সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে এবার ভিন্নমাত্রা যোগ করলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কথিত সেক্রেটারি এটিএম কামাল। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন এটিএম কামাল। সেই মামলায় এটিএম কামালের জামিন পাওয়াটা দূরহ ছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির ওই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার জোড়ালো আইনি লড়াইয়ে জামিন পান এটিএম কামাল।
কিন্তু দিনের বেলা জামিন করালেন সাখাওয়াত, অথচ ওই দিন রাতেই সাখাওয়াত হোসেন খানের বহিস্কার চেয়ে প্রস্তাবপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এটিএম কামাল। এর আগেও সাত মাস কারাগারে ছিলেন এটিএম কামাল। ওই সময় তার জামিনের জন্য তার আইনজীবী কাজ করছিলেন না। তখন সাখাওয়াত হোসেন খান উচ্চ আদালত থেকে এটিএম কামালের জামিন করিয়েছিলেন। ওই সময়ও তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরোধীতা শুরু করেন। তবে আমেরিকায় গিয়ে এটিএম কামাল তার ফেসবুকে একটি পোস্ট করে স্বীকার করেছিলেন, সাখাওয়াত হোসেন খান উচ্চ আদালতের ব্যয় বহন করে এটিএম কামালের জামিন করিয়েছিলেন। ওই পোস্টে কামাল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তার কার্যক্রমে সেটা দেখা গেল না। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জানাগেছে, গত ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি নাশকতার মামলায় পলাতক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। এ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন কামাল। তাই এ মামলায় জামিন নেয়া তার জন্য দুরূহ ছিল, ছিল প্রায় অসম্ভব কিন্তু সাখাওয়াত হোসেন খান আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে এই দুরূহ কাজটিই সম্পন্ন করেন, জামিন পান এটিএম কামাল। এমনকি এদিনেও আইনে লড়াইয়ে ব্যয়ভার বহন করেন সাখাওয়াত। কিন্তু ওই দিন রাতেই সাখাওয়াত হোসেন খানের বহিস্কার চেয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির বরাবর চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এটিএম কামাল। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেনা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের ভাষ্যে, ‘অকৃতজ্ঞ’ এটিএম কামাল চোখ উল্টে সেদিন রাতেই মহানগর বিএনপির সভাপতির সাথে মিটিং করে সাখাওয়াত হোসেন খানকে মহানগর বিএনপি থেকে বহিস্কারের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর আবেদন করেন। সেই আবেদন পত্রে সভাপতি কালামের সঙ্গে সেক্রেটারি কামালও স্বাক্ষর করেন। এমন বিষয়টিকে নেতাকর্মীরা বলছেন- রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে একজন সাধারণ মানুষের মানবিকতাটুকুও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এটিএম কামাল। কামালের এই অকৃতজ্ঞ আচরণে তাই ক্ষুব্দ তৃণমূল।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আর ক্ষমতার স্বাদ পায়নি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এতা দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় মামলা হামলায় নাজেহাল দলটির নেতাকর্মীরা। গত ৩০ জানুয়ারী অনষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা ঠিকমতো বাড়িঘরে থাকতে পারেননি, পালিয়ে যাযাবর জীবনযাপন করতে হয়েছে।
বর্তমানে এখন আগের মতো ধরপাকড়াও না হলেও পুরানো মামলাগুলোতে নিয়মিতই হাজিরা দিতে হচ্ছে তাদের। আর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রধান আস্থা ভরসা হলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলাগুলোতে বিনা পয়সায় আইনী সহায়তা প্রদান করেন সাখাওয়াত। অনেক বিএনপি পন্থী আইনজীবীকে টাকা না দিলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওকালতনামায় স্বাক্ষরও করেন না অথচ সাখাওয়াত হোসেন খান যেকোন নেতাকর্মী মামলায় আসামি হলে তার পক্ষে আদালতে দৌড়ে যান সবার আগে। তিনি মহানগর কেন্দ্রীক রাজনীতি করলেও জেলার অন্যান্য থানার নেতারাও তার কাছ থেকে আইনি সহায়তা পান। যা অন্যান্য বিএনপি পন্থী কোন আইনজীবী করেন না।
আরও জানাগেছে, এটিএম কামালকে এর আগেও তিন দফায় বিনা পারিশ্রমিকে এবং নিজ খরচে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন সাখাওয়াত। এটিএম কামাল বিভিন্ন সময়ে স্বীকারও করেছেন সাখাওয়াতের এই অবদানের কথা, লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। সেই এটিএম কামালও স্বাক্ষর করেছেন সাখাওয়াত হোসেন খানকে বহিস্কারের সুপারিশ পত্রে।