নারায়ণগঞ্জে ভোট কেন্দ্র পাহাড়া দিতে বললেন মির্জা ফখরুল

দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। নির্বাচন কমিশনের কোন ক্ষমতা নাই। তারা অসহায়। আমরা কথা বললেও তারা চুপ করে বসে থাকে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে বলেন, দেশের সংবিধান আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছে। অধিকার দিয়েছে। আপনি দায়িত্ব পালন করুন। যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। নতুবা জনগণ মেনে নিবে না।

তিনি বলেন, এ নির্বাচনে নাকি লেভেল প্লেং ফিন্ড আছে। এক দল হাজার হাজার মানুষ নিয়ে সভা সমাবেশ করছে। আর আমাদের মাইক লাগাতে দেয়না। ভোট চাইতে দেয়না। দেশে এক অদ্ভূদ নির্বাচন হচ্ছে। আর সিইসি বলেছেন নির্বাচনের সুবাতাস বইছে, লেভেল প্লেইং ফিল্ড আছে। এসব কি ধরনের সুবাতাস। তবুও ৩০ তারিখ আমরা মুক্তির জন্য এই নির্বাচন করবো।

‘আপনারা ভোটের আগের দিন রাত থেকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিবেন। ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। আপনি ন্যায়ের জন্য ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের জন্য ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন। মানুষ একবারই মরে, বীরের মৃত্যু নেই। বারবার মরবো না।’

২১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সোনাকান্দা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জনসভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী ও নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে এমপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জেলা বিএনপির সেক্রেটারী অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এবং এতে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারী এটিএম কামাল।

এ সময় মির্জা ফখরুল সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দেয়নি দাবি করে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে বেকারদের চাকরি দেবো। না পারলে বেকার ভাতা দেবো। দেশে শিল্প কারখানা করবো, মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করবো। ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এদেশ সব ধর্মের মানুষের দেশ, কারো উপর হাত দেবেন না।’

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকো এবং তোমরা জাতীয় ঐক্য গঠন করো। তাই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছি।

‘৩০ তারিখ রায় দেওয়ার সময় আলোর দিকে থাকবেন নাকি অন্ধকারে থাকবেন, মুক্তির পথে থাকবেন নাকি পরাধীনতার পথে থাকবেন সেটা ভাবতে হবে।’

বিএনপির ১৬ জন প্রার্থীকে জেলে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তফসিল ঘোষণার পর হামলা-মামলা গ্রেপ্তার করা হবেনা কিন্তু হচ্ছে। তাহলে কি তাকে সত্যবাদী বলা যায়? হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না। প্রচারণা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটাই কি গণতন্ত্র?

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি গ্রামে মানুষ জেগে উঠছে, যত মানুষ জেগে উঠছে, ততই নির্যাতনের মাত্রা বাড়াচ্ছে। মানুষ কখন নির্যাতন করে? যখন মানুষ একা হয়ে যায়। তাদের যে উন্নয়নের কথা বলছেন? সেটা দেশের উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই তা সরকার দলীয় নেতাদের পকেটের। দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি সব কিছুরই দাম বেড়েছে। বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। অথচ, লাখ টাকা দিয়েও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হা চাকুরী হচ্ছে। তার জন্য চাকুরীর আবেদনকারীদের ডিএনএ পরীক্ষা করে নেয়া হচ্ছে তাদের রক্তে আওয়ামীলীগ আছে কিনা।

তবে বিকেল ৩টায় এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও বন্দরের মদনপুরে মহাসড়কে কে বা কারা রাস্তায় বাশ ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে মির্জা ফখরুল ভিন্ন রাস্তা দিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করেন। ওই সময় জেলা পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ মির্জা ফখরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলে সোয়া ৪টায় প্রবেশ করেন।

এর আগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় বন্দরের নবাব সিরাজদ্দৌল্লা ক্লাবের মাঠে। ওই ক্লাবের সভাপতি বিএনপির নেতা ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর সুুলতান আহমেদ ভুইয়া মাঠে মঞ্চ তৈরি করতে বাধা দেন। এবং সেখানে সমাবেশ করার চেষ্টা করা হলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেন বিএনপির এই নেতা। তিনি নাশকতার বেশকটি মামলার আসামী। বর্তমানে সুলতান আহমেদ নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএস সেলিম ওসমানের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে আসছেন।