উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মাছ মাংস ও গরুর ঘাস কেটে দেয়ার দাবি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাড়ি লকডাউন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সেই বাড়িটির লোকজনের জন্য যথারীতি খাদ্যসামগ্রী বিতরণও করে আসছেন তিনি। তাই দেখে রোগীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক ৪তলা বাড়ির মালিকও বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর। যেখানে তিনি গরুর মাংস সহ আরও তিন ধরণের মাছ সহ শাক সবজির দাবি করেছেন। পার্শ্ববর্তী আরেক বাড়ির এক ভদ্র মহিলা তার পালিত গরুর জন্য ঘাস কেটে দিতে বলেছেন। তবে গরুর অন্য কোন খাদ্য সামগ্রী দিলে হবেনা, ঘাস কেটেই দিতে হবে। এমন বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজ পোস্ট করেছেন।

প্রসঙ্গত, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে কয়েকটি বাড়ী লকডাউন করে দেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। রোগীকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। লকডাউন অবস্থায় সেখানকার নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষদের জন্য গোপনে প্রতিদিন খাবার সরবরাহ করতেন তিনি।

সেখানে তিনি প্রতিদিন তাদের জিজ্ঞেস করতেন তাদের প্রয়োজনীয় কোন কিছু লাগবে কিনা। এ সংবাদ শুনে লকডাউনে থাকা এক ৪তলা বাড়ির মালিক স্বেচ্ছাসেবী টিমের কাছে বিশাল খাবারের তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী আরেক ভদ্র মহিলা তার পালিত গরুর ঘাস কেটে দেয়ার দাবি তুলেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম লিখেছেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সোনারগাঁয়ে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়েছিল গত ১৩ এপ্রিল বৈদ্যেরবাজারে। সেদিন প্রশাসনিকভাবে যা যা করার তার সবটুকুই আপনাদের জন্য গভীর মমত্ববোধ ও দক্ষতার সাথে করেছিলাম আমরা। দ্রুত ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পৌঁছানো, এ্যাম্বুলেন্স পাঠানো, রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো, পরিবারের লোকেদের সাথে কথা বলা, প্রতিবেশীদের সাথে কথা, কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউন।

‘ঠিক তারপর দিন তার প্রতিবেশীরা ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দিলো-আসলে ছেলেটির একটু ঠান্ডা লেগেছে আর কিছুই হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ এসে এমনিতেই ছেলেটিকে ধরে নিয়ে গেছে!! এরপর যথারীতি সবাই অসচেতন হয়ে পড়লো (পরে গুজব ছড়ানো একজন ব্যক্তিকে জেল ও জরিমানাও করা হয়েছিল)।

‘সেই লকডাউনে থাকা প্রতিবেশিদের মধ্যে যারা নিম্ম মধ্যবিত্ত ও দুস্থ, স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিয়মিত গোপনে আমরা তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিতাম। এটা দেখে চারতলা পাঁচতলা বাড়ীওয়ালারাও আমাদের তালিকা দিতে শুরু করলো।

খুব সুন্দর তালিকাঃ
১। গরুর মাংস ৫ কেজি
২। পাবদা মাছ ১ কেজি
৩। গলদা চিংড়ি ১ কেজি
৪। রূপচাঁদা ১ কেজি
৫। লাল শাক, পাটশাক, লাউ, করলা
৬। সারজেল এক পাতা
৭। ডেটল এক বোতল

আমরা বাজার করে দিতে রাজী হলাম কিন্তু উনি টাকা দিতে রাজী না!! খুব রাগ করলেন উনি “টাকা দিলে তো উনিই নিজেই কিনতে পারেন আমরা কেনো!!”

একজন ভদ্র মহিলা বললেন উনার গরুটা দু’তিন দিন খাস খায় না। স্বেচ্ছা সেবকটীমকে উনি ঘাস কেটে আনতে বললেন!! গরুর জন্য অন্য খাবার তিনি নিবেন না!!

প্রতিবেশীদের সেদিনের ফেসবুক গুজব আর কোয়ারেন্টাইন না মানা আমাদের কত বড় ক্ষতি করেছে ফলাফলটা দেখুনঃ
আমাদের মোট ১১ জন করোনা আক্রান্তের ৪ জনই বৈদ্যেরবাজারের!!

ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেদের দিয়ে সুযোগ বুঝে গরুর ঘাস কাটা ভদ্র মহিলার এই অদ্ভুত খায়েশ লক্ষ কোটি টাকা জমিয়ে রেখে সুযোগ বুঝে বাজার করিয়ে নেয়া।

নিজেদের সব জ্ঞান ফেসবুকে ঢেলে দিয়ে মার্কজুগারবার্গকে কাঁচকলা দেখিয়ে মুচকি হাসা-“তুই দেখ আমি কে!!” আমাদের এইসব প্রবণতার জন্যই কিনা জানি না রবীন্দ্রনাথ দুঃখ ভরে লিখে গিয়েছিলেন-

“সাত কোটি বাঙ্গালীর হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছো বাঙ্গালী করে, মানুষ করনি”

পুনশ্চঃ
তবুও তোমাকেই ভালোবাসি সোনারগাঁ,
তবুও তোমাকেই ভালোবাসি প্রিয় বাংলাদেশ।’