জিয়াউর রহমান যে উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছিলেন তা নারায়ণগঞ্জে ব্যর্থ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র রক্ষা এবং যেকোনও দুর্যোগে জনগণকে স্বেচ্ছাসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ‘স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন’ যা পরে ‘জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮০ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৯ বছর পার করলেও স্বেচ্ছাসেবার আদর্শ থেকে বর্তমানে অনেকটাই বিচ্যুত হয়ে আছেন সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা। যা করোনা পরিস্থিতিতে তার প্রমাণ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল।

জানাগেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীদের সমন্বয়ে এই সংগঠন গড়ে তোলা হবে। সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, মহামারী সহ যেকোন জাতীয় দুর্যোগ, দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করবেন। কোনও কাজেই তারা ব্যর্থ হবেন না। অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হবেন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে এগিয়ে যাবেন।’

কিন্তু বিএনপির রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই দলের অঙ্গ সংগঠন নারায়ণগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দল স্বেচ্ছায় সেবা দেওয়া তো দূরের কথা, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে মূলদলের আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের কোনও ভূমিকা নেই। জিয়াউর রহমানের নির্দেশনা তার আদর্শের রাজনীতিতে নেই নারায়ণগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক দল। শুধু তাই নয় গত ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যেও জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এসব কারনে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন- যে উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছিলেন তা নারায়ণগঞ্জে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন এখানকার নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সেক্রেটারি মাহবুব রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দীন সালুর নেতৃত্বাধীন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ। করোনা মহামারিতে শুধুমাত্র সোনারগাঁয়ে দুএকটি কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের ছায়াও দেখা যাচ্ছেনা। অন্যান্য থানা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের এটুকু কর্মকান্ডও দেখা যায়নি। সভাপতি ও সেক্রেটারির ছায়াও দেখা যায়নি মহামারিতে। যে উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার কানাকুড়িও পালন করতে পারেনি তারা। রূপগঞ্জে ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের থানা ও পৌর এলাকার ব্যানারে বিএনপির একজন নেতা ও জেলা যুবদলের এক নেতার জন্মদিন পালনে রীতিমত উৎসব শুরু করেছেন।

একইভাবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা, সেক্রেটারি সাখাওয়াত ইসলাম রানা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুল ইসলাম ছুক্ককেও দেখা যায়নি জনগণের পাশে। যদিও আবুল কাউসার আশা তার নির্বাচনী ওয়ার্ডে তার ও তার পিতা সাবেক এমপি আবুল কালামের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের আর একজন শীর্ষ নেতাকেও অসহায় মানুষের মাঝে দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে সাংবাদিক কাজী সিরাজকে আহ্বায়ক করে ২৩ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন গঠন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার মৃত্যুর ১৯৮৫ সালের ১৯ আগস্ট কাজী আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে ২৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই দিনব্যাপী জাতীয় কাউন্সিলে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনকরা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথম সংগঠটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। ওই বছরের ১০ মার্চ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহল কবির রিজভীকে সভাপতি ও ফজলুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। তারা তিন বছরের জায়গায় টানা ১৩ বছর ধরে পদ-পদবিতে ধরে রেখে ছিলেন।