খালেদার পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করায় সুমনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলো আজাদ পন্থীরা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। যেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উপস্থিত থেকে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। ওই ঘটনার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে মাহমুদুর রহমান সুমনকে আড়াইহাজারের রাজনীতি থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ অনুগামী নেতাকর্মীরা। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয়রা নেতাকর্মীদের দাবি-করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই আড়াইহাজারের মানুষকে সচেতন করতে মাস্ক ও স্যানিটাইটার বিতরণ করেছিলেন সুমন। সেই সঙ্গে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে আসছিলেন। তার অনেক পর গরীব মানুষের পাশে এসে দাড়ান নজরুল ইসলাম আজাদ। এখন কেন্দ্রীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাকে নিয়ে যখন আড়াইহাজারে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তখন নজরুল ইসলাম আজাদ ও তার অনুগামীদের সামনের রাজনৈতিক ভবিষৎ অন্ধকার দেখছেন। ফলে গুটিকয়েকজন নেতা স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দিয়ে সুমনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। কিন্তু যারা অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন আড়াইহাজারে তাদের ভিত্তি কতটুকু তা নিয়ে বেশ প্রশ্ন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জানাগেছে, ২৬ এপ্রিল উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের ইলুমদি এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর বাস ভবনে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের উদ্যোগে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। মুলত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই আড়াইহাজারের গরীব মানুষের পাশে রয়েছেন মাহমুদুর রহমান সুমন।

এই ঘটনায় ২৭ এপ্রিল আড়াইহাজার বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবু নিজেকে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, আড়াইহাজারে কেন্দ্রীয় নেতা এসেছেন সেজন্য সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানবোনা সেটা ঠিক হয়নি। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। আমরা চাই আগামীতে মাহমুদুর রহমান সুমনের দ্বারা যেনো দলের মধ্যে কোন বিভক্তি বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় তাহলে সামনে তাকে আড়াইহাজার বিএনপির কোন কর্মকান্ডে দেখতে চাইনা।

তিনি এও দাবি করেছেন- গত ঈদে আমি সুমনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখান থেকে আমি গ্রেপ্তার হই। সে শত শত নেতাকর্মী পালিয়ে যায়। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর সে একবারও আমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। সেজন্য তার মত নেতা আমরা চাই না। আমি তাকে আড়াইহাজার বিএনপির সকল কর্মকান্ড থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলাম।

তবে তিনি এও দাবি করেন- গরীবদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়নি। সুমনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে সে বিএনপি নেতাকর্মীদের না জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাকে এনেছেন। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন সেজন্য কারনে। একই সঙ্গে ওই সংবাদ সম্মেলনে আরও বেশকজন বিএনপি নেতা সাংবাদিকদের সামনে মাহমুদুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এর আগে তারা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।

হাবিবুর রহমান হাবু আরও বলেন, ১১ বছর কোথায় ছিল মাহামুদুর রহমান সুমন? কোনদিন কোন আন্দোলন সংগ্রামে সে ছিলোনা। কোনদিন কোন নেতাকর্মীর খোজখবর নেয়নি। সে তার জাহিন স্পিনিং মেইল ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য আওয়ামীলীগের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে।

আড়াইহাজার পৌর যুবদলের সভাপতি কবীর হোসেন বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এলাকায় আসলো আমরা যারা কমিটিতে দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী আছি তাদের কাউকে জানানো হলোনা এটা অত্যন্ত দঃখজনক। তাই আমি আড়াইহাজার যুবদলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মাহামুদুর রহমান সুমনের এহেন আচরণে স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। মাহমুদুর রহমান সুমন মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে টাকা ও লোকবল দিয়ে চরম বিরোধিতা করেছিল। এ বিষয়টি বিএনপি নেতাকর্মীরা সবাই জানে।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন- উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহম্মদ, বিএনপি নেতা আফজাল ভূইয়া, সাবেক ছাত্রদল নেতা শফিউদ্দীন শফু, নাজমুল হাসান বাচ্চু, মাহাবুব ভূইয়া, জেলা ছাত্রদলের নেতা রফিকুল ইসলাম, যুবদল নেতা আসাদ, আড়াইহাজার থানা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, শ্রমিকদল নেতা জুলহাস মোল্লা ও বিএনপি নেতা আলী আক্কাস প্রমূখ।

অন্যদিকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- আড়াইহাজার বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। তারই উত্তরসুরী মাহমুদুর রহমান সুমন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে বিএনপিতে এনে সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুরকে বিএনপির মনোনয়ন পাইয়ে দিতে কাজ করেছিলেন খসরু। পরবর্তীতে দুই ভাইয়ের রাজনীতিতে বিরোধের সুযোগে আড়াইহাজারে উদয় হোন নজরুল ইসলাম আজাদ। শত বিতর্কিত হাবিবুর রহমান হাবুকে বিএনপিতে আনেন খসরু। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ের ২০১২ সালে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার তাকে শোকজ করেন। সেই শোকজের জবাব না দেয়ায় তাকে আড়াইহাজার বিএনপির সেক্রেটারি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে আবুল কাশেম ফকিরকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি করা হয়।

এরপর আজাদের সঙ্গে রাজনীতিতে জোট বাধেন হাবু। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যুবদল নেতা জুয়েল আহমেদকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টের সামনে মারধর করে দূবৃত্তরা। ওই ঘটনায় হাবুকে দোষারোপ করেন আজাদ। পরবর্তীতে আজাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেছিলেন হাবুু। এক সময় বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন অনু ও তার স্ত্রী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী পারভীন আক্তারও আজাদের বলয়ে রাজনীতি করতেন। সম্প্রতি তারা সুমনের নেতৃত্বে রাজনীতিতে ফিরেছেন।

এএম বদরুজ্জামান খসরুর মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান মাহমুদুর রহমান সুমন। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মীরজুল হাসান নয়ন মোল্লা দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করলে সহ-সভাপতি হিসেবে মাহমুদুর রহমান সুমনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন নেতাকর্মীরা। বর্তমানে আড়াইহাজারে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত।