেন, আমরা অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন করব। সূত্র জানায়, করোনা পর্যবেক্ষণ সেল নেতাকর্মীর নাম, কত পরিবারের মাঝে ত্রাণ দিয়েছেন- এসব তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করছে। তা বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া হবে। এ সেল মানুষের পাশে থাকা নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের সুপারিশও করবে।

কয়েক নেতার কর্মকাণ্ডে বিব্রত হাইকমান্ড : নারায়ণগঞ্জের ফতেহপুর ইউনিয়নে সোমবার জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ত্রাণ বিতরণকালে মারধরের শিকার হন দলের কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। অভিযোগ উঠেছে, পাওনাদারের হাতে লাঞ্ছিত হলেও পরে তা কৌশলে সরকারি দলের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিএনপি থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ। দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, আড়াইহাজারের কয়েকজন নেতা ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এলাকায় দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ ত্রাণ নিয়ে আজাদ হাজির হলে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় অনেক পাওনাদারও হাজির হন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও পাওনাদাররা তাকে মারধর করেন। প্রকৃত ঘটনা গোপন করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়েছেন আজাদ। যা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু যুগান্তরকে বলেন, আজাদ এলাকার বহু মানুষকে বিদেশে পাঠাবে বলে টাকা নিয়েছে। এছাড়া এর আগেও পাওনা টাকা আদায়ের জন্য পাওনাদাররা তার গাড়ি আটকে রেখেছিল। তিনি আরও বলেন, আজাদ আড়াইহাজার কখন এলো বা গেল এ খবর আড়াইহাজার আওয়ামী লীগ রাখে না, প্রয়োজনও নেই।

সে মিথ্যা বলেছে। জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ত্রাণ বিতরণ শেষে ওইদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করে। এতে আমিসহ স্থানীয় বিএনপির অন্তত ২০ নেতা আহত হই। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার গোষ্ঠীর মধ্যে কেউ আদম ব্যবসায় জড়িত নেই।

এদিকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরীনকে করোনা পর্যবেক্ষণ টিমের বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক করা হলেও তিনি জেলার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শিরিনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অথচ তিনি আমার সঙ্গে এ পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। এলাকায়ও আসেননি। আমি টিমের সদস্য হিসেবে যে তথ্য কেন্দ্রীয় দফতরকে দেয়া দরকার তা দিচ্ছি। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, করোনা পর্যবেক্ষণ টিমের আহ্বায়ক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক একবারও এলাকায় আসেননি। তবে দু’বার আমাকে ফোন করেছেন।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন যুগান্তরকে বলেন, সব সময়ই আমার চলাফেরা মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। করোনা পর্যবেক্ষণ টিমের আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিটি জেলার নেতাদের সঙ্গে বহুবার ফোনে যোগাযোগ করেছি। বরিশাল বিভাগের ৪১ থানার মধ্যে ৩২ থানার তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় টিমের কাছে দিয়েছি।