পদ বিক্রি, অগ্রিম আদায়: ‘আমার দিন ফিরতাছে টেহা পয়সা হাতে রাহিস’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি না হয়েই বিএনপির একজন নেতা পদ বিক্রির জন্য অগ্রিম টাকা আদায় করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে কে সেই নেতা সেটা স্পষ্ট করেননি বিএনপি নেতারা। জেলার রূপগঞ্জের এক নেতা অভিযোগ তুলেছেন, সভাপতি না হয়েই রূপগঞ্জ থেকে অগ্রিম আদায় শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে পদ বিক্রির জন্য অগ্রিম দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। এদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাকে জেলা বিএনপির একজন সাবেক শীর্ষ নেতা ফোন করে বলেছেন, ‘আমার দিন ফিরতাছে দেহা করিস, আর টেহা পয়সা হাতে রাহিস। কমিটি হবে, টেহা পয়সা লাগবো।’

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির অনুগামী বিএনপি নেতা ফারুক হোসেন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সভাপতি না হয়েই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিক্রির এ্যাডভান্স নেয়া শুরু হয়ে গেছে, এ্যাডভান্সের জন্য ফোন পাচ্ছেন নেতারা।’ তবে কে সেই নেতা যিনি নেতাদের ফোন করে অগ্রিম নেয়া শুরু করেছেন তা তিনি ফেসবুকে লিখেননি।

তবে কোন কোন নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন নেতাদের নাম তৃন্যমুল কর্মীদের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন। যেসব নেতারা কর্মীদের মুখে আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামদু, সাবেক সহ-সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন, মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন সহ আরও বেশকজন নেতা। তবে এদের মধ্যে কিংবা এদের বাহিরে কোন সেই নেতা যিনি ইতিমধ্যে পদ বিক্রির জন্য অগ্রিম আদায় শুরু করেছেন তার নাম বলছেন না মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। কারন তারা আংতকে রয়েছেন আবারো কি সেই নেতা জেলা বিএনপির নেতৃত্ব পাচ্ছেন। সে কারনে কারো নাম বলে অভিযোগ করছেন না।

অন্যদিকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আবারো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা তহরি ও হাদিয়ার বাক্সের দিকে ফিরে যেতে চান না। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পর নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বেশ জোড়ালো আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অতীতে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন এমন নেতাদের নামও আসছে। যাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক একজন নেতা যিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে যে নেতা ওই সময় জেলায় তহরি ও হাদিয়া বাক্সের নেতা হিসেবে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনিই রয়েছেন আলোচনায়।

বিলুপ্ত জেলা বিএনপির একজন নেতা বলছেন- এর আগে যারা জেলা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই কর্মীদের ব্যবহার করে ব্যবসায়ী শিল্পপতির কাছ থেকে তহরি হাদিয়ার নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছিলেন। বিএনপির যেসব ডোনার ছিলেন তাদের কাছে টাকা এনে নিজের পকেট ভারি করেছেন। দলীয় কর্মকান্ডে খরচের জন্য এসব অর্থ বিভিন্ন স্থান থেকে আসলেও তা দলীয় কাজে ব্যয় না করে নিজের পকেটে ভরেছেন। জেলার আওতাধীন বিভিন্ন থানায় নেতৃত্ব দেয়া নেতাদের কাছে মাসে মাসে হাদিয়া ও তহরি আদায় করেছিলেন এমন নেতাদের আমরা আবারো জেলা বিএনপির নেতৃত্বে দেখতে চাইনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনারগাঁও বিএনপির একজন নেতা বলেছেন- বিলুপ্ত কমিটির আগে যারা জেলা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন ওই সময় থানা পর্যায়ের কোন মিটিংয়ে দাওয়াত করলে তারা হাদিয়া ও তহরির নামে লাখ লাখ টাকা নিতেন। টাকা ছাড়া কারো মিটিংয়ে আসতেন না। টাকা না দিলে বিপরীত নেতাকে নিয়ে রাজনীতিতে নেমে যেতেন। সোনারগাঁয়ের একজন শীর্ষ নেতার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সোনারগাঁয়ের ওই নেতাকে সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত করার নামে।

ফতুল্লা থানা বিএনপির এক নেতা বলেছেন- এক সময় একজন শিল্পপতি বিএনপি নেতাকে ফতুল্লায় প্রতিষ্ঠিত করতে তহরি হাদিয়া আদায় করতেন ওই বিএনপি নেতা। মোটা অংকের টাকা হাতিয়া নিতেন নানা অজুহাতে। নানা কর্মসূচি পালনের নামে শিল্পপতি নেতার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তা নিজের পকেটে ভরে রাখতেন। কিন্তু দলীয় কর্মকান্ডে তা ব্যয় করতেন না। আবার শিল্পপতি নেতা যখন টাকা দেয়া বন্ধ করে দিল তখন শিল্পপতি নেতার প্রতিদ্বন্ধি নেতা একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৎকালীন বিএনপি নেতাকে নিয়ে রাজনীতিতে নেমে যান। অতীতে যারা এসব কর্মকান্ড করে দল ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এমন নেতাকে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আর দেখতে চাইনা।

একইভাবে আড়াইহাজার বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- এখানকার প্রয়াত বিএনপির এক নেতার কাছ থেকে সুবিধা নিতেন জেলা বিএনপির সাবেক সেই শীর্ষ নেতা। বিভিন্ন সময় নামে বেনামে প্রয়াত বিএনপি নেতার কাছ থেকে দলীয় কর্মকান্ডের অজুহাতে টাকা নিতেন। কিন্তু তা দলে খরচ না করে তিনি নিজের পকেটে রাখতেন। আবার প্রয়াাত বিএনপি নেতা যখন টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলেন তখন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাকে আড়াইহাজারে প্রতিষ্ঠিত করতে মাঠে নামেন।
এভাবে জেলা বিএনপির প্রতিটা থানায় তহরি ও হাদিয়ার বাক্স মার্কা নেতা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছিলেন। বিভিন্ন থানা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকেই নয় শুধু, তিনি রূপগঞ্জর, ফতুল্লার, কাঁচপুরের বিভিন্ন শিল্পপতি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে মাসিক টাকা আদায় করতেন। যারা মুলত বিএনপির সমর্থক সেইসব শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন জেলা বিএনপির নেতাদের টাকা দিতেন। কারন ওই সময় অনেকের ধারণা ছিল ৫বছর পর আবারো বিএনপি ক্ষমতায় এসে পড়তেছে। এই সুযোগে তহরি ও হাদিয়া আদায় চলতো হরদম।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন-অতীতে যারা দলের নাম ব্যবহার করে দলকে বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন এমন নেতাকে যেনো জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আবারো ফেরানো না হয়। তাহলে এবার তিনি বিএনপিকে পুরোপুরি বিক্রি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকবেন। ফলে ধ্বংস হবে বিএনপি আর পকেট ভারি হবে তার। যেসব নেতা নেতাকর্মীদের পাশে বিপদে দাড়ায় না। এক টাকা দিয়ে সহযোগীতা করতে নারাজ এমন নেতাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়না। আবার যেসব নেতা রয়েছেন পেশায় আইনজীবী, তাদের মধ্যে যারা কর্মীদের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তাদেরকেও নেতৃত্বে দেখতে চায়না। ফলে তহরি কালেকশন ও হাদিয়া কালেকশন বাক্স চালু হোক এমনটা চায়না জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।