মৃতদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না: মেয়র আইভী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

মৃতদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না বলেও জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী। মেয়র আইভী সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, মনে রাখবেন মৃতদেহ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। মৃতের স্বজনরা যাতে মৃতের দাফন, সৎকারে অংশগ্রহণ করে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

নারায়ণগঞ্জের কোন মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি বলেও দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ যেহেতু শ্রমিক অধ্যূষিত এলাকা। এখানে প্রচুর মানুষের বসবাস। এমন কোনো জেলার মানুষ নেই যারা নারায়ণগঞ্জে এসে কাজ করেনা। যারা নারায়ণগঞ্জে কাজ করতেন তারাই যার যার নিজ এলাকায় গিয়েছেন। যাদের সাথে ভাইরাস ছিল সেখানে গিয়ে হয়তো তারা আক্রান্ত করেছেন। সুতরাং নারায়ণগঞ্জের মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি। এখানে যারা কাজ করতেন তারাই বন্ধের সময় তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে।

২৯ এপ্রিল বুধবার দুপুরে সিটি কর্পোরেশন ভবনের সামনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে গরীব-দুঃস্থ, নিম্ন আয়ের কর্মহীন ১৫ হাজার ৬০০ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল ক্রয়ের জন্য বিশেষ ওএমসি কার্ড ও চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মেয়র আইভী আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ওএমসি অর্থাৎ খোলা মার্কেটে বিক্রয়ের আওতায় ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল বিক্রয়ের ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জন্য আপাতত ১৫ হাজার ৬০০ পরিবারকে বিশেষ কার্ডের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ কার্ডের মাধ্যমে কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিটি পরিবার ১০ টাকা দরে মাসে ২০ কেজি চাল কিনতে পারবেন।

এ বিষয়ে তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী এ কার্ডের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহনশ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয়লিঙ্গ (হিজরা) সম্প্রদায় সহ অন্যান্য সকল শ্রেণির কর্মহীন মানুষ এ সুবিধা পাবেন।

তিনি দাবি করেছেন- নারাণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এ ধরণের পরিবারের তথ্যসংগ্রহের কাজ চলছে। তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকে কার্যালয় থেকে আমাদের ইতোমধ্যেই ১ হাজার ৩৯টি কার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট কার্ড পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম প্রসঙ্গে আইভী জানান, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরশন ৪৯০ টন চাল পেয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও ডাল বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিত্ত্ববানরা এগিয়ে এসেছে। কেউ তারা নিজেরা দিচ্ছে কেউ কাউন্সিলরের মাধ্যমে দিচেছ।

মেয়র আইভী বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই মেডিকেল টিম গঠন করেছি। প্রায় ১৬ জন ডাক্তার প্রতিদিন টেলিফোনে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তারপর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা ৪টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে রোগী বহন করা হচ্ছে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা ৫১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমাদের টেকনেশিয়ানের খুবই অভাব। আমাদের ৪ জন টেকনিশিয়ান ছিলো তারমধ্যে তিনজনই অসুস্থ। একজন কাজ করছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে আমরা দুজন পেয়েছি তাদেরকে নিয়ে আমরা ছোট্ট একটি টিমের মাধ্যমে সিভিল সার্জনকে সহযোগিতা করছি। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজও হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও আমাদের সহযোগিতা করছে।

এ সময় মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলার অনুরোধ জানিয়ে মাস্ক এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রেখে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল আমিন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাইনউদ্দিন ও ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস প্রমূখ।