নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপিরা নাই একমুঠো চাল বিতরণে

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৮ মার্চ সর্বপ্রথম বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয় যারা নারায়ণগঞ্জে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে করোনা রোগীর শনাক্ত বাড়তে থাকে। সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সরকারি বেসরকারি সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কঠিন সমস্যার মুখোমুখী হয় গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলো।

এমন পরিস্থিতিতে এসব পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয় কয়েক দফায়। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতা সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনগুলো এসব পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন নিয়মিত। সেই সঙ্গে বর্তমান এমপি এবং সাবেক এমপিদের অনেকেই গরীব মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। যা যৎসামান্য। সাবেক যেসব এমপিদের এমন করোনা পরিস্থিতিতে গরীবের পাশে দেখা গেল না কিন্তু নির্বাচন আসলে এরাই সবার আগে দলের মনোনয়ন পেতে লড়াইয়ে নেমে যান। আবার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনও করেন।

কিন্তু এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পরেও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সামগ্রীর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন ক্ষুথার্ত মানুষ। এমন জেলার ৫টি আসনে সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ গরীব খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসলেও নারায়ণগঞ্জের বেশকজন সাবেক এমপিকে প্রকাশ্যে এক মুঠো চাল বিতরণ করতেও দেখা গেল না।

স্থানীয়দের সূত্রে- নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের তিন বারের সাবেক এমপি অধ্যাপক রেজাউল করিম। হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান থেকে আজকে অঢেল ধন সম্পত্তির মালিক রেজাউল করিম। হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। করোনা পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে এক মুঠো চাল প্রকাশ্যে বিতরণ করতেও দেখা যায়নি তাকে। এমনকি তার পক্ষ থেকে কেউ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এমন খবরও পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি কেএম শফিউল্লাহর ছায়াও দেখা যায়নি। সাবেক এই সেনা প্রধান প্রতি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে সবার আগেই থাকেন একজন। নির্বাচন আসলেই তাকে দেখা যায়। কিন্তু নির্বাচনের বাহিরে রূপগঞ্জে মানুষের মাঝে তার ছায়াও দেখা যায়না।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সাবেক এমপি এম আতাউর রহমান আঙ্গুর। আড়াইহাজারের একটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে বিএনপিতে যোগদান করারন তারই ভাই প্রয়াত বিএনপি নেতা এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। করোনা পরিস্থিতিতে আড়াইহাজারের আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বর্তমান নেতারা গরীবের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও গরীরের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। একই অবস্থা এ আসনের সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভূঁইয়ার। তাকেও জনগণের মাঝে এক মুঠো চাল বিতরণ করতে দেখা যায়নি। যদিও তিনি গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাননি। তবে তিনি সাবেক এমপি হিসেবে সামান্যতম দায়িত্বও পালন করেননি।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি এসএম আকরাম। আওয়ামীলীগ ছেড়ে গিয়েছেন নাগরিক ঐক্যে। গত জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচন করেন। কিন্তু এমন করোনা পরিস্থিতিতে গরীব মানুষের মাঝে তাকেও এক মুঠো চাল বিতরণ করতে দেখা গেল না। নির্বাচন আসলেই তিনি নারায়ণগঞ্জে আসেন এবং নির্বাচন করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যান। কিন্তু গরীব মানুষের মাঝে দেখা যাচ্ছেনা।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হোন। পরবর্তীতে দলের মনোনয়ন না ফেলে তাকে আর ফতুল্লার মানুষের পাশে দেখা যায়নি। এমনকি নারায়ণগঞ্জেও তার ছায়া দেখা যায়নি। গত নির্বাচনে তিনি ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়ন ক্রয় করেন।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকেও কোন গরীব পরিবারের মাঝে নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়নি। যদিও তিনি করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত দুটি গাড়ির খরচ বহনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে বলেছিলেন- তিনি ফটোসেশন বা প্রচারণার জন্য খাদ্য সামগ্রী দিবেন না। তিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী জনগণের পাশে দাঁড়াবেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামকেও গরীব মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে দেখা যায়নি। তার ছেলে আবুল কাউসার আশার নির্বাচনী ওয়ার্ডে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। যা তার ছেলে দাবি করেছিলেন এটা আবুল কালামের উদ্যোগে। কিন্তু দুটি থানা এলাকার মধ্যে একটি ওয়ার্ডেই আবুল কালামের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বিষয়টি অসন্তোষ গরীব মানুষের মাঝে। এ ছাড়াও রাজনীতিতে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের এক সময়কার দাপটশালী এমপি ছিলেন আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক। জাতীয় পার্টির সাবেক এই এমপি এখন আর জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়না। ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও। কিন্তু তিনিও সোনারগাঁয়ের গরীব অসহায় মানুষের মাঝে নেই।