জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে যেসব কারনে তৃণমূলের পছন্দ সুমন

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে মাহমুদুর রহমান সুমনের পক্ষে দাবি তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে আড়াইহাজার বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বপ্ন দেখছেন জেলা বিএনপির আগামী কমিটিতে সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পাবেন মাহমুদুর রহমান সুমন। নেতাকর্মীদের দাবি- সুমন দল ও দলের পদ পদবী বিক্রি করে দলের বারোটা বাজানোর মত ব্যক্তি নন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার বাবা প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর আড়াইহাজার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। বিএনপির জন্য শেষ জীবন পর্যন্ত লড়াই করেছেন রাজপথে। তারই ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন।

সূত্রমতে, এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও তার আপন ভাই সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুরের বিরোধীতার কারনে বিজয়ের মালা গলায় পড়তে পারেননি খসরু। প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিলেন খসরু। আজকে আড়াইহাজার বিএনপির মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের ৯০ ভাগ বিএনপির নেতাকর্মী খসরুর হাতেই তৈরি। সেই নেতার উত্তরসূরী মাহমুদুর রহমান সুমন।

এএম বদরুজ্জামান খান খসরুর মৃত্যুর পর আড়াইহাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদুর রহমান সুমন। এক সময় মাহমুদুর রহমান সুমন পেছন থেকে নেতাকর্মীদের পাশে থাকলেও তার পিতার মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সুমনকে দায়িত্ব দেন নেতাকর্মীরা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান সুমন নাশকতার মামলায় আসামিও হয়েছেন। আড়াইহাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের আস্থা ভরসা একমাত্র মাহমুদুর রহমান সুমন।

মামলায় জর্জনিত বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কাজ করছেন সুমন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মী এমনকি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে নির্যাতিত মানুষের খোজ খবর নিচ্ছেন। নিয়মিত আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের খোজ খবরও নিচ্ছেন তিনি। উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে ঢাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কর্মসূচিগুলোতে সক্রিয় ভুমিকা রেখে আসছেন সুমন। যার ফলশ্রুতিতে জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি পদে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।

এ ছাড়াও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো গোছানোর কাজটিও করছেন নিখুতভাবে। যে কারনে আড়াইহাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেছেন সুমন। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা পর্যায়ের কর্মসূচিগুলোতে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে যোগদান করেছিলেন এবং তার পক্ষ থেকে সকল কর্মসূচিতে তার নির্দেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের যোগদান ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। নিয়মিত জেলার অন্যান্য থানা এলাকার নেতাকর্মীদের খোজ খবর নিচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে পাশে দাড়াচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যক্রমে তার সক্রিয়তা দেখে তৃণমুলের দৃষ্টি এখন মাহমুদুর রহমান সুমনের দিকে।

তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি- অতীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যারা নেতৃত্বে এসেছিলেন কেউ কেউ দলের পদ পদবী বিক্রি করে, কেউ কেউ দল বিক্রি করে বিএনপিকে কুক্ষিগত করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে বাম দলে পরিনত করেছিলেন। বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ নেতারা কোন আন্দোলন সংগ্রামেই জোড়ালো ভুমিকা রাখতে পারেননি। নেতাকর্মীদের কোন খোজ খবরও রাখেননি। বিলুপ্ত কমিটির আগের কমিটিতের শীর্ষ এক নেতা বিভিন্ন থানা এলাকার শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে কোন্দল সৃষ্টি করতেন। যে বিশেষ সুবিধা দিতেন সেই থানায় গিয়ে সেই নেতার গুণকীর্তন করতেন এবং যারা বিশেষ সুবিধা না দিতেন তাদের কোনঠাসা করতেন। ভাড়ায় তারা বক্তব্য দিতেন। বিলুপ্ত জেলা বিএনপির কমিটির সভাপতি কাজী মনির বিজেএমইএ এর মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন যেখানে আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা হয়েছিল। যেখানে আগুন সন্ত্রাসী বলা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। এর আগের কমিটির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার দীর্ঘদিন বধির সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন স্বদর্পে।

এ ছাড়াও বিলুপ্ত কমিটির এক নেতা বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমান সুমন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সেই সঙ্গে রাজনীতিতেও রয়েছেন সমান তালে। তিনি নেতৃত্বে আসলে পদ পদবী বিক্রি করা কিংবা কারো কাছ থেকে তহুরী হাদিয়া আদায় করে দলে কোন্দল সৃষ্টি করার মত কাজ তিনি করবেন না। তিনি দলের জন্যই কাজ করবেন। তাই সুমনের মত স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিককেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দেয়া প্রযোজন বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কমিটি গঠন সূত্রে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সাবেক এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে গত বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা। যে কারনে মামলা ঠুকে দিয়েছেন বিএনপির দুই নেতা। ফলে মহানগর কমিটি বহাল থাকলেও সবশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।